বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন: আমি এলে দু ঘণ্টা আগে থেকে রাস্তার ধারে দড়ি ধরে দাঁড়িয়ে থাকার দরকার নেই। যান চলাচল আটকানোরও দরকার নেই। নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ যেন কোনও বাড়াবাড়ি না করে।
বাঁকুড়ায় এসে এমনটাই বার্তা দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। খোলা মঞ্চ থেকে বার্তাটা ঠিক কাকে দিতে চাইলেন? পুলিশকে ? দলীয় কর্মীদের ? নাকি যুবরাজকে? এই প্রথম দলের কোনও শীর্ষনেতা প্রকাশ্যে এভাবে তোপ দাগলেন। যাঁরা বোঝার, তাঁরা বোঝেন।
গত কয়েক বছর বাঁকুড়া–পুরুলিয়া জেলার সাংগঠনিক দায়িত্বে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো। তিনি জেলায় এলে নিরাপত্তার নামে কী কী কড়াকড়ি হত, তা এই দুই জেলার মানুষের অজানা নয়। শুধু এই দুই জেলা নয়, দুর্গাপুর বা বর্ধমানের লোকেদেরও এর কড়া মাশুল দিতে হত। একবার তো শক্তিগড়ে বাবুল সুপ্রিয়র গাড়িও আটকে দেওয়া হয়েছিল। কারণ, ভাইপো যাবেন। একজন সাংসদ যাবেন বলে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকেও যেতে দেওয়া হচ্ছে না। চার ঘণ্টা আগে থেকে রাস্তার দু ধারে দড়ি নিয়ে থাকতে হত পুলিশকর্মীদের। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর জন্যও এমন ব্যবস্থা দেখা যায়নি।
বাঁকুড়া–পুরুলিয়ায় অবশ্য এটা পরিচিত দৃশ্য। ভাইপো এলেই অনেক রাস্তায় বাস বন্ধ। ভাইপো এলেই দড়ি ধরে অনেক আগে থেকে পুলিশের দাঁড়িয়ে থাকা। কাউকে রাস্তা পারাপার করতে দেখলে চোখ রাঙানো। আর মিটিং থাকলে তো কথাই নেই। বিভিন্ন রুটের বাস তুলে নেওয়া। ফলে, ভোগান্তির শেষ নেই। বাস না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে পথচারীদের।
সাধারণ মানুষের তো বটেই, খোদ তৃণমূল নেতৃত্বের ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল এই নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি নিয়ে। জেলার অনেক নেতাই বলতেন, তৃণমূলকে হারানোর জন্য ভাইপো একাই যথেষ্ট। তার মিটিং মানেই হাজার খানেক ভোট বিজেপিতে ঠেলে দেওয়া। ভোটের পর দেখা গেল, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, পুরুলিয়া— তিন আসনেই হার। এমনটা যে হতে পারে, অনেক আগে থেকেই ইঙ্গিত ছিল। যাঁরা জেলার পাল্স বোঝেন, তাঁরা জানতেন। বালি আর কয়লা খাদানের কথাও জেলাবাসীর অজানা নেই। কোথায় কোথায় লাভের গুড় পৌঁছয়, মুখ্যমন্ত্রী না জানলেও জেলার অধিকাংশ মানুষই জানেন। ভোটের বাক্সে উচিত জবাবও দিয়েছেন।
আপাতত ভাইপোর বদলে পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী। মুর্শিদাবাদে সাফল্যে পেলেও মালদা ও উত্তর দিনাজপুরে পর্যবেক্ষক হিসেবে চূড়ান্ত ব্যর্থ। এবার বাঁকুড়া–পুরুলিয়ার দায়িত্ব নিয়ে কড়া বার্তা দিলেও তিনি কদিন তৃণমূলে থাকবেন, তা নিয়েই জোর জল্পনা। তবে, এরই মাঝে আসল রোগটা একটু হলেও চিহ্নিত করতে পেরেছেন। প্রকাশ্যে স্বীকারও করতে পেরেছেন। যাক, বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার কেউ একজন তো আছেন। দেখা যাক, জল কোনদিকে গড়ায়। ২০২১ পর্যন্ত শুভেন্দু তৃণমূলে থাকবেন? সময়ই বলবে।