‌দুই প্রধানের এই ডিগবাজি অনিবার্যই ছিল

বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন:‌ দুই প্রধানের কর্তারা যে ডিগবাজি খাবেন, সে তো জানাই ছিল। ঠিক সেটাই হল।
লাল হলুদ ও সবুজ মেরুন কর্তারা বৈঠক করলেন কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র কাছে। তিনি ক্রীড়ামন্ত্রীও নন, ক্রীড়াপ্রেমীও নন। বিজেপির সংগঠনের লোক। হঠাৎ তাঁর কাছে দরবার করার দরকার পড়লই বা কেন?‌ কৈলাশ বিজয়বর্গীয় আই এস এলে খেলিয়ে দেবেন?‌ আই লিগ কটা দল খেলে, তিনি জানেন?‌ জানতেন না, কাগজে ছবি বেরিয়ে যাবে!‌ আর এই ছবি বেরোলে কী ফল হতে পারে, তা বুঝতে পারেননি?‌
জানাই ছিল, মুখ্যমন্ত্রী চটে যাবেন। ঠিক সেটাই হয়েছে। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস মারফত কড়া বার্তাও এসে গেছে। এরপরই ঢোঁক গেলা শুরু। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করা বার্তা দিতে হবে। যদি ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত হয়। ব্যাস, দুই প্রধানের কর্তারা প্রতিযোগিতা করে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করতে শুরু করে দিলেন। বয়ানটা কিছুটা একইরকম। বোঝাই যাচ্ছে, বয়ানটাও কার্যত তৈরি করে দেওয়া।

kailash
দেশের কোনও মুখ্যমন্ত্রী নাকি এত ক্রীড়াপ্রেমী নন। অতীতের কোনও মুখ্যমন্ত্রী নাকি এতখানি ক্রীড়াপ্রেমী ছিলেন না। যদি দেবব্রত সরকার, সৃঞ্জয় বসু বা দেবাশিস দত্তদের এমনটা মনে হয়, তাঁরা বলতেই পারেন। কিন্তু যদি রাজ্যে সরকার বদলে যায়, তখন এই কথাগুলো বলবেন তো?‌ তখন এই মুখ্যমন্ত্রীর নামে প্রশংসা করবেন তো?‌
সত্যিই, এই মুখ্যমন্ত্রীর মতো ক্রীড়াপ্রেমী আগে কেউ আসেননি। তাঁর ভাই আর দাদা মিলে ময়দান চালাচ্ছেন। তাঁর দাদা ইস্টবেঙ্গলের কর্মসমিতিতে, ভাই মোহনবাগানে। দাদা আই এফ এ–‌র সভাপতি, ভাই হকি অ্যাসোশিয়েশনের সচিব। দাদা বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোশিয়েশনের সভাপতি, ভাই সচিব। তাঁর দলীয় সভা থেকে ধর্না মিছিল, ফুটবলার থেকে কর্তা, সবাইকে হাজির হতে হবে, ফরমান চলে আসে। তাঁর সরকার ক্লাবকে টাকা দেয়, আর ক্লাবগুলি ভোটের আগে নির্বাচনী অফিস হয়ে ওঠে। সেই ক্লাবের ছেলেদের মিছিলে লোক আনতে হয়, ভোটের দিন ছাপ্পা দিতে হয়। সেই ক্লাবের আশেপাশে তাঁর ছবি দেওয়া পেল্লাই সাইজের হোর্ডিং–‌ফ্লেক্স টাঙাতে হয়। সেই হোর্ডিং–‌ফ্লেক্সও সরকারই দিয়ে দেয়। সত্যিই, এমন ক্রীড়াপ্রেমী মুখ্যমন্ত্রী আগে দেখা যায়নি। অন্য কোনও দলের নেতার সঙ্গে দেখা করতে গেলেই দাবড়ানি চলে আসে। সত্যিই, এমন ক্রীড়াপ্রেমী আগে দেখা যায়নি।
ক্লাবের সঙ্গে সরকারের একটা সহজ, স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকবে, সেটাই কাম্য। আগেও সমন্বয় রেখেই কাজ হত। কিন্তু দলীয় মঞ্চে বা মিছিলে ডাক পড়ত না। মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয়রা ক্লাব, আই এফ এ, বি ও এ, বি এইচ এ— এসব দখল করে বসেননি।
তার জন্য অবশ্যই দুই প্রধানের কর্তারা দায়ী নন। কিন্তু সবকিছু জেনেও এমন আগ বাড়িয়ে সার্টিফিকেট দিতে গেলে তার দায় তো তাঁদেরও নিতে হবে। যদি মনে হয়, কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, তার জন্য বিজয়বর্গীয়র কাছে যেতেই পারেন। কিন্তু এত ভয় পাওয়ার কী আছে?‌ এমন ডিগবাজি মারারই বা কী আছে?‌ কেউ তো বলেনি যে, দুই প্রধানের কর্তারা বিজেপি হয়ে গেলেন। তাহলে, এত সাফাই দেওয়ার কী আছে?‌ এত দরাজ সার্টিফিকেট দেওয়ারই বা কী আছে?‌ আসলে, এক ধমকেই কাঁপুনি বেরিয়ে এল। এই থমথমে আবহটাই গত কয়েকবছর ধরে চলে আসছে ক্রীড়াজগতে। দুই প্রধানের কর্তাদের ডিগবাজিতে তা আরও একবার বেআব্রু হল, এই যা।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.