রবিবারের অণু গল্প: বাটিচচ্চড়ি

শর্মিলা চন্দ

ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হেয়ার ড্রায়ারে চুল শুকোচ্ছিল মিতুন। আজ ওদের চেরাপুঞ্জী যাওয়ার কথা। পাঁচদিন হল ওরা শিলংয়ে এসেছে। শিলংয়ে ওর দিদি বুবুনের বাড়ি। জামাইবাবু কয়েকমাস হল দিল্লিতে বদলি হয়েছেন। ছেলে অঙ্কনের পড়াশোনার কারণে বুবুন ছেলেকে নিয়ে এখানেই থাকে। জামাইবাবু দু–‌তিন মাস পর পর আসেন। সম্প্রতি দীনেশ পাণ্ডে নামে বিহারের ছাপরা জেলা থেকে আসা এক যুবক ওদের বাড়ির কাজকর্মের জন্য নিযুক্ত হয়েছে।এমনিতে দীনেশ খুবই বাধ্য এবং শান্ত। কিন্তু দেহাত থেকে আসার কারণে এখনও শহুরে জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেনি।

cherapunji2
এদিকে বুবুনেরও একা একা সময় কাটে না। ছেলে ব্যস্ত পড়াশোনা নিয়ে। তাই মিতুনকে শিলং শহর দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। মিতুন আর ওর বর অতনু ছাড়াও ওর মাসি শাশুড়ি আর তার মেয়ের পরিবার মিলে ওরা মোট দশজন এসেছে।
এই কদিনে শিলং শহরটা ওদের ভালভাবেই দেখা হয়েছে। বড়া পানি, শিলং পিক, হায়দর আলি পার্ক, এলিফ্যান্টা ফল্‌স— এসমস্ত স্পট ওদের ঘোরা হয়ে গেছে। গতকাল রিলবং এ যে বাড়িতে বসে রবীন্দ্রনাথ শেষের কবিতা লিখেছিলেন, তাও দেখে এসেছে। শেষের কবিতার বাড়ি দেখতে গিয়ে মাসি বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। কখনও ‘পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি, আমরা দুজন চলতি হাওয়ার পন্থি’ কিম্বা ‘উদ্ধত যত শাখার শিখরে রডোডেনড্রন গুচ্ছ’ বারবার আউড়ে যাচ্ছেন। অবশেষে মেসোমশাই ধমকিয়ে তাঁকে থামান। পুলিশবাজারে সোয়েটার কিনতে গিয়ে এক দোকানির সঙ্গে ঝগড়া বাঁধিয়ে বসলেন মাসি। সোয়েটারের দাম নিয়ে তুমুল তর্ক বেধে গেল। দোকানি হিন্দি ছাড়া বোঝে না আর মাসি নিজস্ব হিন্দিতে বলে চললেন, হাম অন্য দোকান দেখেগা। তোমার দোকানসে নহি লেগা। তারপর অতনু এসে মধ্যস্থতা করায় ব্যাপারটা মিটল।
হঠাৎ খুব চেঁচামেচি শুনে মিতুন ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখল বাইরে গেটের সামনে দীনেশকে মাসি খুব বকাঝকা করছেন, হাম চিংড়ি দেকে তোমার বাটিছাঁটমে চচ্চড়ি করেগা। দীনেশ হাত নেড়ে বলছে আপহি নে তো কঁহা ঝিঙ্গা লাও।
মাসি বলে চলেছে ঝিঙ্গা কোথায় লায়া তুম? মিতুন কিছুই বুঝতে পারছে না। বাড়ি শুদ্ধু সবাই এসে উপস্থিত হয়েছে। বুবুন দীনেশকে থামানোর চেষ্টা করছে। দু একজন পথচারীও তাকিয়ে দেখছে। সকাল সকাল বিশাল যুদ্ধ লেগে গেল। তার মধ্যে মাসির মেয়ে তুলিকা এসে বলল, মা, দেখলে কত পিম্পলস বেরিয়ে গেছে আমার গালে, বললাম অত ডিপ ফ্রাই পকোড়া খাব না, তুমি জোর করলে।

cherapunji

মাসি অত বড় মেয়ের পিম্পলসওলা গালে ঠাস করে চড় কষিয়ে দিলেন। আর দীনেশ বলছে হাম গাঁও চলা যায়েগা। সে এক বিশ্রী ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। অতনু বাইরে গিয়েছিল ‘ফরগেট মি নট’ ফুল কালেক্ট করতে। সেও এসে পড়েছে। সে এসে দুজনকে সামনে বসিয়ে যা উদ্ধার করল তা হল, এই মাসির আজ পেটের সমস্যা হয়েছে তাই ঠিক করেছিলেন আজ বাইরে না বেরিয়ে বাড়িতে বসে ঝিঙের পাতলা ঝোল খাবেন। তাই তিনি দীনেশকে টাকা দিয়ে বাজারে পাঠিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ঝিঙ্গা লাও। আর হিন্দিতে যেহেতু ঝিঙ্গা মানে চিংড়ি মাছ, তাই দীনেশ চিংড়ি নিয়ে এসেছে। অতনু কোনও রকমে দুজনকে শান্ত করল।
ততক্ষণে ঘড়ির কাঁটা অনেকদূর গড়িয়ে গেছে। মিতুন ভাবল আজ কার মুখ দেখে উঠেছিল যে চেরাপুঞ্জী যাওয়ার বদলে বাড়িতে বসে চিংড়ি বাটিচচ্চড়ি খেয়ে আর মাসির শেষের কবিতা শুনেই কাটাতে হবে।‌‌
(‌বেঙ্গল টাইমসে জমজমাট অণু গল্পের আসর। একইসঙ্গে গল্প আর বেড়ানোর আমেজ। এমনই কিছু অণু গল্প নিয়ে হবে বিশেষ সংখ্যা। চাইলে আপনিও এমন অণু গল্প পাঠাতে পারেন বেঙ্গল টাইমসের দপ্তরে। ঠিকানা:‌

bengaltimes.in@gmail.com ) ‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.