বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন: না, এই মানসিকতা শোধরানোর নয়। যতই প্রশান্ত কিশোর আসুন। যতই ইমেজ বদলের দাওয়াই দিন। তৃণমূল আছে সেই তৃণমূলেই। সরকারও আছে সেই সরকারেই। আরও একবার অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার।এবং এই বিতর্ক জোর করে তৈরি করা নয়। এই বিতর্ক রাজ্য সরকার নিজেই ডেকে আনল।
গতবার কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন প্রসেনজিৎ। এবার তিনি থাকতে রাজি নন, এমনটা জানাননি। তাঁকে ঘিরে কোনও তিক্ত অভিজ্ঞতাও হয়নি। প্রকাশ্যে বিরূপ মন্তব্য করে সরকারকে বিপাকেও ফেলেননি। কেন তিনি চেয়ারম্যান, এই নিয়ে তেমন কোনও অভিযোগও ছিল না। তাহলে, হঠাৎ তাঁকে সরিয়ে দিতে হল কেন?
সূত্রের দাবি, দিল্লি যাওয়ার পথে মুকুল রায়ের সঙ্গে তাঁর নাকি কথা হয়েছিল। বিমানে যেতে যেতে যদি কিছু কথা হয়েও থাকে, তার জন্য প্রসেনজিৎকে এভাবে ব্রাত্য করে দিতে হবে! গত কুড়ি বছরে মুকুল রায়ের সঙ্গে সবথেকে বেশি কথা তো হয়েছে আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর। মুকুল রায় যদি এতই খারাপ লোক হন, তাহলে এত বছর ধরে মুকুল রায় যাঁর ‘অনুপ্রেরণায়’ চলেছেন, তাঁকেও তো দায়ী করতে হয়।
থাক সে কথা। আগেই শোনা যাচ্ছিল, মুকুল রায়ের সঙ্গে কথা বলার অপরাধে এবার নাকি প্রসেনজিৎকে আর কমিটির চেয়ারম্যান রাখা হবে না। প্রসেনজিৎ নিজেও সেটা আঁচ করেছিলেন। তাই জানিয়েছিলেন, যদি সরানো হয়, তাঁকে যেন আগাম জানিয়ে দেওয়া হয়। টিভি থেকে বা কাগজ পড়ে যেন জানতে না হয়। তিনি এমন আর্জি জানানোর পরেও তাঁকে না জানিয়েই সরিয়ে দেওয়া হল। তাঁর বদলে চেয়ারম্যান করা হল রাজ চক্রবর্তীকে। প্রসেনজিতের বদলে রাজ! হবে নাই বা কেন! শিশু কিশোর আকাদেমিতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে সরিয়ে যিনি অর্পিতা ঘোষকে আনতে পারেন, যাদবপুর থেকে সুগত বসুর বদলে যিনি মিমি চক্রবর্তীকে লোকসভায় পাঠাতে পারেন, তাঁর কাছে এ আর কী এমন ব্যাপার!
তবু প্রসেনজিৎ বলে কথা। তাঁকে দলে টানার বা মিছিলে হাঁটানোর কম চেষ্টা তো হয়নি। অনেকদিন ধরেই চেষ্টা চেলেছে। ভোটে দাঁড় করানোর চেষ্টাও হয়েছে। কেউ কেউ থাকেন, এই সব হাতছানি উপেক্ষা করতে পারেন। প্রসেনজিৎও পেরেছেন। সরাকির অনুষ্ঠানে হাজির থাকলেও দলীয় কোনও অনুষ্ঠানে তাঁকে সামিল করা যায়নি। সেখানে রাজ চক্রবর্তীকে না ডাকলেও মিছিলে হাজির হয়ে যান।
চিরদিন প্রসেনজিৎকেই রাখতে হবে, এটা কোনও যুক্তি হতে পারে না। নতুন মুখ আনা হতেই পারে। তাই বলে, তাঁকে একবার জানানোও হবে না! বিশেষ করে তিনি নিজে যখন এই মর্মে বিবৃতি দিয়েছেন, তারপরেও এই ভুল কী করে হয়! তাহলে কি প্রসেনজিৎকে এভাবে অপদস্থ করাটা একেবারেই ইচ্ছাকৃত! এতবড় একটা সিদ্ধান্ত কোনও আমলার পক্ষে বা ইন্দ্রনীল সেনের পক্ষে নেওয়া সম্ভব? মুখ্যমন্ত্রী জানেন না, এটা বিশ্বাসযোগ্য! তাঁর অনুপ্রেরণা ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত হতে পারে!
সত্যিই বলুন তো, এই অসম্মান কি প্রসেনজিতের প্রাপ্য ছিল!