গুমনামি নিয়ে নেতাজির গোপন চিঠি

রবি কর

নেতাজি চিঠি লিখেছেন। কীভাবে লিখলেন?‌ কোথা থেকে লিখলেন, তা আমরা জানি না। সত্যিই নেতাজি লিখলেন, নাকি তাঁর নাম করে অন্য কেউ লিখল, তাও আমরা জানি না। চিঠিটা লেখা হয়েছে সুগত বসুকে। কিন্তু এসে পৌঁছেছে আমাদের হাতে। কীভাবে এল?‌ না, এটাও আমাদের জানা নেই। আপনারও জানার দরকার নেই। আমাদের কাজ ছাপা। আপনার কাজ পড়া। বিশ্বাস করা না করা আপনার ব্যাপার।

.‌.‌.‌
তোর ডাক নাম কী রে?‌ ডাকনামটা কী?‌ ওটা জানা খুব দরকার। কাউকে ভাল করে ধাতানি দিতে হলে, ডাকনামটা জানতে হয়। তাতে ধাতানি জোরদার হয়।

এত লেখাপড়া শিখলি। হাভার্ডের অধ্যাপক হলি, এমপি হলি। তারপরেও তোর বাস্তবজ্ঞান হল না। মহাজ্ঞানী, মহা গবেষক, মহা পরিচালক সৃজিত মুখুজ্জের সঙ্গে তুই কোন আক্কেলে পাঙ্গা নিতে গেলি!‌ তাঁর সঙ্গে তুই পারবি?‌ আমি বলছি, কোনওদিন পারবি না।
তুই সারাজীবন কী করেছিস?‌ ইতিহাস পড়েছিস, পড়িয়েছিস। আর নেতাজিকে নিয়ে গবেষণা করেছিস। আর সৃজিত বাঙালির মনস্তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেছে। সে জানে, নেতাজির জীবন নয়, মরণ নিয়েই বাঙালির যত আগ্রহ। নেতাজি বিমান দুর্ঘটনায় মরেনি, রবীন্দ্রনাথ বৌদির সঙ্গে প্রেম করত, নেহেরুর জন্য দেশভাগ হল, গান্ধীজি ব্রিটিশের দালাল। এই কটা বিষয় নিয়ে বই, সিনেমা যাই হোক না কেন, বাঙালি চেটেপুটে খাবে।
রবীন্দ্রনাথের পাঁচটা উপন্যাসের নাম বলতে বল। পারবে না। কিন্তু তাঁর বউদির নাম ঠিক জানে। আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনাপতিদের মুক্তির জন্য কে মামলা লড়েছিল, জিজ্ঞেস কর। পারবে না। কিন্তু লেডি মাউন্টব্যাটেনের নাম ঠিক জানে। এই বাঙালির, এই ভারতবাসীর আদর্শ নমুনা হল সৃজিত মুখার্জি।

gumnami2
আমার জীবনে নাটকীয় উপাদান কম নেই। ইংরেজের চোখে ধুলো দিয়ে পালানো, জার্মানি থেকে ডুবোজাহাজে চড়ে জাপানে যাওয়া, আজাদ হিন্দ ফৌজের মণিপুরে প্রবেশ— এর প্রত্যেকটা নিয়ে আলাদা আলাদা সিনেমা হতে পারে। কিন্তু তাতে বিস্তর খাটনি, বিস্তর পড়াশোনা করতে হবে। তাই আদর্শ বাঙালির সৃজিত বেছে নিয়েছে সহজতম বিষয়টি। ‘‌নেতাজির মৃত্যু নিয়ে যাহা জানো, লিখ।’‌
এর আগে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, উত্তর কুমার, এমনকী শেক্সপিয়রের বারোটা বাজিয়ে তার শান্তি হয়নি। এবার পড়েছে আমার পেছনে। নেতাজির জীবনের অন্তিম পরিণতি কী হল, সেটা সৃজিত নিজেও জানে না। অথচ, লোককে জানাতে বসেছে। নিজেই বলেছে, প্লেন ক্র‌্যাশ হতে পারে, রাশিয়াতে মৃত্যু হতে পারে, আবার গুমনামি বাবাও হতে পারে। আমরা সব সম্ভাবনা তুলে ধরেছি। এ সিনেমা হিট হওয়া ঠেকায় কে!‌
এহেন মহাপণ্ডিতকে, তুই ঐতিহাসিক তথ্য দিয়ে বোঝাতে গেছিস। শোন বাবা, তুই আমার জীবন নিয়ে অনেক পড়াশোনা করেছিস। গবেষণা করেছিস। দেশ–‌বিদেশে ভাষণ দিয়েছিস। কিন্তু আসল জায়গাটাই বুঝিসনি। যে লোক যে ভাষা বোঝে, আমি তার সঙ্গে সেই ভাষাতেই কথা বলতাম। ইংরেজটা বন্দুকের ভাষা বোঝে, তাই আমি চরকা নয়, বন্দুক নিয়ে লড়াই করেছিলাম। সৃজিত সিনেমার ভাষা বোঝে, তাই ওর সঙ্গে সিনেমার ভাষাতেই কথা বলতে হবে।

