অজয় কুমার
এম এস ধোনির কী করা উচিত? সবাই এর মধ্যেই জ্ঞান বিতরণ করতে শুরু করে দিয়েছেন। অধিকাংশই নিদান হেঁকে দিচ্ছেন, এবার তাঁর সরে দাঁড়ানো উচিত। যেন সেমিফাইনালের আগেই অবসর করে ফেললে সবথেকে ভাল হয়। অথচ, কয়েকটা ম্যাচ আগে এঁরাই ধোনি বন্দনায় মুখর হয়েছিলেন। একটা দারুণ ইনিংস খেলতে দিন, দেখবেন, অতীতের সব পোস্ট মুছে দিয়ে এঁরাই ফের ধোনি বন্দনায় মেতে উঠবেন। এঁরাই হয়ত বলে উঠবেন, কী? বলেছিলাম না, ধোনি ঘুরে দাঁড়াবেই।
রোগটা নতুন নয়। সবজান্তা সবকালেই ছিলেন। এখনও আছেন। এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে হুহু করে বেড়ে চলেছে। ধোনির সমালোচনার পেছনে ক্রিকেটীয় যুক্তি কতটা আছে, আর নিজেকে জাহিরের তাগিদ কতটা, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচের কথাই ধরা যাক। ওই একটি ম্যাচেই ভারত হেরেছে। সেই ম্যাচে ধোনির রান তোলার গতি কিছুটা কম ছিল। তাই বলে ওই একটি ম্যাচ দেখে অবসরের নিদান হেঁকে দিতে হবে? ওই ম্যাচে ভারতের ৩৩৮ রান তাড়া করার কথা। প্রথম দশ ওভারে ভারত কত করেছিল? মাত্র ২৮। যেখাএ সাড়ে ছয় করে আস্কিং রেট, সেখানে শুরুর দশ ওভারে তিন রানের গড়ও ছিল না। ব্যাটসম্যানের নাম কিন্তু মহেন্দ্র সিং ধোনি ছিল না। উইকেটে ছিলেন রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি।
কোহলি–রোহিতরা ১০ ওভারে ২৮ তুললেন। সেটা দোষের নয়। অথচ, শেষদিকে ধোনি না জেতাতে পারলে গেল গেল রব। শুরুতে রানের গতি থমকে গেলে পরের দিকে সেই চাপ আরও বেড়ে যায়। তাছাড়া, তখন একদিকে রান তোলা, অন্যদিকে উইকেট ধরে রাখা, দুই ভারসাম্যের লড়াই এসে যায়। সব ম্যাচে ধোনিই জেতাবেন, এটা একটু বাড়াবাড়ি আবদার হয়ে গেল না?
বয়স সবার পারফরম্যান্সেই কম–বেশি প্রভাব ফেলে। শচীনের শেষ তিন–চার বছরে কি এই প্রভাব পড়েনি? শেষ কতবছর শচীন পুল শট খেলেননি, একবার মনে করে দেখুন তো। সময়ের নিয়মেই রিফ্লেক্স কমবে, রান তোলার গতি কমবে। এই সহজ সত্যিটা ধোনি নিজেও বোঝেন। বোঝেন বলেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বোঝেন বলেই দেশের নেতৃত্ব অবলীলায় ছেড়ে দিয়েছেন।
যতই বয়স হোক, এই দলে ধোনি এখনও অপরিহার্য। কখন খেলা ছাড়তে হবে, তিনি জানেন। কাউকে বলতে হবে না। তিনি নিজেই টুপি খুলে রাখবেন। কিন্তু বিশ্বকাপের এই সময়টায় তাঁকে অযাচিত জ্ঞান না দিলেও চলবে।