সঞ্জয় সেন
গতকাল থেকেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। সেটাই হল। পি চিদাম্বরমকে গ্রেপ্তার করল সিবিআই। সিবিআই তদন্তের প্রয়োজনে কাউকে গ্রেপ্তার করতেই পারে। তা নিয়ে বিতর্কও চলতেই পারে। কিন্তু এই গ্রেপ্তারকে নিয়ে যে ধরণের কুনাট্য দেখা গেল, ভারতীয় রাজনীতিতে আগে কখনও দেখা যায়নি।
কী অভিযোগ, তা নিয়ে বিস্তারিত যেতে চাই না। দুপক্ষই নিজেদের বড় বেশি খেলো করে ফেললেন। প্রথমত, চিদাম্বরম। একসময় দেশের অর্থমন্ত্রী, পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। নিজে বিখ্যাত আইনজীবী। এখনও রাজ্যসভার সাংসদ। তিনি এমনটা কেন করতে গেলেন? প্রাথমিকভাবে যা মনে হচ্ছে, তাঁর ভূমিকাও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে ছিল না। জেরা হতেই পারে। এমনকী বিরোধী দলে যখন আছেন, কিছুটা প্রতিহিংসাও দেখানো হতে পারে। তিনি তো সামনে থেকে লড়াই করবেন। তার বদলে দেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিনা ফোন বন্ধ করে লুকিয়ে গেলেন! কোনও দরকার ছিল? তিনি নিজেই তো নিজের ভূমিকাকে আরও বেশি প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিলেন।
এবার আসি সিবিআই–এর কথায়। প্রায় দশ বছরের পুরনো মামলা। সরকার বদল হয়েছে, তাও পাঁচ বছর হয়ে গেল। হঠাৎ, এই অতি সক্রিয়তা কেন? চিদাম্বরম বাড়িতে ফিরে এসেছেন। গোটা দেশ মিডিয়ায় দেখল। তারপর তাঁর বাড়ির পাঁচিল টপকাতে হল কেন? দরজায় কড়া নেড়ে কিছুক্ষণ তো অপেক্ষা করাই যেত। দেশের একজন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা একজন বর্তমান সাংসদ তো এই মর্যাদাটুকু দাবি করেন। তিনি তো দাগি আসামী নন, তিনি উগ্রপন্থী নন। তিনি পালিয়ে যেতেন না। পালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলে, গোটা দেশের মিডিয়ার সামনে বাড়ি ফিরে আসতেন না। হয়ত আইনি পরামর্শ নিচ্ছিলেন। এক ঘণ্টা অপেক্ষা করা যেতেই পারত। তার বদলে সিবিআই কী করল? পাঁচিল টপকে ঢুকল দেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতে। বলতে বাধ্য হচ্ছি, খুব নিচুস্তরের অসভ্যতা। এমন অসভ্যতা সিবিআই–কে মানায় না।
আরও একটা প্রশ্ন, চিদাম্বরমের বাড়ির পাঁচিল টপকে ঢুকতে হবে, এমন সিদ্ধান্ত উপস্থিত অফিসাররা নিতে পারেন? এত বড় একটা সিদ্ধান্ত সিবিআইয়ের সর্বোচ্চ আধিকারিকও কি নিতে পারেন যদি না দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ থাকে! তার মানে, পাঁচিল টপকে ঢোকার নির্দেশটা একেবারে উঁচু মহল থেকেই এসেছে।
চিদাম্বরম দোষী না নির্দোষ সেই বিতর্কে যাচ্ছি না। কিন্তু সিবিআই যে নিজেদের ভাবমূর্তিকে আরও কলঙ্কিত করল, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।