gumnami1
একটা নতুন সিনেমা বানাতে হবে। এক পরিচালকের জীবন নিয়ে সিনেমা। ধরা যাক, সেই পরিচালকের সঙ্গে বর্তিকা মুখোপাধ্যায় নামে এক নায়িকার গা ঘসাগসি হল। তারপর বর্তিকা অন্য একজনের সঙ্গে পালাল। তখন আমাদের পরিচালক পায়াভারী চক্রবর্তী বলে অন্য এক নায়িকার ঘনিষ্ট হল। এমনটা হল কেন?‌ সৃজিত যেমন নেতাজির জীবন নিয়ে তিনরকম সম্ভাবনা তুলে ধরেছে, আমরাও তিন রকম সম্ভাবনা তুলে ধরব। প্রথম সম্ভাবনা, বর্তিকা বুঝে গেছে, এটা একটা ভুসিমাল, এর সঙ্গে না থাকাই উচিত। দ্বিতীয় সম্ভাবনা, আমাদের পরিচালক লম্পট, তাই এক নারী ছেড়ে অন্য নারীতে লাফ দেয়। তৃতীয় সম্ভাবনা, পরিচালক ধ্বজভঙ্গ, তাই বর্তিকা পালিয়েছে।
কোনটা ঠিক, তা সিনেমায় বলা হবে না। প্রশ্নগুলো উঠবে, মানুষ এগুলো নিয়ে আলোচনা করবে। বিচারের ভার মানুষের। গুমনামি সিনেমায় সৃজিতও তো তাই চায়। সিনেমার নাম কী হবে?‌ সিনেমার নাম হবে সৃজিত। গুমনামি মানে যদি গুমনামি বাবা না হয়, সৃজিত মানেই সৃজিত মুখোপাধ্যায় নয়। সৃজিত মানে যার সৃষ্টি করা হয়েছে। সিনেমার পোস্টারেও আমরা সৃজিতকেই অনুসরণ করব। গুমনামি সিনেমার পোস্টারে যেমন এক চুল দাঁড়িওয়ালা বৃদ্ধ সন্যাসীর ছবি দেওয়া আছে, সৃজিত সিনেমার পোস্টারেও কাঁচাপাকা দাড়িওয়ালা এক পরিচালকের ছবি দেওয়া থাকবে।
এই সিনেমার মূল চরিত্রে প্রসেনজিৎ অভিনয় করবে। সে তো ডিরেক্টর্স আর্টিস্ট। পরিচালক যেমন বলবে, তেমন করবে। আমাদের সিনেমাতেও কাঁচাপাকা দাড়ি লাগিয়ে পরিচালক সাজবে। বাকি রইল চিত্রনাট্য লেখা। নিজে যদি লিখতে না পারিস, বেঙ্গল টাইমসের রবি করকে বলিস, ও লিখে দেবে। আচ্ছা, আচ্ছা, আমি রবিকে চিঠি লিখে সব জানাব। ও রাজি হবেই।

Share

1 comment

Schraavan Srot says:

নতুন নেতাজিকে অভিনন্দন.. তাঁর নিজের লেখা এই প্রথম পড়লাম.. ভাল লেখক..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.