খুঁত খোঁজার নয়, দেখার ও দেখানোর ছবি ‘‌গোত্র’

অভিরূপ কুমার

ফার্স্ট ডে, ফার্স্ট শো বলতে যা বোঝায়, তা নয়। এমনকী, প্রথম সপ্তাহেও নয়। একটু দেরিতেই গোত্র দেখলাম। এমনিতে নন্দিতা–‌শিবপ্রসাদের কোনও ছবি মিস করি না। পরে হলেও দেখেছি। হলে না হলেও ইউটিউবে দেখেছি। তাই এই ছবিটা দেখব, আগে থেকেই ঠিক করেছিলাম। কিন্তু যা হয়, নানা ব্যস্ততা সামলে দেখে ওঠা হচ্ছিল না।
সমালোচকরা যা লেখার, প্রথম সপ্তাহেই লিখে ফেলেন। আমি সমালোচক নই। বোদ্ধাও নই। নিতান্তই সাধারণ এক দর্শক। না হয় একটু পরেই দেখলাম। সেই পরে দেখার অনুভূতিটাই বেঙ্গল টাইমস মারফত তুলে ধরছি।
প্রথমেই বলে রাখি, ছবিটা অসাধারণ লেগেছে। বিশেষ করে এই সময়ে দাঁড়িয়ে। এটা যদি দশ বছর আগে হত, হয়ত এতটা ভাল লাগত না। কারণ, তখনও ধর্মকে ঘিরে চারপাশটা এতটা বিষিয়ে যায়নি। তখনও চায়ের দোকান থেকে অফিস, মেট্রো থেকে সেলুনে এত কাশ্মীর, পাকিস্তান, হিন্দু, গরু— এসব ব্যাপারগুলোর ব্যাপক চর্চা হত না। সময়টা বড় অস্থির। তাই এই সময়ে এই জাতীয় সিনেমা বড় বেশি প্রয়োজন।
ছবির গল্প এতদিনে অনেকেই জেনে গেছেন। রিভিউয়ে সেগুলো লেখার দরকার নেই। তবে কয়েকটি সাহসিকতার কথা না বলে পারি না। কেন্দ্রীয় চরিত্র অনসূয়া মজুমদার!‌ ভাবতে গেলেও সাহস লাগে। অনসূয়া একজন চমৎকার অভিনেত্রী। কিন্তু বাংলা ছবি তাঁকে সেভাবে ব্যবহার করতেই পারল না। সাহস দেখিয়েছেন শিবু–‌নন্দিতা। এর জন্য স্যালুট জানাতেই হবে।

gotro
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নাইজেল আকারা। বাস্তবেই যিনি জেলের অন্ধকারে জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন। কারাগারকে বলা হয় সংশোধনাগার। তবু জেলফেরত শুনলেই আমরা কেমন ভ্রু কুঁচকে তাকাই। তাকে আর বিশ্বাস করি না। কিন্তু শিবু–‌নন্দিতা তাঁদের প্রথম ছবি মুক্তধারাতে নাইজেলকে নিয়ে চমক দিয়েছিলেন। এই ছবিতেও অনেকটা অংশ জুড়ে নাইজেল। অসাধারণ অভিনয়। চরিত্রটাকে বেশ বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন। নাইজেলের হারানো সম্মান যেন অনেকটাই ফিরিয়ে দিল এই পরিচালক জুটি।
একজন হিন্দু রমনীর পরিচর্যায় একজন মুসলিম যুবক। সব ধর্মের বাধা ভেসে গিয়ে, এ যেন মানবতার জয়গান। নমাজরত তারেক আলিকে দেখেও ‘‌তারক’‌ ভাবতে কোনও অসুবিধা হয় না ঝুমারও। পাড়ার প্রোমোটার যখন তারেকের ধর্ম টেনে লোক ক্ষেপানোর চেষ্টা করে, তখন রুখে দাঁড়ালেন দিনরাত গোবিনদের পুজো করা ‘‌মাসিমা’‌। বুঝিয়ে দিলেন, ভারতের পরম্পরার শিকড় কতটা গভীরে। হয়ত সংলাপগুলো কিছুটা ভাষণ গোছের, তবু শুনতে মন্দ লাগছিল না। এই কড়া কথাগুলো আসলে শুধু প্রোমোটার বাপির জন্য নয়, মনে মনে বিদ্বেষ পুষে রাখা দর্শকদের জন্যও।
খুঁত ধরতে চাইলে, অনেক উপাদান হয়ত আছে। কিন্তু সচেতনাভাবেই সেগুলোকে উপেক্ষা করেছি। এই ছবি অসঙ্গতি খোঁজার ছবি নয়। এই ছবি দেখার ও দেখানোর ছবি। ভাল ছবির প্রত্যাশা পূরণে পুরোপুরি সফল শিবু–‌নন্দিতা। তারকা ছাড়াও হলে মানুষ টেনে আনা যায়, সেটা তাঁরা আবার দেখিয়ে দিলেন। এভাবেই অভিনব সব বিষয়কে তাঁরা বেছে নিন। আগামীদিনেও এই জুটির কাছে আরও ভাল ভাল ছবির প্রত্যাশা রইল।
(‌রিভিউ মানেই সেলিব্রিটিদের কলাম। কিন্তু বেঙ্গল টাইমস সেই প্রথাকে কিছুটা হলেও ভাঙতে পেরেছে। একজন সাধারণ দর্শকও ছবি দেখে নিজের অনুভূতি মেলে ধরতে পারেন। তা রিভিউয়ের চিরাচরিত ব্যকরণ মেনে হল কিনা, মাথায় না রাখলেও চলবে। যে কোনও ভাল সিনেমা বা নাটক দেখার পর আপনারাও আপনাদের অনুভূতি মেলে ধরতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা:‌ bengaltimes.in@gmail.com )‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.