শুভেন্দুকে তিরষ্কারের সাহস স্পিকার মশাইয়ের নেই

বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন: বিধানসভায় হট্টগোল নতুন কোনও খবর নয়। হামেশাই ঘটে। ওয়েলে নেমে এসে চিৎকার করা। কাগজ ছেঁড়া, ওয়াকআউট এসব দৃশ্যের সঙ্গেও আমরা পরিচিত। বিরোধীপক্ষ যেমন হই হট্টগোলের রাস্তা বেছে নিয়েছে, তেমনি শাসকপক্ষও হল্লাবাজিতে কম যায় না। মুলতুবি প্রস্তাব আনলেই স্পিকার মশাই খারিজ করে দেন। অধিকাংশ দপ্তরে প্রশ্নোত্তর প্রায় উঠেই গেছে। গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের বাজেট আলোচনা গিলোটিনে পাঠানো নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু শুক্রবার বিক্ষোভ থামাতে নাকি ওয়েলে নেমে আসতে হল স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে। এমনটা মোটেই কাম্য ছিল না। এমন পরিস্থিতি কেন তৈরি হবে যে মুখ্যমন্ত্রীকে ওয়েলে নেমে এসে ঝগড়া থামাতে হবে?

bidhan sabha

আসলে, বিরোধী বিধায়কদের অনেকেই যেমন জানেন না, কীভাবে প্রশ্ন করতে হয়। ঠিক তেমনি অনেক মন্ত্রীও জানেন না, কীভাবে উত্তর দিতে হয়। পড়াশোনা, প্রস্তুতির অভাব। নিজের দপ্তর সম্পর্কে অধিকাংশ মন্ত্রীর ধারনাই নেই। শুক্রবার প্রশ্ন করেছিলেন কংগ্রেস বিধায়ক প্রতিমা রজক। তার উত্তর দিতে গিয়ে পরিবহণমন্ত্রী বলে উঠলেন, মুর্শিদাবাদ সাফ করে দিয়েছি। এবার আপনিও জিতে আসতে পারবেন না। প্রশ্ন এল পরিবহণ দপ্তরের দুর্নীতি নিয়ে। এ কী উত্তর ? একজন মন্ত্রীর কাছে এমন উত্তর কি প্রত্যাশিত ? আসলে, বিধানসভার গুরুত্ব দিন দিন এতটাই কমে এসেছে যে, মন্ত্রীরা মনে করে ফেলছেন, যা খুশি, তাই বলা যায়। আর স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী হাজির। তাঁর সামনে এইসব আবোল তাবোল বকলে নম্বর বাড়ে। মুখ্যমন্ত্রী সভায় থাকলে শাসক দলের মন্ত্রী, বিধায়কদের চিৎকার করার প্রবণতাটা বেড়ে যায়। কী জানি, তিনি হয়ত এমনটাই পছন্দ করেন। অন্তত তাঁর বিধায়ক বা মন্ত্রীরা এমনটাই মনে করেন।

প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় না, দিনের পর দিন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এই বার্তা দিয়েছেন। কোনওদিন যদি উত্তর দিলেন, ধন্য ধন্য রব পড়ে যায়। যেন বিরাট উদারতা দেখালেন। অথচ, আগে জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তাঁদের দপ্তর নিয়ে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিতেন। তাঁদের দপ্তরের বাজেট নিয়ে বিতর্ক হত। মুখ্যমন্ত্রীরা বিতর্কে অংশ নিতেন। সেটাই নিয়ম। কিন্তু এখন নিয়ম না মানাটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই হট্টগোল দিনদিন বাড়ছে। তাই মুখ্যমন্ত্রীকে নেমে আসতে হয়।

বিধানসভার শৃঙ্খলা রাখার ক্ষেত্রে শাসক দলের দায় সবসময় বেশি।কিন্তু শাসকদলের নেতা মন্ত্রীরা অধিকাংশক্ষেত্রেই এটা ভুলে যান। স্পিকাশ মশাইও ভুলে যান। তাই, শুভেন্দু অধিকারী এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করলেও তাঁকে তিরষ্কার করার সাহস স্পিকার মশাইয়ের নেই। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রীরও নেই। কারণ, জানেন, তিরষ্কার করলেই পাখি উড়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী বেশ ভাল করেই জানেন, বিজেপিতে শুভেন্দু ইট পেতেই রেখেছেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.