হাসপাতালে হামলা সংক্রামক হয়ে উঠছে কেন?

বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন: হাসপাতালে আবার আক্রান্ত চিকিৎসক। বিষয়টি যেন মহামারির আকার নিচ্ছে। কলকাতার হাসপাতালে ভাঙচুর হলে, চিকিৎসক আক্রান্ত হলে খবর হয়। কিন্তু জেলায় যেসব ঘটনা ঘটছে, সেগুলি সামনেও আসছে না। বিভিন্ন জেলার এডিশন লক্ষ করলে দেখা যাবে, গত কয়েক বছরে এই প্রবণতা বেড়েই চলেছে।
রোগীর মৃত্যু হলে পরিবারের লোকেদের দুঃখ হওয়া স্বাভাবিক। কর্তব্যে গাফিলতি থাকলে রাগ হওয়াও স্বাভাবিক। কিন্তু শুধু কি সেই রাগেই ডাক্তারদের গায়ে হাত তোলা হচ্ছে?‌ শুধু কি সেই কারণেই ভাঙচুর হচ্ছে?‌ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, এই ভাঙচুর বা আক্রমণের পেছনে বাড়ির লোক যত না যুক্ত, তার থেকে বেশি যুক্ত পাড়াপড়শীরা বা এলাকার মাতব্বররা। যাঁরা রোগীর জন্য দু বোতল রক্ত দিতে প্রস্তুত নয়। কিন্তু ভাঙচুর করতে হবে শুনলেই এক পায়ে খাড়া। তখন কোত্থেকে উদয় হয়ে ‘‌সমাজসেবী’‌র তকমা নিতে ব্যস্ত।

nrs2
এন আর এস হাসপাতালে ডাক্তারদের মারধরের ঘটনায় কারা যুক্ত?‌ একটু চেষ্টা করলেই খুঁজে বের করা সম্ভব। হাসপাতালের বিভিন্ন প্রান্তে সিসিটিভি তো আছেই। ইদানীং অনেকের মোবাইলেও নানা ঘটনার ভিডিও থাকে। যারা হামলা চালাল, পুলিশ হয়ত তাদের চিনবে না। কিন্তু যাঁদের পরিবারের লোক ভর্তি ছিল, তাদের তো ঠিকানা, ফোন নম্বর আছে। তাঁদের তো পাওয়া যায়। তাঁদের অকারণ হেনস্থা না করে, তাঁদের সাহায্য নিয়ে বাকিদের অনায়াসেই চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু এই সদিচ্ছা বা এই সাহস কি পুলিশ দেখাবে?‌ সরকার কি এতখানি খোলা মনে তদন্ত করতে পারবে?‌
ডাক্তার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা প্রথম নয়। মাঝে মাঝেই ঘটছে। অধিকাংশক্ষেত্রেই দুদিন পর ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। পুলিশ কার্যত নিষ্ক্রিয়ই থাকছে। ‘‌তদন্ত হবে’ এই মর্মে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। তারপর যথারীতি তদন্তের নামে অশ্বডিম্ব হচ্ছে। ডাক্তারদের রাগ কমে যাচ্ছে। মানুষও ভুলে যাচ্ছে। এখন ভুলে যাওয়া সত্যিই খুব সহজ। রোজ এত এত কাণ্ড ঘটছে, কোনটা ছেড়ে কোনটা মনে রাখবেন!‌ প্রশাসন জানে, দুদিন পর মানুষ এমনিতেই সব ভুলে যাবে। শুধু আশ্বাস–‌টাশ্বাস দিয়ে টাটকা বিক্ষোভটা কে একটু সামাল দেওয়া।
প্রশাসনের এই শিথিলতাই হামলাকারিদের উৎসাহ দেয়। তাঁরাও দিব্যি জানে, কিছুই হবে না। পুলিশের কিছুই করার মুরোদ নেই। পুলিশ করতে চাইলেও শাসক দলের দাদারা ঠিক ঝমকে–‌চমকে আটকে দেবে। দিনের পর দিন এই অরাজকতা চলছে। কার ‘‌অনুপ্রেরণায়’‌, কে জানে!‌

nrs1
কয়েক বছর আগেই সরকারি বিধানসভায় বিল এনেছে। হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিগ্রহ করলে কড়া শাস্তির দেওয়া হবে। নানা ক্ষেত্রে সেই শাস্তির পরিমাপের কথাও বিলে বলা হয়েছে। কিন্তু ওইটুকুই। সেই আইনকে কার্যকর করার কোনও সদিচ্ছা কোনও মহলেই দেখা যাচ্ছে না। ফলে, হাসপাতালে হামলার ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ‌চিকিৎসকরাও সত্যিই অসহায়। তাঁরাও বুঝতে পারছেন, একটু এদিক ওদিক হলেই হামলা হবে। তার থেকে দায়িত্ব নিয়ে লাভ নেই। রেফার করে দাও। অতীতের অভিজ্ঞতা তাঁদের বুঝিয়েছে, হামলা হলেও সরকার হাত গুটিয়েই থাকবে। হামলাকারীদের ধরার উদ্যোগ নেবে না। তাই তাঁরাও প্রশাসনের ওপর ন্যূনতম ভরসাটুকু রাখতে পারছেন না।
রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এ এক বড় সঙ্কট। পারস্পরিক এই আস্থাটুকুই হারিয়ে যাচ্ছে। রোগী, ডাক্তার, পুলিশ— কেউ কাউকে বন্ধু ভাবতে পারছেন না। শুধু বড় বড় ইমারত করে, নীল সাদা রঙ করে সুপার স্পেশালিটির আস্ফালন করলে হবে না। এই আস্থাটা সবার আগে ফিরিয়ে আনা দরকার।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.