স্বরূপ গোস্বামী
(মজিদ বাসকার কোথায়? তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে খুঁজেছে কলকাতার ফুটবল মহল। বারবার সবাই ছুটে গেছেন মজিদের সঙ্গে আসা জামশিদ নাসিরির কাছে। তাঁর সঙ্গে দেখা হলেই সবাই জিজ্ঞেস করতেন মজিদের কথা। বেচারা জামশিদ। তিনি নিজেই জানতেন না, মজিদ কোথায় আছেন। উঠে আসত অনেক টুকরো টুকরো স্মৃতি। কীভাবে এসেছিলেন মজিদ? কেমন ছিল কলকাতায় কাটানো সেই দিনগুলো? বেঙ্গল টাইমসে সেসব কথাই মেলে ধরেছিলেন জামশিদ। কলকাতা আবার উত্তাল মজিদ বাসকারকে নিয়ে। এই আবহে বছর তিনেক আগে প্রকাশিত সেই লেখাটি আবার ফিরিয়ে আনা হল।)
ফেসবুকে তাঁর কোনও অ্যাকাউন্ট নেই। ট্যুইটারেও পাবেন না। এমনকি সবজান্তা গুগল সার্চে গিয়ে খুঁজুন। তাঁর নামে কতরকম লোকের দেখা পাবেন। কিন্তু তাঁর হদিশ পাবেন না। কোথায় যে হারিয়ে গেলেন!
না, হারিয়ে যাননি। দিব্যি থেকে গেছেন। ওয়েব দুনিয়া তাঁর হদিশ না রাখুক, ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয় থেকে তাঁর নির্বাসন নেই। যতই টোলগে, ওডাফাদের দাপাদাপি থাক, বিদেশি বললেই এখনও মনের কোনও এক দুর্বল জায়গায় গেঁথে আছে ওই নামটা। কেউ বলেন, এমন বিদেশি আর আসেনি। যাঁরা এতটা ভক্ত নন, তাঁরা বলেন, একটু শৃঙ্খলা থাকলে আরও অনেক বছর রাজত্ব করতে পারত। কেউ বলেন, ভুল সঙ্গে পড়েই হারিয়ে গেল। প্রায় তিনদশক পরেও এমন নানা কথা–উপকথা তাঁকে ঘিরে।
নামটা বলার জন্য কোনও পুরস্কার নেই। কারণ, এতক্ষণে দিব্যি বোঝা যাচ্ছে, লোকটা কে? কিন্তু তিনি কোথায়? এখন কী করছেন? কেউ জানে না। আদৌ বেঁচে আছেন তো! তাও নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। যিনি জানতে পারতেন, সেই জামশিদ নাসিরিও অন্ধকারে। এই তো সেদিন, মহমেডান ক্লাবের প্রথম লিগ জয়ের পঁচাত্তর বছরে কত খোঁজাখুঁজি করলেন কর্তারা। জামশিদের পেছনে প্রায় জোঁকের মতো লেগেছিলেন কর্তারা। আমশিদও কম চেষ্টা করেননি। কিন্তু না, খুঁজে পাওয়া যায়নি মজিদ বাসকারকে।
সত্যিই কি জানেন না? জামশিদ হাসতে হাসতে বললেন, জানলে না বলার কী আছে? ও তো আমার প্রতিদ্বন্দ্বী বা শত্রু নয়। আসলে, মানুষটাই অন্যরকম। কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না। এমন মানুষকে খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। বছর পাঁচেক আগে পর্যন্ত শুনেছিলাম, একটা স্কুলের বাচ্চাদের কোচিং করায়। কিন্তু তারপর থেকে আর কিছুই শুনিনি। আমার ভাই ইরানে থাকে। ওদের অনেকবার বলেছি, মজিদের খোঁজ নিতে। ওরাও কিছু জানতে পারেনি। আমার পাসপোর্টের ব্যাপারে একবার ইরান যেতে হবে। তখন আবার খোঁজ লাগাব। দেখি, খুঁজে পাই কিনা।
