প্রশান্ত কিশোর, এবার বুঝবেন কার পাল্লায় পড়েছেন

সরল বিশ্বাস

অবশেষে এই বাংলায় আপনার পা পড়ল। আপনি নাকি এবার দিদিমণিকে উপদেশ দেবেন। এবার বুঝবেন কত ধানে কত চাল!‌
কথায় আছে, ঝড়ে গাছ পড়ে। ফকিরের কেরামতি বাড়ে। আপনার হয়েছে সেই অবস্থা। ২০১৪ তে বিজেপি জিতল। সবাই বলতে লাগল, আপনার জন্যই নাকি জয়। এবার তো আরও বড় ব্যবধানে জিতল। কই মশাই, এবার তো আপনার বাহাদুরি লাগেনি।
বিহারে লালু–‌নীতীশ জোট জিতেছিল। তখনও অনেকেই আপনার ঢাক বাজিয়েছিল। আপনার জন্যই নাকি বিজেপিকে হারানো গেছে। আপনার জন্যই নাকি নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। পরে দেখা গেল, সেই নীতীশ গিয়ে ভিড়লেন বিজেপির বন্দরে। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় বিরোধীদের সঙ্গে ছিলেন। ফল কী হয়েছে, সবাই জানে।
সহজ কথা, কোথাও টোটকা কাজে লেগেছে। কোথাও লাগেনি। এবার আপনি এসেছেন বাংলায় দিদিমণির পালে হাওয়া টানতে। আপনি ভেবেছেন, আরও একবার বাজিমাত করবেন। সেটি হচ্ছে না মশাই। ২০২১ এ মমতার সরকার ফের ক্ষমতায় আসবে কিনা জানা নেই। তবে আপনি যে ততদিন টিকবেন না, এটা বিলক্ষণ জানা আছে। যে কোনও দিন আপনার বিদায় ঘণ্টা বাজবে। এবং সেটা হয়ত ছমাসের আগেই।
আপনি লালু–‌নীতীশদের পইপই করে বুঝিয়েছিলেন। তাঁরা বুঝেওছিলেন। আপনি কি ভাবছেন আমাদের দিদিমণি আপনার কথা শুনবেন?‌ কভি নেহি। আপনি হয়ত বললেন, জনসভায় এই এই কথাগুলো বলবেন না। দিদিমণি হয়ত প্রথম প্রথম দু–‌একটা সভায় শুনবেন। কদিন পরেই আবার নিজের ফর্মে ফিরে আসবেন। আপনাকে বলবেন, আমি কী বলব, তুমি ঠিক করে দেওয়ার কে হে, হরিদাস পাল।
আপনি হয়ত বললেন, ‘‌আপনার পরিবারের অমুক লোক কাটমানি খাচ্ছে। এতে উল্টো প্রভাব পড়ছে।’‌ একবার শুধু বলে দেখুন। আপনাকে ফাটকে পুরে দিলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আপনি হয়ত বললেন, অমুককে টিকিট না দিলে ভাল হয়। অমনি তিনি গর্জে উঠবেন, ‘‌দলটা আমি তৈরি করেছি। আমি কাকে টিকিট দেব না দেব, তা নিয়ে তোমার মাথা ঘামানোর দরকার নেই।’‌ অথবা, দারুণ ফর্মে থাকলে বলতে পারেন, ‘‌আমি কাকে টিকিট দেব, আমি বুঝব। তোর বাপের কী?‌’ আপনি হয়ত বললেন, সারদা তদন্তের বিরোধীতা না করাই ভাল। তদন্ত যেমন হচ্ছে, চলতে দিন। উনি বলে বসবেন, ‘‌তুমি শালা বিজেপির এজেন্ট। আমাকে বিপদে ফেলতে চাইছো।’‌ আপনি হয়ত বললেন, পুরসভা ভোটে স্বচ্ছ ভোট করান। আপনার ভাবমূর্তি ভাল হবে। তিনি বলে বসবেন, ‘‌তার মানে এতদিন স্বচ্ছ ভোট হয়নি?‌ একদম কুৎসা করবে না।’‌ হয়ত বললেন, অন্য দল থেকে নেতাদের ভাঙিয়ে আনার দরকার নেই। উনি বলবেন, ‘‌তার মানে এতদিন ভুল করেছি?‌ আমার দল থেকে যে লোকেরা চলে যাচ্ছে, তার বেলা?‌ কেউ যদি উন্নয়ন দেখে লে যোগ দেয়, তার হাতে পতাকা তুলে দেব না?‌ বেশ করব। আমার দল, আমি যাকে খুশি নেব। তুমি বলার কে?‌’‌ দিদির দলে অনেক বুদ্ধিজীবী। অতএব, আপনার বুদ্ধি আপনি আপনার ঝোলায় রাখুন। দিদিমণিকে বুদ্ধির দেমাক দেখাতে আসবেন না।

prashant kishore

এরকম কত মণিমাণিক্য যে আপনাকে শুনতে হবে!‌ এখনও পর্যন্ত যেখানে যেখানে ভাড়াটে সৈনিক ছিলেন, কোথাও জিতেছেন, কোথাও হেরেছেন। কিন্তু হলফ করে বলতে পারি, এমন বিচিত্র অভিজ্ঞতা আপনার কখনও হয়নি। যদি পুরসভা পর্যন্ত টিকে যান, আর যদি সেই ভোটে তৃণমূল হেরে যায়, নিশ্চিত থাকুন, সব দায় আপনার ওপর চাপানো হবে। অন্য কোথাও গিয়ে চাকরি খুঁজবেন, এমনটাও হবে না। কী জানি, হয়ত গাঁজা কেস— এ আপনারে অ্যারেস্টও করা হতে পারে। তখন আপনিই বলবেন ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি।

তবে, যে কদিনই থাকুন, এই রাজ্যে আপনার দারুণ অভিজ্ঞতা হবে। আপনার সঙ্গে প্রথম মিটিংটাই হল নবান্নে। আচ্ছা বলুন তো, নবান্ন ওই মিটিংয়ের জায়গা!‌ সরকারি জায়গায় দলীয় স্ট্র‌্যাটেজি নিয়ে আলোচনা!‌ এর আগে কখনও সরকারি দপ্তরে গিয়ে দলের মিটিং করেছেন?‌ সবে তো শুরু। দেখুন না, জল কোন দিকে গড়ায়। কখনও তাঁর মিটিং দেখেছেন?‌ প্রশাসনিক বৈঠক বা দলীয় বৈঠক!‌ সেখানে শুধু একজনই বলে যান। বাকি সবাই নীরব শ্রোতা। অবশ্য শ্রোতা না হয়ে বাকিদের উপায়ও নেই।
আপনি কি ভাবছেন, আপনি একতরফা জ্ঞান দিয়ে যাবেন। আর দিদিমণি শুনে যাবেন। সে গুড়ে বালি মশাই। দু লাইন বলার পরই আপনাকে দাবড়ে থামিয়ে দেওয়া হবে। তারপর আপনি তাঁর কথায় উঠবেন, বসবেন। আপনি বেশ ভাল করেই বুঝবেন, কার পাল্লায় পড়েছেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.