(ঠিক একবছর আগে, এই দিনেই প্রয়াত হয়েছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। সেদিন গান স্যালুট দিয়ে বিদায় দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সেদিন বেঙ্গল টাইমসে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বেশ কয়েকটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। তার মধ্যে এই লেখাটি ফিরিয়ে আনা হল। পাঠকের স্মৃতিকে কিছুটা উস্কে দেওয়ার চেষ্টা। পাশাপাশি, একবছর আগের সেই দিনটাকে একটু ফিরে দেখা।)
কদিন আগেও পঞ্চায়েত ভোটের প্রহসন নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন। যখনই সংকট এসেছে, তাঁর প্রতিবাদী কণ্ঠ বাংলার বিবেক হয়ে উঠে এসেছে। যতই হাইজ্যাক হোক, যতই গান স্যালুট হোক, সেই প্রতিবাদী কণ্ঠের কাছে সবকিছুই ম্লান। তিনি কাদের পছন্দ করতেন, কাদের করতেন না, সেটা তাঁর ধবধবে ধুতি–পাঞ্জাবির মতোই পরিষ্কার। লিখেছেন স্বরূপ গোস্বামী।।
মৃতদেহ হাইজ্যাকের রাজনীতি আর এ রাজ্যের পিছু ছাড়ল না। সেই আওতা থেকে বাদ পড়লেন না সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতো মানুষও।
দেশের প্রাক্তন স্পিকার প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর দেহ বিধানসভায় আনা হতেই পারে। এমনকী গান স্যালুটও দেওয়া হতেই পারে। এর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই। কিন্তু ব্যাপারটা নিছক সদিচ্ছা বলে ভাবতে মন সায় দিচ্ছে না।
শৈলেন মান্না থেকে সুনীল গাঙ্গুলি। সুচিত্রা সেন থেকে অমল দত্ত। প্রায় সব ব্যাপারেই হামলে পড়া একটা ব্যাপার দেখা গেছে। হয়ত সেই কারণেই শৈলেন মান্নার মরদেহ মোহনবাগানে যায় না। সেই কারণেই সোমনাথবাবুর মরদেহও পার্টি অফিসে এল না।
কেউ কেউ বলতেই পারেন, সিপিএম তো তাঁকে বহিষ্কার করেছিল। তথ্যের দিক থেকে একেবারেই খাঁটি কথা। অস্বীকারের উপায় নেই। কেউ কেউ বলতেই পারেন, পরিবারের লোকেরা রাজি হননি। এটাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অনেকক্ষেত্রেই পরিবারের কিছু ক্ষোভ অভিমান থাকে। তাই শৈলেন মান্নার তৃণমূলি মেয়ের পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না, মোহনবাগানের সঙ্গে তাঁর বাবার সম্পর্ক ঠিক কেমন ছিল। ক্লাবের কর্তা খোঁজ না নিলেও মোহনবাগান ছিল তাঁর হৃদয়জুড়ে।
ঠিক তেমনি, সোমনাথ চ্যাটার্জির ক্ষেত্রেও। পলিটব্যুরো আনুষ্ঠানিকভাবে বহিষ্কার করেছিল ঠিকই। কিন্তু রাজ্যস্তরে কোনও নেতার সঙ্গে বা দলের সঙ্গে কোনও তিক্ততা আসেনি। দল সম্পর্কে তাঁর শ্রদ্ধা, ভালবাসা, দুর্বলতা, সবই ছিল। নানা প্রলোভন এসেছে। সবিনয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন। দলে না থাকলেও আনুগত্য কাকে বলে, বারবার দেখিয়ে দিয়েছেন। চরিত্রের দৃঢ়তা কাকে বলে, তাও দেখিয়ে গেছেন।
এমনকী মাসখানেক আগেও, পঞ্চায়েত ভোটকে ঘিরে যখন চূড়ান্ত অরাজকতা, তখনও তাঁর বলীষ্ঠ কণ্ঠস্বর শুনেছে সারা বাংলা। পঞ্চায়েতের এই জবরদখলকে কী ভাষায় ধিক্কার জানিয়েছেন, সেই ফুটেজগুলো নিশ্চয় এখনও হারিয়ে যায়নি।
জানি, এখন সেগুলো দেখানো হবে না। বামেরা কতটা খারাপ, আর দিদিমণি কতটা ভাল, এখন সেই ছবিটাই তুলে ধরা হবে। সিপিএম বহিষ্কার করেছিল, অথচ দিদিমণি সৌজন্য দেখিয়ে গান স্যালুট দিলেন, এই ছবিটাই বড় বেশি করে তুলে ধরা হবে। কিন্তু, তিনি কাদের অপছন্দ করতেন, আর কাদের পছন্দ করতেন, তা জলের মতো পরিষ্কার।
একটা গান স্যালুটের আওয়াজে তাঁর দৃপ্ত প্রতিবাদী কণ্ঠ চাপা পড়বে না।