বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন: গত কয়েকদিন ধরেই বিভ্রান্তি চলছে চাকুলিয়ার বিধায়ক আলি ইমরান (ভিক্টর)কে ঘিরে। তিনি নাকি বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। এই মর্মে খবর ছড়িয়েছে কয়েকটি পোর্টালে। কোনওকিছু যাচাই না করেই ছড়িয়ে পড়ছে সোশ্যাল সাইটে। ফলে, দিনদিন বিভ্রান্তি বাড়ছে। অপরিণত সাংবাদিকতার কারণেই এই বিভ্রান্তি।
দিন কয়েক আগের কথা। বিধানসভায় গিয়েছিলেন বিজেপি সভাপতি ও নবনির্বাচিত সাংসদ দিলীপ ঘোষ। এখনও তিনি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেননি। বিধানসভায় হয়ত জরুরি কোনও কাজে গিয়েছিলেন। বা, ইস্তফা দেওয়ার আগে হয়ত নিয়ম কানুন জেনে নিতে গিয়েছিলেন।
বিধানসভার লবিতে দেখা ভিক্টরের সঙ্গে। দুজনেই বিধানসভার সদস্য। ব্যক্তিগত সম্পর্কও বেশ ভাল। স্বাভাবিকভাবেই দিলীপ ঘোষকে জেতার জন্য অভিনন্দন জানান ভিক্টর। টুকটাক দু–একটি কথা হয়। দিলীপ ঘোষ ভিক্টরকে নিয়ে লবির সোফায় বসে পড়েন। দুই বিধায়কের সাধারণ আড্ডা। বিধানসভার লবিতে হামেশাই যা দেখা যায়।
কথায় কথায় দিলীপ ঘোষ বলেন, তোমার কাকু তো সবসময় তোমার নাম করে। তোমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কে কাকু? জানতে চান ভিক্টর। দিলীপ ঘোষ বলেন, কেন, মুকুল রায়। ভিক্টর মজা করেই বলেন, ‘আমি এমন তো কিছু করিনি যে এত প্রশংসা করতে হবে। হ্যাঁ, আলাপ আছে, কিন্তু অনেকদিন কোনও যোগাযোগ নেই।’ তখন দিলীপ ঘোষ হঠাৎ করেই ফোনে ধরে ফেলেন মুকুল রায়কে। বলেন, ‘এই যে, আপনার ভাইপো ভিক্টর আমার কাছে বসে আছে। নিন, কথা বলুন।’ বলেই ভিক্টরকে ফোন ধরিয়ে দেন। দিলীপ ঘোষকে হঠাৎ মুকুল রায়কে ফোন করে ধরিয়ে দেবেন, ভিক্টর বুঝতেও পারেননি। উল্টোদিকে মুকুল রায়। টুকটাক সৌজন্যমূলক কয়েকটা কথা। ব্যাস, এখান থেকেই ছড়িয়ে গেল জল্পনাটা।
দূর থেকে দাঁড়িয়ে অনেকেই দেখেছেন দৃশ্যটা। বেরিয়ে যাওয়ার সময় দিলীপ ঘোষকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, উত্তরবঙ্গের এই তরুণ এমএলএ–কে নিয়ে নিচ্ছেন! কথা হয়ে গেল নাকি? দিলীপ ঘোষ কিছুটা রসিকতা করে বলেন, ‘পুরো উত্তরবঙ্গটাই তো নিয়ে নিয়েছি। বাকি যারা আছে, তারাও চলে আসবে।’
নিছকই রসিকতা। সেখান থেকেই ছড়িয়ে গেল জল্পনাটা। খবর হয়ে গেল, ভিক্টর নাকি বিজেপিতে যেতে পারেন। অনেকে গুজবে কান দিয়েও ফেললেন। অনেকে জানেন না, গত আট বছর ধরে তাঁকে দলে টানার কী চেষ্টা করেছে তৃণমূল। সরাসরি ক্যাবিনেট মন্ত্রীর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যে কোনও দিনই শপথ নিতে পারতেন। নানা নেতামন্ত্রী তো প্রস্তাব দিয়েইছেন, কিন্তু সর্বোচ্চ জায়গা থেকে এমন একজন দলে আসার প্রস্তাব দিয়েছেন, যা চমকে দেওয়ার মতোই। ২০১৪ তে লোকসভায় দাঁড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সবিনয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এমনকী এবারও তৃণমূল ও বিজেপি দুই দলের তরফ থেকেই লোকসভায় দাঁড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এবারও সবিনয়ে ফিরিয়েছেন সেই প্রস্তাব।
যে তরুণ লড়াকু বিধায়ক দিনের পর দিন এমন লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন, তিনি হঠাৎ বিজেপিতে কেন যেতে যাবেন? লোকসভার আগে গেলে তবু না হয় কথা ছিল, ভোট পেরিয়ে যাওয়ার পর এখন কীসের আশায় যাবেন?
তাছাড়া, এমন দলবদলের কথা কি কখনও বিধানসভার লবিতে প্রকাশ্যে হয়? তেমন ইচ্ছে থাকলে এমন জায়গায় বৈঠক হত, কেউ জানতেও পারতেন না। সবার সামনে দলবদলের আলোচনা করবেন, এতখানি বোকা নিশ্চয় তিনি নন। সে তো তৃণমূলের অনেকের সঙ্গেই ব্যক্তিগত স্তরে তাঁর দারুণ সম্পর্ক। বিধানসভায় দুরন্ত ভাষণের জন্য অনেক তৃণমূল মন্ত্রীই গোপনে তাঁকে অভিনন্দন জানান। অনেকেই সরকারের বিরুদ্ধে নানা তথ্য তুলে দেন। বিধানসভার ভেতরেই তো অনেকের সঙ্গে গল্প করেন, আড্ডা মারেন। তাই বলে কি তিনি তৃণমূল হয়ে গেলেন? আসলে, ভিক্টরের লড়াই সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। কীভাবে তিনি দিনের পর দিন শাসকের বিরুদ্ধে কার্যত একা লড়াই করে চলেছেন, সেটা বাংলার মূলস্রোত মিডিয়ার জানার কথাও নয়। যদি সম্ভব হয়, ইউ টিউবে তাঁর কয়েকটি জ্বালাময়ী ভাষণের ভিডিও দেখে নিন। তাহলে কিছুটা অন্তত আন্দাজ পাবেন। তখন আর এইসব উটকো গুজবে বিশ্বাস করতে মন সায় দেবে না।
আসলে, সংসদীয় গণতন্ত্রে যে খোলামেলা আড্ডার আবহ থাকে, সেটা অনেকেই অনভিজ্ঞতার কারণে বোঝেন না। বিভিন্ন দলের বিধায়করা একে অন্যের সঙ্গে কতখানি প্রাণ খুলে আড্ডা মারেন, এই দৃশ্যের সঙ্গে অনেকেই পরিচিত নন। তাই তাঁদের মনে হয়, কারও সঙ্গে কথা হলেই বুঝি দলবদল হয়ে গেল। এ নেহাতই অপরিণত সাংবাদিকতা। আর সোশাল মিডিয়ায় একবার কোনও বিষয় এসে গেলে তো কথাই নেই। সেখানে সবাই সবজান্তা। গুজবের ডালপালা মেলতে মেলতে কোথায় যে পৌঁছে যায়।
নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন, ভিক্টর কোথাও যাবেন না। ২০২১ এও ফরওয়ার্ড ব্লকের হয়েই লড়াই করবেন।