দেখতে দেখতে তিন দশক পেরিয়ে গেছে। অথচ, বাঙালির কাছে হারিয়ে যাওয়া কোনও স্মৃতি নয়। এই তো সেদিন, আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটিতে পড়তে এলেন ইরানের দুই তরুণ। একজন মজিদ বাসকার, আরেকজন জামশিদ নাসিরি। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে ইরানের স্কোয়াডে ছিলেন মজিদ, আর জমশিদ বয়সে চার বছরের ছোট। তবে একই ক্লাবে দুজন খেলতেন। তাই সম্পর্কটা কিছুটা বন্ধুত্বের। তিনিও ততদিনে খেলে ফেলেছেন যুব বিশ্বকাপ। কিন্তু ইরানের অবস্থা তখন ভাল নয়। যুদ্ধের ভয়াবহতা তো আছেই, অর্থনীতিও যেন ভেঙে পড়েছে। এই অবস্থায় অনেকেই এদিক সেদিক ঠিকানা খুঁজে নিলেন। তাঁদের আগেই ভারতে এসেছিলেন খাবাজি। এবার এসে গেলেন মজিদ, জামশিদ। প্রথমে এলেন জব্বলপুরে। কিন্তু সেখানে পড়াশোনার ব্যবস্থা থাকলেও খেলার তেমন সুযোগ নেই। তখন একজন পরামর্শ দিলেন, তোমরা যদি খেলাধূলা করতে চাও, তাহলে আলিগড়ে ভর্তি হও। ব্যাগপত্তর গুছিয়ে দুজনেই চলে এলেন আলিগড়ে। সুযোগ এসে গেল আলিগড় দলে।
অল ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি টুর্নামেন্টে নর্থ জোনের খেলা পড়ল জয়পুরে। জামশিদ সেখানে হায়েস্ট স্কোরার। ঠিকানা লেখা পাস বাড়িয়ে নজর কেড়ে নিলেন মজিদও। নর্থ জোন চ্যাম্পিয়ন হয়ে আলিগড় এল মূলপর্বে। কলকাতা থেকেও সেবার টিম গিয়েছিল। সেই দলে অতনু ভট্টাচার্যরা ছিলেন। কলকাতাকে হারাল আলিগড়। ফাইনালে হারাল কেরল ইউনিভার্সিটিকে। ২৮ বছর পর আলিগড় চ্যাম্পিয়ন। বম্বে থেকে রোভার্সে ডাক এল। রোভার্সেও খেলতে গেলেন মজিদ–জামশিদরা। এদিকে, ইস্টবেঙ্গল তখন টিম ভেঙে গেছে। সমরেশ চৌধুরি, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, ভাস্কর গাঙ্গুলি, মানস, বিদেশরা একসঙ্গে যোগ দিয়েছেন মহমেডানে। ইস্টবেঙ্গল টিম করা নিয়েই সমস্যায় পড়ল। তখন ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জিয়াউদ্দিন। তিনি ইস্টবেঙ্গল অফিসিয়ালদের বললেন, রোভার্সে এসো। অনেক ভাল ভাল ফুটবলার পেয়ে যাবে। অনেকে এলেন। এলেন পি কে ব্যানার্জিও । তিনি মজিদ–জামশিদ জুটির খেলা দেখে বললেন, তোমরা ইস্টবেঙ্গলে চলে এসো। জামশিদের স্পষ্ট মনে আছে সেই দিনগুলো। বললেন, আমরাও তো কলকাতায় যেতেই চাইছিলাম। এত তাড়াতাড়ি ডাক চলে আসবে, সেটা ভাবিনি। আশিতে ইস্টবেঙ্গলের ভাঙা টিম নিয়ে ফেড কাপ জিতলাম। পর পর দুবছর ইস্টবেঙ্গলে ছিলাম। খেলার মাঝে মাঝেই যেতে হয়েছে আলিগড়ে, পরীক্ষা দেওয়ার জন্য।’
অবশ্য ময়দানে কান পাতলে একটা অন্য গল্পও শোনা যায়। সেটা হল, সেবার রোভার্সে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান না খেললেও খেলেছিল মহমেডান। মজিদকে প্রথম মনে ধরে মহমেডান ফুটবল সেক্রেটারি মাসুদের। তিনি মনে মনে ঠিক করে নিলেন, মজিদ–জামশিদ জুটিকে কলকাতায় এনে সই করাবেন। কথাও নাকি বলে রেখেছিলেন। কিন্তু পরেরবার দল গড়ার দায়িত্বেই রইলেন না মাসুদ। ক্লাবকে উচিত শিক্ষা দিতে তিনিই নাকি ইস্টবেঙ্গলের হাতে তুলে দেন এই জুটিকে।
