যে নিজে ডুবতে চায়, তাকে ভাসানোর ক্ষমতা প্রশানত কিশোরের নেই

অজয় কুমার

পরাজয় থেকে অনেকেই শিক্ষা নেয়। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি সেই বান্দা নন। তাই, যে কারণে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, সেই কারণগুলো খুঁজে বের করতে পারছেন না। উল্টে সেই গাজোয়ারিই চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজের কোনও ভুল বা দোষ তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। সমানে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে যাচ্ছেন।

১)‌ এখনও বলে চলেছেন, ইভিএম কেলেঙ্কারি। অর্থাৎ, নির্বাচনের ফলকেও মানতে চাইছেন না। কোন কেন্দ্রের ফল অবিশ্বাস্য?‌ যাঁরা একটু হলেও খোঁজখবর রাখেন, তাঁরা অনেক আগে থেকেই জানতেন, কোন কেন্দ্রে কী ফল হতে চলেছে। সবাই জানত, শুধু তিনিই জানতেন না।

২)‌ ইভিএম কেলেঙ্কারিই যদি হয়, তাহলে দক্ষিণ কলকাতায় মালা রায় জিতলেন কীভাবে?‌ এই জয় নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন তোলেনি। ভাইপো তিন লাখ ভোটে জিতলেন কীভাবে?‌

৩)‌ দোষ চাপালেন সিপিএমের ঘাড়ে। বামেদের সব ভোট নাকি রামে চলে গিয়েছে। এতদিন তিনি বামকে খুঁজেও পেতেন না। বলতেন, দূরবিন দিয়ে দেখতে হয়। বলতেন, সিপিএমের সাইনহবোর্ড ছাড়া কিছুই নেই। তাহলে, সেই সিপিএমের ভোট কোথায় গেল, তা নিয়ে এত মাথাব্যথা কেন?‌

৪)‌ পঞ্চায়েতে ভোট না হতে দেওয়াটা যে কতবড় ভুল, সেটা এখনও তিনি বুঝতে পারছেন না। মানুষ দুর্নীতি মেনে নেয়। কিন্তু ভোট না দিতে দেওয়াটা ব্যুমেরাং হয়ে ওঠে। বেশ কিছু জায়গায় বামেরাও হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। এবার মমতাও পেলেন।

৫)‌ সিঙ্গুরে হারের পর দোষ চাপালেন স্থানীয় নেতাদের ঘাড়ে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যে অপরাধ করেছেন, তার ধারেপাশেও নেই স্থানীয়রা। তাঁরা কী এমন করেছেন?‌ বড়জোর কিছু কাটমানি খেয়েছেন। কিন্তু স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো সিঙ্গুরকে শ্মশান বানিয়েছেন। শিল্পের আঙিনায় যে সিঙ্গুরের মাথা তুলে দাঁড়ানোর কথা, সেখানে তিনি সমস্ত সম্ভাবনাকে গলা টিপে হত্যা করেছেন। না এসেছে শিল্প, না হয়েছে কৃষি। সিঙ্গুর কোনওদিন তাঁকে ক্ষমা করবে?‌ বলতে পারেন, সিঙ্গুরের বোধোদয় শুরু। এর জন্য বেচারাম বা মাস্টারমশাই নয়, অনেক বেশি দায়ী নেত্রী নিজে।

mamata banerjee2

৬)‌ পাহাড়। মুখ্যমন্ত্রীর ঢাক পেটানোর অন্যতম জায়গা। সেখানে এভাবে মুখ থুবড়ে পড়তে হল কেন?‌ এত এত বোর্ড গঠন কোনও কাজে এল না?‌ আসলে, শুরু থেকেই বিভাজন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের বিরুদ্ধে সমস্ত জনগোষ্ঠী যে এভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠবে, দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। একেবারে চার লাখ ভোটে হার!‌ বিনয় তামাংয়ের মতো বেড়ালকে ফুলিয়ে বাঘ বানাতে চেয়েছেন। নিজের জো হুজুর লোক দিয়ে পাহাড় শাসন করতে চেয়েছেন। হাতে নাতে ফলও পেয়েছেন।

৭)‌ জঙ্গল মহল। আরও এক ঢাক পেটানো বিজ্ঞাপন। সেই বেলুনও চুপসে গেল। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর— এই সব আসনেও শোচনীয় পরাজয়। অথচ, পঞ্চায়েতে এই সব জেলায় কার্যত বিনা লড়াইয়েই জয় পেয়েছে তৃণমূল। বলা হয়েছিল, বিরোধী বলে কিছুই নেই। যে সব জায়গায় বিরোধী বলে কিছুই নেই, সেখানে এমন গণ প্রত্যাখ্যান!‌

৮)‌ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দল ভাঙানোর খেলায় মেতেছিলেন। এমনকী দ্বিতীয় দফায় ২১১ আসন পাওয়ার পরেও এই খেলা থামাননি। পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা, বিধানসভা সব জায়গাতেই অন্য দল থেকে ভাঙিয়ে আনা হয়েছিল। এখন ঠিক সেটাই হচ্ছে তৃণমূলের ক্ষেত্রে। এখন অন্যদের গদ্দার বলে কী হবে?‌ এই গদ্দারদের উত্থান তো আপনার হাতেই।

কারণ খুঁজলে আরও হাজারটা কারণ বেরিয়ে আসবে। কিন্তু তিনি শোধরাবেন না। নিজের দোষ খুঁজে পাবেন না। এখনও যিনি সব দায় অন্যদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন, তাঁর পতন সুনিশ্চিত। সেই বিপর্যয় আটকানোর ক্ষমতা কোনও প্রশান্ত কিশোরের নেই।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.