ধীমান সাহা
রাজীব কুমারের পর এবার মিডিয়া পড়েছে এসএমএইচ মির্জাকে নিয়ে। এই আইপিএস অফিসারকে নাকি এবার তলব করেছে সিবিআই। তাঁকে জেরা করা হলে নাকি অস্বস্তিতে পড়তে হবে তৃণমূলকে।
নারদা কাণ্ডে এই কীর্তিমান আইপিএস অন্যতম অভিযুক্ত। ভিডিও–তে একেবারে বারমুডা পরে খোশমেজাজে টাকা নিতে দেখা গেছে এই অফিসারকে। তখন তিনি বর্ধমানের পুলিশ সুপার। তিনি যে তৃণমূলের হয়ে টাকা তোলার ‘মহান’ দায়িত্ব পেয়েছেন, সে কথাও বেশ বুক ফুলিয়ে জানিয়েছিলেন এই কীর্তিমান আই পি এস।
ভিডিও–টি যে জাল নয়, তা এর মধ্যেই প্রমাণিত।
প্রশ্ন হল, এই মির্জাকে এত দেরিতে ডাকা হল কেন? তিন বছর পেরিয়ে গেল। এতদিন পর তাঁর কথা মনে পড়ল? এর জন্য দায়ী কারা? কেন আগে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? লোকসভার অনেক সদস্যকে দেখা গিয়েছিল হাত পেতে ম্যাথু স্যামুয়েলের কাছে টাকা নিতে। বিরোধীদের চাপে এথিক্স কমিটিও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তিন বছরে সেই এথিক্স কমিটি একটি বৈঠকও ডাকেনি। দায়িত্বে এই অবহেলার জন্য কেন তাঁদের বিরুদ্ধে প্রিভিলেজ মোশন আনা হবে না? কাদের আড়াল করতে চেয়েছিল এথিক্স কমিটি? কাদের আড়াল করতে চেয়েছিল সিবিআই?
রাজীব কুমারকে নিয়েও সেই একই ঘটনা। কেউ কেউ খুব উল্লসিত। এবার বোধ হয় তৃণমূলকে ‘টাইট’ দেওয়া যাবে। এবার সিবিআই কোমর বেঁধে নেমেছে। আবার সেই একই প্রশ্ন, এতদিন কার নির্দেশে সিবিআই ঘুমিয়ে ছিল। রাজীব কুমার–অর্ণব ঘোষরা যে সহযোগিতা করছেন না, এটা বুঝতে সিবিআই–এর পাঁচ বছর লেগে গেল? প্রমাণ লোপাট হয়েছে বুঝতে এত দিন? এঁরা করবেন তদন্ত?
এখনও বিশ্বাস করি, সিবিআই–এর যা দক্ষতা, তাতে এই তদন্ত সাতদিনের বেশি লাগার কথা নয়। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, সাত দিনে পুরো তদন্ত সম্ভব নয়। বেশ, আশি শতাংশ তো সম্ভব। তাহলে, পাঁচ বছরেও এই অশ্বডিম্ব প্রসব কেন? আসল কথা হল, সিবিআই তদন্ত ঠিকভাবে হোক, অনেকেই চাননি। কারা চাননি, বুঝতে কি খুব সমস্যা হচ্ছে? রাজ্যের শাসকদল যে চাইবে না, সে তো জানা কথা। সেই কারণেই সিবিআই আটকাতে সুপ্রিম কোর্টে ছুটে গিয়েছিল। সরকারের তরফে আইনজীবী নিয়োগ করে প্রতি পদে আটকানোর চেষ্টা। কিন্তু কেন্দ্রের শাসক দল কী করছিল? তাঁদের সদিচ্ছা ছিল না বলেই তদন্ত বারবার ধাক্কা খেয়েছে। সিবিআই–এর যে যে আধিকারিকরা দায়িত্বে, কেন তাঁদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হবে না। কেন তাঁদের কড়া তিরস্কার ও শাস্তি দেওয়া হবে না?
নারদা তদন্তের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। দিনের পর দিন সিবিআই–এর অপদার্থতাই সামনে এসেছে। কণ্ঠস্বর আসল কিনা বুঝতে তিন বছর লাগে? কাকে টুপি পরাচ্ছেন এই কর্তারা? কোর্ট সবকিছু জেনেবুঝেও নিশ্চুপ! মির্জাকে ডাকা হল। এই মির্জা কার নির্দেশে কাজ করতেন, সবাই জানে। মির্জা নিজেও সে কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর নামে যদি ফের অভিযোগ করেন, তাহলে তাঁকে ডাকা হবে তো? মির্জাকে কী কী কাজে লাগানো হয়েছিল, তা সামনে আসবে তো?
তদন্তের নামে বছরের পর বছর ধরে এই প্রহসন বন্ধ হোক। সিবিআই–এর যেখানে যেখানে গাফিলতি, তার কড়া তীরস্কার করা হোক। প্রয়োজনে কড়া শাস্তি দেওয়া হোক। তদন্তের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হোক। নইলে, আদালতও যাবতীয় দুর্নীতির দার্শনিক প্রশ্রয়দাতা হিসেবেই চিহ্নিত হবে।