দুজনেই শুরু করলেন ইস্টবেঙ্গলে। প্রথমবারই ইস্টবেঙ্গল ফেড কাপে চ্যাম্পিয়ন। দেশের কোনও দলের কাছে সেবার ইস্টবেঙ্গল হারেনি। লাল হলুদ জনতার নয়নের মণি হয়ে উঠলেন মজিদ। জামশিদের সেই প্রতিভা হয়ত ছিল না। কিন্তু পরিশ্রম আর নিষ্ঠা দিয়ে নিজেকে ঘসেমেজে তৈরি করে ফেললেন। জামশিদ যেন আগে থেকেই জানতেন, মজিদ কোথায় বল বাড়াবেন। মজিদও যেন জানতেন, জামশিদ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন। একজনের ঠিকানা লেখা পাস আরেকজনের গোল। এই যুগলবন্দীতে মেতে উঠল ময়দান। প্র্যাকটিস দেখতে গ্যালারিতেই আসতেন প্রায় হাজার দশেক জনতা। মাইক হাতে তাঁদের সামলাতেন পিকে ব্যানার্জি। বছর দুয়েক কেটে গেল লাল হলুদে। কিন্তু ততদিনে মাঠের বাইরের নানা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছেন মজিদ। কখনও নিষিদ্ধ মাদক, কখনও নিষিদ্ধ পল্লি। সবমিলিয়ে তাঁকে নিয়ে কিছুটা অতীষ্ট হয়ে পড়লেন লাল হলুদ কর্তারাও। লাল হলুদের কোচ কখনও শান্ত মিত্র, কখনও পিকে ব্যানার্জি। দুজনেই চেষ্টা করে গেলেন মজিদকে ঠিক পথে রাখার। কিন্তু কে শোনে কার কথা! তিনি চলেছেন নিজের খেয়ালে। তিরাশিতে মজিদ–জামশিদ দুজনেই এলেন মহমেডানে। সেটা ছিল মজিদের জ্বলে ওঠার বছর। সেই ধারাবাহিকতা হয়ত নেই। তবে পায়ের সেই ঝিলিক যাবে কোথায়! গ্যালারি যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেল মজিদকে পেয়ে। চুরাশিতে ফিরে আসার কথা ইস্টবেঙ্গলে। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল সেবার কৃশাণু–বিকাশ জুটির সঙ্গে পাকা কথা বলে ফেলেছিল। তাই মজিদ–জামশিদের জায়গা হল না। পরের বছর। পিকে ব্যানার্জি আন্তরিকভাবেই চেয়েছিলেন, মজিদকে ফিরিয়ে নেওয়া হোক। মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের মতো সিনিয়র ফুটবলারও চেয়েছিলেন মজিদকে সই করানো হোক। কিন্তু অনেকেই চাইছিলেন না। কারণ, মজিদ–জামশিদ এলে হয়ত তাঁদের জায়গা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে । তাঁরা বেঁকে বসলেন। কেউ বললেন, মজিদ এলে আমি আসব না। আবার কেউ বললেন, মজিদ এলে আমি থাকব না। অন্য ক্লাবের অফার আছে, সেখানে চলে যাব। ইস্টবেঙ্গল কর্তারা চাইলেন না এই ফুটবলারদের চটাতে। তাই পিকে ব্যানার্জি চাইলেও সেবার সই করানো হল না মজিদকে।
এই প্রথম জুটি ভেঙে গেল। কান্নায় ভেঙে পড়লেন মজিদ বাসকার। এক বন্ধুর হাত ধরে চিৎকার করে বলতে লাগলেন, ‘লেট মি গেট এ চান্স। আই উইল প্রুফ মাইসেলফ। ’ পঁচাশিতে থেকে গেলেন মহমেডানেই। বুঝিয়ে দিলেন, আমি ছিলাম। আমি এখনও কিছুটা আছি। তবে দল হিসেবে মহমেডান সেবার তেমন কিছু করতে পারেনি। পাশে জামশিদ না থাকায় মজিদের ঠিকানা লেখা অনেক পাস যেন খেই হারিয়ে গেল। কারণ, জামশিদের মতো এত ভাল করে তাঁকে আর কেই বা বুঝলেন! মজিদও পাস বাড়িয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতেন। খানিক পরেই একমুখ বিরক্তি। হয়ত মনে মনে বলতেন, কার জন্য পাস বাড়ালাম! আর উল্টোদিকে ইস্টবেঙ্গলে সই করা জামশিদের কাছেও নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করার তাগিদ। পাশে মজিদ না থাকলেও তিনি নিজের কাজটা করতে পারেন, এই বার্তাটা সারা বছরজুড়েই রেখে গেলেন জামশিদ।
