গ্রামে রাত কাটানো ব্যুমেরাং হতেই পারে

বিপ্লব মিশ্র

গ্রামে যাওয়ার যেন হিড়িক পড়েছে। কোন তৃণমূল নেতা কোন গ্রামে যাবেন, তা ঠিক করে দিচ্ছে কর্পোরেট সংস্থা। কোথাও কোথাও নাকি বলে দেওয়া হচ্ছে, কার বাড়িতে গিয়ে থাকতে হবে। কী জানি, এবার হয়ত মেনুও বলে দেওয়া হবে।

আর তৃণমূল নেতৃত্ব গ্রামে যাচ্ছেন মানে নিরাপত্তারক্ষী থাকবেনই। ছবি তোলার লোককেও সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। জেলার রিপোর্টারদের হোয়াটস্‌অ্যাপ মারফত পাঠিয়েও দিতে হবে। ছাপার জন্য টুকটাক তদ্বির করতে হবে।অধিকাংশ কাগজই সরকারি বিজ্ঞাপনপুষ্ট। ফলে, সেসব খবর, ছবি ছাপাও হবে। অমুক বিধায়ক অমুক গ্রামে রাত কাটালেন। গ্রামের মানুষের সঙ্গে আড্ডা দিলেন। গ্রামের মানুষের বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করলেন। কারও গাল টিপে দিলেন। কেউ গান জুড়লেন। কেউ ক্যারম বা তাস খেললেন। এমন একটা আবহ তৈরি করা হচ্ছে যেন, অতীতে গ্রামের সঙ্গে বিধায়কদের সম্পর্কই ছিল না।

সেসব প্রসঙ্গ থাক। এই রাত কাটানো ব্যুমেরাং হয়ে উঠবে না তো! এই আশঙ্কা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রথম প্রথম  হয়ত প্রচার পাওয়া যাবে। কিন্তু কদিন গেলেই ছবিটা অন্যরকম হতে পারে। বিরোধীরা হয়ত নানাভাবে হেনস্থা করতে পারে। শারীরিক হেনস্থা না হোক, নানা অপ্রিয় প্রশ্ন উড়ে আসতেই পারে। এখন মেজাজ দেখানোও যাবে না। পুলিশ লেলিয়ে দেওয়াও যাবে না। বরং, সোশ্যাল মিডিয়া মারফত ক্ষোভের মুখে বিধায়ক — এরকম বার্তা ছড়িয়ে যেতে পারে। আর একটা জায়গায় হলে, এসব জিনিস দ্রুত সংক্রমিত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, অন্যান্য গ্রামেও ছড়িয়ে যায়। কাটমানি যেভাবে সারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ল, এক্ষেত্রেও ছড়িয়ে পড়তেই পারে। তখন পাততাড়ি গোটাতে হতেই পারে।

didike bolo

তার থেকেও বড় আশঙ্কা অন্য জায়গায়। ধরা যাক, রামবাবু গ্রামে গেলেন। কারা তাঁকে ঘিরে থাকবেন? গ্রামের পঞ্চায়েত মেম্বার, যিনি গত বছর বিনা লড়াইয়ে জিতেছেন। যিনি বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দিতেই দেননি। যাঁর সম্পত্তি হঠাৎ করে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। সন্ধেবেলা হলেই হয়ত যাঁকে সুস্থ বা স্বাভাবিক অবস্থায় দেখা যায় না। থাকবেন পঞ্চায়েত ও ব্লকের কিছু ঠিকাদার।যাঁদের কাজকর্ম ও ব্যবহারে মানুষ বীতশ্রদ্ধ। এঁরাও চাইবেন বিধায়ক বা মন্ত্রীর সঙ্গে একটা কাত কাটাতে। নানা রকম ছবি তুলতে। পরে সেগুলো ফেসবুকে আপলোড হবে। তাঁরা বোঝাতে চাইবেন, তাঁরা বিধায়কের কতটা ঘনিষ্ঠ। কেউ কেউ অতি উৎসাহী হলে বিশেষ উপহার নিয়ে আসবেন। বলে বসবেন, গুরু, একটু হয়ে যাক। গুরু আর শিষ্যকে কী করা নিরাশ করেন! এমনিতেই অনেকের এই ব্যাপারে যথেষ্ট সুনাম আছে। এই বার্তা রটে যেতে সময় লাগবে না। বিশেষ করে যে শিষ্য আগের রাতে গুরুসেবা করেছেন, তিনিই দায়িত্ব নিয়ে ছড়িয়ে দেবেন।

এমনিতেই এইসব ঠিকাদার ও পঞ্চায়েত মেম্বারদের বৃত্ত ভেদ করে গ্রামের সাধারণ মানুষ ধারেকাছে পৌঁছতেই পারবেন না। পৌঁছতে পারলেও অভিযোগ জানাতে পারবেন না। অভিযোগ জানালে নানা হুমকির মুখে পড়তে হবে। তার ওপর আগের রাতের নানা কীর্তি ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগবে না। যে গ্রামে থাকলেন, সেই গ্রামে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তো হলই, আশপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগবে না। তাছাড়া, বিধায়ক বা মন্ত্রী কার বাড়িতে থাকবেন, তা নিয়ে ছোটখাটো এতকটা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

সবমিলিয়ে রাত্রিযাপনের এই কর্মসূচিটাও ব্যুমেরাং হয়ে উঠতে পারে।

 

bt-striphttps://www.bengaltimes.in/amazing-pattaya/

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.