দেবায়ণ কুণ্ডু
বছর পাঁচেক আগের কথা। সেবারও লোকসভা নির্বাচনের আগে গোটা দেশজুড়ে মোদি ঝড়। মোদি যে ক্ষমতায় আসছেন, সেই দেওয়াল লিখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় বাংলা থেকে ডাক পড়েছিল সৌরভ গাঙ্গুলির। শোনা যায়, মোদি নাকি তাঁকে বাংলার কোনও কেন্দ্র থেকে দাঁড়াতে বলেছিলেন। যদি বাংলার কোনও কেন্দ্র নিরাপদ মনে না হয়, সেক্ষেত্রে গুজরাট থেকে দাঁড়ানোর প্রস্তাবও ছিল। তাতেও যদি আপত্তি থাকে, সরাসরি কেন্দ্রের ক্রীড়ামন্ত্রী করে রাজ্যসভায় জিতিয়ে আনার প্রস্তাবও ছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাব সবিনয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বাংলার মহারাজ।
এই বিষয়টি মোদিও কখনও প্রকাশ্যে আনেননি। সৌরভও প্রকাশ্যে বলেননি। কিন্তু খবর নিজের নিয়মেই ছড়িয়ে যায়। হয়ত তাতে কিঞ্চিত অতিরঞ্জন মিশে যায়। কিন্তু পাঁচ বছর আগে সৌরভের কাছে যে লোভনীয় প্রস্তাব ছিল, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। প্রশ্ন হল, সৌরভ কেন রাজি হননি? প্রথমত, তিনি রাজনীতি থেকে দূরেই থাকতে চেয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, এই রাজ্যে বিজেপির কোনও সম্ভাবনাই ছিল না। তাই খামোখা এমন নৌকোয় উঠতে যাবেন কেন? রাজ্যে ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্কটা খারাপ করতে যাবেনই বা কেন? মন্ত্রী হিসেবে শপথ হয়ত নেওয়া যেত, অন্য রাজ্য থেকে জিতেও আসা যেত। কিন্তু ‘প্রিন্স অফ ক্যালকাটা’কে যদি নিজের রাজ্যেই ব্রাত্য থাকতে হয়, তার থেকে দুঃখের আর কী হতে পারে!
কিন্তু পাঁচ বছর পর ছবিটা অনেকটাই বদলে গেছে। বিশেষত লোকসভা নির্বাচনের পর। সরকারের গ্রাফ পড়তির দিকে। একবার সেই গ্রাফ নামতে শুরু করলে ফের তোলা বেশ মুশকিল। লোকসভাতেই বিজেপির অনুকূলে প্রবল হাওয়া ছিল। যত দিন যাবে, সেই হাওয়া আরও বাড়বে। দু ববছর পর বিজেপি এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসতেই পারে। অন্তত সেই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
কিন্তু একটাই প্রশ্ন। দলের মুখ কে? রাহুল সিনহা বা দিলীপ ঘোষকে সামনে রেখে লড়াই করলে মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে? মুকুল রায়কে কি সামনে আনা হবে? নাকি তৃণমূল শিবিরে আরও ভাঙন ধরবে? শুভেন্দু অধিকারী বা এই গোছের কোনও বড় নামকে সামনে আনা হবে? এই মুখ যদি সৌরভ গাঙ্গুলি হয়! অবাক হওয়ার কিছু নেই। প্রথমত, বিজেপিতে সেই বিশ্বাসযোগ্য মুখ নেই। তৃণমূল থেকে ভাঙিয়ে আনা মুখ কতখানি বিশ্বাসযোগ্য হবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন। সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মুখ হতেই পারেন সৌরভ গাঙ্গুলি।
পাঁচ বছর আগে মোদির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও এখন কিন্তু পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। এমনিতেই বিজেপির পক্ষে জোরালো হাওয়া। তার ওপর সৌরভ এসে গেলে তো কথাই নেই। তিনি জেলায় জেলায় ঘুরলে জনপ্লাবন এসে যাবে। এমনকী বাম বা তৃণমূল মনষ্ক ভোটাররাও সৌরভকে বেছে নিতে দ্বিধা করবেন না। বিজেপিকে ঘিরে সংখ্যালঘুদের মধ্যে যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে, সৌরভ গাঙ্গুলির নামে তা অনেকটাই কেটে যেতে পারে।
নেতৃত্ব কীভাবে দিতে হয়, সৌরভ সারা বিশ্বকে দেখিয়েছেন। প্রশাসনক হিসেবে তিনি যে যোগ্য, সিএবিতে গত পাঁচ বছর ধরে দেখিয়ে যাচ্ছেন। যে কোনওদিন বোর্ড সভাপতি হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কোন কাজটা কাকে দিয়ে করাতে হয়, কীভাবে করাতে হয়, বেশ জানেন। ফ্রন্টফুটে গিয়েও পরে ব্যাকফুটে এসে কীভাবে কভার ড্রাইভ করতে হয়, কোন বলটা স্টেপ আউট করে ছক্কা হাঁকাতে হয়, তিনি জানেন। কখন কাকে বল দিতে হয়, কীভাবে ফিল্ডিং সাজাতে হয়, তাও জানেন। সবমিলিয়ে রাজ্যের নেতৃত্বেও বেমানান হবেন না।
জন্মদিনে অনেক শুভেচ্ছা আসবে। কিন্তু সৌরভ, এই প্রস্তাবটাও ভেবে দেখতে পারেন।