নামেই ভিনরাজ্য। আসলে, একেবারেই পড়শী। দিঘা পেরিয়ে একটু গেলেই তালসারি। সেখান থেকে ঢুঁ মেরে আসতেই পারেন বিচিত্রপুর। সৈকত জুড়ে লাল কাঁকড়ার মিছিল। নির্জনতা আর অরণ্য মিলিয়ে অন্য এক অনুভূতি। দুদিনের সেই ঝটিকা সফরের কথা উঠে এল তানিয়া বর্ধন ঘোষের কলমে।
প্রস্তুতিঃ
আমরা তিন দম্পতি বেশ কিছু দিনের বেড়ানোর সাথী। প্রথমে ভাবলাম বকখালি যাই। কিন্তু সমুদ্রের ধারে যে দুটো হোটেলের সন্ধান পেয়েছিলাম আমাদের যাবার সপ্তাহে দুটোর কোনওটায় ঘর ফাকা ছিল না। অগত্তা অন্য জায়গা ভাবতে বসলাম। অনেক ভেবে ঠিক হল তালসারি কাছাকাছি বিচিত্রপুর ম্যানগ্রোভ। জায়গাটা আমাদের ৬ জনের কাছেই নতুন। ভিড় ও কম তাই এটাকেই ফাইনাল করা হল।
যাত্রাঃ
জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে সবাই মিলে গাড়ি ভাড়া করে রওনা হলাম সকাল সাড়ে সাতটায়। প্রথম গন্তব্য কোলাঘাট শের-ই-পাঞ্জাব। জমিয়ে খাওয়া দাওয়া করে সোজা তালসারি। পথে মেঘ রোদ্দুরের খেলা র পুরনো হিন্দি সিনেমার গান জমে খির। দিঘা পেরিয়ে আমরা পৌঁছলাম তালসারি। ঘড়িতে তখন দুপুর ১-৩০। আমরা ছিলাম hotel Shree Inn(Deluxe Room)। ঘর গুলো খুব সুন্দর। দূর থেকে সমুদ্র দেখা যায়। হোটেলের সবার ব্যাবহারও খুব সুন্দর। আমরা আগে থেকেই জানিয়েছিলাম কাকড়ার থালি নেব। জানিয়ে রাখি, এই হোটেলের খাবারের দাম একদম ঠিকঠাক আর খাবার ও বেশ ভাল। ডাল, আলু ভাজা, সব্জি, কাকড়ার ঝাল দিয়ে দুপুরের খাবারটা এক কথায় অনবদ্য। খেয়ে ঘরে ফিরলাম ৪ টেয়। পরবর্তী গন্তব্য বিচিত্রপুর।
বিচিত্রপুরঃ
খেয়ে দেয়ে গড়িয়ে কারুর বেরোনোর ইচ্ছে তেমন একটা ছিল না। কিন্তু উপায় নেই, পরদিনই ফেরা। নাহ, জেতেই হবে। অগত্যা বেরিয়েই পড়লাম। সঙ্গে গাড়ি ছিল, তাই কোনও অসুবিধেই নেই। রওনা হলাম বিচিত্রপুর বিকেল ৫ টায়। গুগল ম্যাপ সঙ্গে থাকলে অনেকটাই মুশকিল আসান হয়ে যায়। অন্তত পথ হারানোর ভয থাকে না। ওখানে পৌঁছে শুনলাম ৫ টায় শেষ নৌকো ছাড়ে, আর এখন ৫-৪৫। মন মরা হয়ে গেলাম সবাই। সত্যি যাওয়া যাবে না? তখন দেখি একটা নৌকো আসছে ফিরে কজনকে নিয়ে। একটু দরাদরি আর একসঙ্গে ৬ জন দেখে রাজি হল। সবাই বেশ খুশি। নৌকো এগিয়ে চলল দুপাশের ম্যানগ্রোভ আর পশ্চিমে অস্তমিত সূর্যটাকে সঙ্গে নিয়ে। ১৫ মিনিট নৌকো যাত্রার পর পৌঁছলাম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে। সুন্দরবনের সঙ্গে তুলনা করা অনর্থক। ম্যানগ্রোভের একদিকে সমুদ্র অন্যদিকে নদী। জোয়ারে সমুদ্রের জল ম্যানগ্রোভে ঢুকে এক মনোরম পরিবেশ তৈরি করে। আমরা যখন গেছি, ম্যানগ্রোভে জল ছিল না। কিন্তু ছিল কানা মাছি খেলা একঝাঁক লাল কাঁকড়া। বেশ কিছুক্ষণ সময় তাদের সঙ্গে কাটানোর পর বুঝলাম সন্ধে নেমে আসছে। এবার তবে ফেরার পালা।
তালসারি সমুদ্রসৈকতঃ
পরদিন সকালে উঠে পরিপুষ্ট প্রাতরাশের পর গেলাম তালসারি সমুদ্রসৈকত। নদী পেরিয়ে যেতে হয় সেখানে। জোয়ারের সময় নৌকায় করে যেতে হয়। কিন্তু আমরা যখন যাই, তখন ভাটা। তাই হাতে জুতো নিয়ে হেঁটেই নদী পেরিয়ে ঝাউবনের মধ্যে দিয়ে পৌঁছলাম দারুণ সুন্দর একটা সি বিচে। পরিষ্কার বেশ ফাকা এই সমুদ্র সৈকত মূলত মাছ ধরার জন্যই ব্যবহার করা হয়। সমুদ্রের ঢেউ দিঘা– পুরীর থেকে কম, তবে জল অনেক পরিষ্কার। বেশ কিছুক্ষণ জলকেলির পর হোটেলে ফিরে এলাম। ব্যাগ গুছিয়ে ফিরতে হবে যে।
ফিরতি পথেঃ
হোটেলের সব দাম মিটিয়ে এক ব্যাগ আনন্দ নিয়ে ফিরে যাওয়ার পালা। ফেরার পথে ঠিক হল, দিঘায় দুপুরে খাব। যেমন কথা, তেমন কাজ। দিঘায় রবিবার চারদিকে লোকে লোকারণ্য। সমুদ্রের পাড়ে যেন জনসমুদ্র। সমুদ্রকে দূর থেকে দেখেই সাধ মেটালাম সবাই। কশে কশায় জমিয়ে খাওয়া দাওয়া করে শুরু করলাম বাড়ির পথে যাত্রা। হয়তোবা নতুন বেড়ানোর সূচনা।
***
(বেঙ্গল টাইমসের পাতায় উঠে আসছে নানা স্বাদের ভ্রমণ কাহিনী। কাছে হোক বা দূরে, যেখানেই যান, সেই অনুভূতির কথা লিখে পাঠাতে পারেন বেঙ্গল টাইমসে। কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, এমন বৃত্তের বাইরে, এক স্বতন্ত্র ভ্রমণ কাহিনী। যেখানে নিজস্ব আবেগ–অনুভূতি, ভাল লাগা–মন্দ লাগা অকপটে উঠে আসে। লেখা পাঠান। সঙ্গে ছবিও পাঠাতে পারেন। ঠিকানা: bengaltimes.in@gmail.com )