কলকাতার মহানায়ক বলিউডে সফল হতে পারলেন না কেন ? অনেকে বলেন রাজ কাপুরের ষড়যন্ত্র। কেউ বলেন, উত্তম নিজেই দায়ী। ভুল লোকের খপ্পরে পড়েছিলেন। আসলে ঠিক কী হয়েছিল ? অনেক অজানা দিক উঠে এল এই প্রতিবেদনে।
যিনি বাংলার মহানায়ক, তিনি মুম্বইয়ে সেভাবে সফল হতে পারলেন না কেন? বাংলার নিশ্চিত আসন ছেড়ে মুম্বইয়ের অনিশ্চিত পথে পা বাড়াতে চাননি ? হিন্দি বলায় সমস্যা ছিল ? নাকি ভুল লোকের খপ্পরে পড়েছিলেন ?
উত্তম কুমারের মৃত্যুর এত বছর পরেও এই নিয়ে নানা চর্চা আছে। তিনি যে মুম্বইয়ে প্রতিষ্ঠা চাননি, এমন নয়। চেয়েছিলেন, বাংলার বাইরেও তাঁর বৃত্ত প্রসারিত হোক। অনেক কাছের মানুষই উত্তমকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, বাংলা তো হল, এবার সারা দেশে এই সুনাম ছড়িয়ে দিতে হবে।
অনেকে মনে করেন, উত্তম বম্বে গিয়েছিলেন অনেক দেরিতে। তখন নায়ক হওয়ার বয়স তাঁর পেরিয়ে গেছে। ছযের দশকের মাঝামাঝি সময়ে যখন গিয়েছিলেন, তখন আর রোমান্টিক হিরো হওয়ার বয়স নেই। তাই চরিত্রাভিনেতা হওয়া ছাড়া আর উপায় ছিল না। এই সহজ সত্যিটা তিনি মানতে পারেননি।
উত্তমকে হিন্দি ছবি করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন স্বয়ং রাজ কাপুর। সঙ্গম ছবিতে রাজেন্দ্র কুমার যে রোলটি করেছিলেন, সেই রোলটি প্রথমে অফার করা হয়েছিল উত্তম কুমারকে। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। অনেকে তাঁকে বুঝিযেছিলেন, এই রোল করলে তিনি রাজ কাপুরের আড়ালে ঢাকা পড়ে যাবেন।
অথচ, এই চরিত্রটা বেশ গুরুত্বপূর্ণই ছিল। নায়ক না হলেও তার প্রায় কাছাকাছি। নিজের জাত চেনানোর অনেকটাই সুযোগ পেতেন। তা ফিরিয়ে দিয়ে তিনি ঠিক করলেন, নিজেই ছবি বানাবেন। নিজেই টাকা ঢাললেন ছোটি সি মুলাকাত ছবিতে। বৈজয়ন্তীমালার সঙ্গে তাঁর জুটি একেবারেই জমেনি। ছবিটা একেবারেই চলল না বড়সড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়লেন মহানায়ক।
অনেকের মতো সুপ্রিয়া দেবীও মনে করেন, ভুল লোকের খপ্পরে পড়েছিলেন মহানায়ক। অনেকেই প্রযোজনা করতে বারণ করেছিলেন, ঝুঁকি নিতে বারণ করেছিলেন। কারও বারণই সেভাবে শোনেননি মহানায়ক। সেই যে মোহভঙ্গ হল, আর সেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারলেন না। কয়েকটি টুকটাক হিন্দি ছবি করলেন ঠিকই, কিন্তু বলিউডে মহানায়ক হয়ে ওঠা আর হল না। সেদিন যদি রাজ কাপুরের প্রস্তাব ফিরিয়ে না দিতেন, একটু একটু করে পায়ের তলার মাটি পেতেন। অন্তত ‘ব্যর্থ’ তকমা নিয়ে ফিরে আসতে হত না।
(বেঙ্গল টাইমসের উত্তম সপ্তাহ চলছে। রোজ মহানায়ককে ঘিরে দু-তিনটি করে লেখা ছাপা হবে। আপনিও অজানা কোনও দিক তুলে ধরতে পারেন। লেখা হোক ২৫০ থেকে ৫০০ শব্দের মধ্যে। লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ bengaltimes.in@gmail.com)