বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন: মিথ্যে কথার রেওয়াজটা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। যে মিথ্যেটা সবাই বুঝতে পারছেন, সেই মিথ্যেটা না বললেই নয়! বিশেষ করে দায়িত্বশীল পদে যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা ন্যূনতম সত্যিটুকু বলবেন, এটুকু তো আশা করাই যায়। কিন্তু তাঁরা নিজেদের পদের মূল্য বুঝলে তো! তাই বেমালুম মিথ্যে বলে চলেছেন। ডাঁহা ধরা পড়ে যাচ্ছেন, তাও মিথ্যের বিরাম নেই।
সাম্প্রতিক উদাহরণ, পার্থ চ্যাটার্জি। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু তিনিও কী অবলীলায় ডাঁহা মিথ্যে বলে দিলেন! মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ তিনি শোভন চ্যাটার্জির গোলপার্কের বাড়িতে গিয়েছিলেন। ছিলেন ঘণ্টা তিনেক। রাত দেড়টা নাগাদ বেরিয়ে আসেন। তাঁকে গাড়িতে তুলে দিতে নিচে নেমে আসেন শোভন চ্যাটার্জি, বৈশাখী ব্যানার্জি। ক্যামেরায় সেই দৃশ্য ধরাও পড়েছে। পার্থবাবু গাড়িতে উঠলেন, বেরিয়ে গেলেন, এমন দৃশ্যও ক্যামেরাবন্দী।
এই বৈঠকের কথা শোভন বা বৈশাখী অস্বীকার করেননি। কী কী আলোচনা হয়েছে, তার সবটা সামনে না এলেও কিছু নির্যাস বাইরে এসেছে। অথচ, পার্থবাবু বেমালুম অস্বীকার করে গেলেন। বলা ভাল, বেমালুম মিথ্যে বলে গেলেন। অথচ, এই মিথ্যের আশ্রয় নেওয়ার কোনও দরকারই ছিল না।
দলীয় মহাসচিব হিসেবে পার্থবাবু শোভনের বাড়িতে যেতেই পারেন। তাঁর মান ভাঙিয়ে মূলস্রোতে ফেরানোর চেষ্টা করতেই পারেন। তিন ঘণ্টা কেন, দশ ঘণ্টাও কাটাতে পারেন। কী কথা হল, তা বাইরে বলতে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতাও নেই। অনেক ভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যায়। বলাই যায়, দুজের ব্যক্তগত আলোচনা, এটা বাইরে আনতে চাই না। কেউ জোর করত না। হেঁয়ালি রেখে নানা কথা বলা যেত। সহজ কথা, বুদ্ধি থাকলে এড়িয়ে যাওয়ার অনেক উপায় ছিল।
কিন্তু তিনি প্রথমেই বেছে নিলেন মিথ্যের রাস্তাটা। বেমালুম বলে দিলেন, তিনি যা করেন, দিনের বেলায়। রাতে কারও বাড়িতে যান না। এমনকী মঙ্গলবার রাতে যাওয়ার কথাও বেমালুম অস্বীকার করলেন।
টিভিতে ছবি উঠেছে। পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, শোভন, বৈশাখী নেমে এলেন, পার্থকে গাড়িতে তুলে দিলেন। টিভিতে সেই দৃশ্য দেখানোও হল। এরপরেও গায়ের জোরে অস্বীকারের কোনও দরকার ছিল? এর পরেও এমন মিথ্যের বেসাতি করা কোনও দরকার ছিল? তৃণমূল মহাসচিব যা খুশি বলুন, তাতে কোনও আগ্রহ নেই। কিন্তু তিনি তো রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীও। সেই কথাটা কি ভুলে গেলেন! অন্তত শিক্ষামন্ত্রীর চেয়ারে বসে যে মিথ্যে বলতে নেই, এটুকুও মনে হল না!
এত এত উপাচার্য, শিক্ষবিদ, অধ্যক্ষ, অধ্যাপক, শিক্ষকদের সঙ্গে তাঁকে বৈঠক করতে হয়। বিভিন্ন সেমিনারে শিক্ষার বিকাশ, শিক্ষার উৎকর্ষ— এসব নিয়ে জ্ঞানগর্ভ ভাষণ তাঁকে দিতে হয়। এমন ডাঁহা মিথ্যে কি তাঁকে মানায়!
নিজের পদের মর্যাদা কবে যে বুঝবেন!