একদিকে জামশিদের সাফল্য। অন্যদিকে মজিদের হতাশায় তলিয়ে যাওয়া। চিড় ধরেছিল সেই বন্ধুত্বেও। তাই কিছুটা অভিমান জমা ছিল জামশিদের জন্যও। জামশিদ তাঁকে ছেড়ে ইস্টবেঙ্গলে চলে যাবেন, এমনটা ভাবতে পারেননি। বলেই ফেললেন, ‘আমি নই, জামশিদই এখন হিরো। সবাই ওকে নিয়েই নাচানাচি করবে। আমাকে সবাই ভুলে যাবে। অথচ, আমি না থাকলে সে কোথায় থাকত? আমি না পাস বাড়ালে গোলগুলো কোত্থেকে আসত?’ পিকে ব্যানার্জি আরও একবার চেষ্টা করলেন মজিদকে মূলস্রোতে ফেরানোর। তিনি তখন জাতীয় কোচ। বিশৃঙ্খল জীবনের জন্য প্রায় সব ক্লাব যখন মজিদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তখন পিকে চেষ্টা করলেন রেলওয়ে এফসি–তে মজিদকে সই করানোর। রেলওয়ে এফসি–কে রাজি করিয়েও ফেলেছিলেন। কিন্তু বেঁকে বসলেন স্বয়ং মজিদ। তাঁর দাবি, আরও টাকা বাড়াতে হবে। কিন্তু অফিস ক্লাবের পক্ষে তার থেকে বাড়ানো সম্ভব ছিল না। শেষমেষ ঘুরে দাঁড়ানোর শেষ সুযোগটাও হাতছাড়া হয়ে গেল মজিদের জীবন থেকে।
জামশিদের ধারাবাহিকতা তখন দেখার মতো। ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান দুই জার্সি গায়েই অনবদ্য। অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই গোল করছেন। বেশ কয়েক জায়গায় হায়েস্ট স্কোরার। বিরাট কিছু শিল্পের ঝলক না থাকলেও জামশিদ মানে কিছুটা নির্ভরতা। আর মজিদ ঠিক উল্টো। মাঠে দুরন্ত ফুল ফোটাচ্ছেন, ঠিকানা লেখা পাস বাড়াচ্ছেন। গ্যালারি উত্তাল হয়ে উঠছে তাঁর পায়ের শিল্পে। কিন্তু মাঠের বাইরে! শৃঙ্খলার ধারেকাছেও নেই। যখন যা মর্জি, তাই করছেন। কখনও নিষিদ্ধপল্লিতে গিয়ে পুলিসের কাছে ধরা পড়ছেন। কখনও সতীর্থদের ওপর মেজাজ হারাচ্ছেন। কখনও এর তার কাছে টাকা ধার করছেন। কখনও ফেরত দেওয়ার ভয়ে লুকিয়ে যাচ্ছেন।
এতদিন পরেও একটা দীর্ঘশ্বাস তাড়া করে বেড়াচ্ছে জামশিদকে। অপ্রিয় প্রশ্ন জেনেও প্রশ্নটা করেই ফেললাম, বন্ধু যখন তলিয়ে যাচ্ছে, তাঁকে সতর্ক করেননি? জামশিদের জবাব, শুধু সতর্ক কেন? ওর সঙ্গে কম ঝগড়া করেছি? বারবার বারণ করেছি। বলেছি, যা করছ, এটা ঠিক নয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ও তো কাউকেই পাত্তা দিত না। কারও কথা শুনত না। এমনকি পি কে ব্যানার্জি কিছু বলতে গেলে তাকেও এটা সেটা কথা শুনিয়ে দিত। বলে বসত, তোমরা তোমাদের কাজ করো। আমার ব্যাপারে নাক গলিও না। তাও চেষ্টা করে গেছি ওকে ঠিক রাস্তায় আনার। পারিনি। আমাদের কারও কথাই সে শোনেনি। আসলে, ও কিছু খারাপ লোকের খপ্পরে পড়েছিল। তারাই এখানে সেখানে, খারাপ জায়গায় ওকে নিয়ে যেত। ওইসব লোকের খপ্পর থেকে ও বেরিয়ে আসতে পারল না।
শেষের দিকে ওর নিজের ওপর কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। নানারকম ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিল। বাধ্য হয়ে দেশে পাঠাতে হয়েছিল। অনেক বুঝিয়েছি। কোনও লাভ হয়নি। চোখের সামনে তিল তিল করে একটা প্রতিভার অপমৃত্যু ঘটল। আজও মনে পড়লে কষ্ট পাই। অথচ, কী ফুটবলারই না ছিল!