আজ যেটা মমতা বুঝলেন, বুদ্ধবাবু অনেক আগেই সেটা বুঝেছিলেন

বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন:‌ বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী আসল কথাটা বলেই ফেলেছেন, কেউ যদি চাষ না করতে চায়, আমি কী করতে পারি?‌ যাদের জমি ফেরানো হয়েছে, তারা চাষে লাভ হবে না বলে জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। আমার কী করার আছে?‌

এমন অকপট সত্যিটা একদিন না একদি তাঁকে বলতেই হত। ধন্যবাদ সুজন চক্রবর্তী, আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অন্তত মুখ্যমন্ত্রী সত্যিটা স্বীকার করেছেন। এত ঘটা করে তিনি টাটাদের তাড়ালেন। একটা নব্বইভাগ তৈরি হয়ে যাওয়া কারখানাকে ভেঙে চুরমার করে দিলেন। জমি ফিরিয়ে দিয়ে বিজয়োৎসব করলেন। সব জমিকে চাষযোগ্য করার মহাযজ্ঞে কোটি কোটি টাকা খরচ করলেন, সর্ষের বিজ ছড়ালেন। এত ছবি উঠল। এত ধন্য ধন্য রব। অথচ, সেখানে বিরাট অংশের জমিতে কোনও চাষবাসই হচ্ছে না।

সেই সিঙ্গুরই এখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে সিঙ্গুর কেন্দ্রে অনেকটাই পিছিয়ে তৃণমূল। সিঙ্গুর তাঁর জয়ের স্মারক। জোর করে সিঙ্গুরের আন্দোলনকে সিলেবাসে ঢোকালেন। সেই সিঙ্গুরে এমন বিপর্যয় কেন? ‌সত্যিই যদি কারখানা হত, আজ শুধু সিঙ্গুরের নয়, সারা বাংলার চেহারা পাল্টে যেত। রাজ্যের সেরা শহরগুলির তালিকায় চলে আসত সিঙ্গুর। আরও কত কারখানা, কত উপনগরি গড়ে উঠত। কত হাজার হাজার কর্মসংস্থান হতে পারত।

buddhadeb bhattacharya3

কিন্তু সেই যে রাজ্য পেছনের দিকে হাঁটতে শুরু করল, সেই পশ্চাতগতির বিরাম নেই। বছরের পর বছর ঘটা করে শিল্প সম্মেলন হয়। শিল্প আর আসে না। পঙ্গপাল নিয়ে বিদেশ সফর হয়। বিরাট আশার বাণী শোনানো হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কত?‌ স্পষ্ট উত্তর মেলে না।

যেদিন তিনি সিঙ্গুর থেকে টাটাকে চলে যেতে বাধ্য করেছিলেন, সেদিনই বোঝা গিয়েছিল, শিল্পে এই রাজ্যের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে। যত দিন যাচ্ছে, সেই ছবিটাই স্পষ্ট হচ্ছে। কিন্তু গায়ের জোরে, গলার জোরে সেই সহজ সত্যিটাকে অস্বীকার করা হচ্ছে। একটা তৈরি কারখানাকে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার নাম যদি বিজয়োৎসব হয়, তবে সেই রাজ্যের সত্যিই খুব দুর্দিন। যাক, এতদিনে বোঝা গেল, সিঙ্গুরের মানুষ চাষ করতে চাইছেন না। এতদিনে বোঝা গেল, তাঁরা জমি ফেরত পেয়েও সেই জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন।

আজ যেটা মমতা ব্যানার্জি বুঝছেন, সেটা একজন মানুষ অনেক আগেই বুঝেছিলেন। তাই কৃষিকে বাঁচিয়ে শিল্পের রাস্তায় হাঁটতে চেয়েছিলেন। লক্ষ লক্ষ ছেলের কর্মসংস্থান তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তাঁর নাম বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.