রাজীবের নিষ্পত্তি পরে, আগে সিবিআই–‌কে ভর্ৎসনা করা হোক

রাজীব কুমার প্রমাণ লোপাট করেছেন, এটা বুঝতে সিবিআই–‌এর পাঁচ বছর লেগে গেল?‌ পাড়ার পল্টু যেটা পাঁচদিনে পারে, সেটা সিবিআই পাঁচ বছরেও পারে না!‌ রাজীব–‌অর্ণবকে নাকি আগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা আসেননি। এই স্পর্ধা তাঁদের হয় কী করে?‌ সিবিআই নিজেকে কোথায় টেনে নামিয়েছে, নিজেরাই ভেবে দেখুক। লিখেছেন রক্তিম মিত্র।

কয়েকদিন ধরেই ফের শিরোনামে রাজীব কুমার। তিনি কি আগাম জামিন পাবেন? তাঁকে কি গ্রেপ্তার করা হতে পারে?‌ তিনি কার কার নাম বলতে পারেন?‌ এসব নিয়ে নানা জল্পনা।
সিবিআই–‌এর দাবি, রাজীব কুমার তদন্তে অসহযোগিতা করেছেন। অনেকবার ডাকার পরেও তিনি আসেননি। প্রমাণ লোপাট করেছেন। সেই কারণেই তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা দরকার।

sarada2
সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল গত লোকসভা নির্বাচনের আগে। অর্থাৎ, পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। এই পাঁচ বছরে সিবিআই কী এমন করল?‌ যাঁকে সবার আগে জেরা করা উচিত, তাঁকে কিনা পাঁচ বছর পর হেফাজতে নেওয়ার ভাবনা?‌ এর আগেও তো অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মদন মিত্র, সৃঞ্জয় বসু, রজত মজুমদার, দেবব্রত সরকার, মাতঙ্গ সিং, গৌতম কুণ্ডু, কুণাল ঘোষ, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, তাপস পাল, শ্রীকান্ত মোহতা, সুমন চট্টোপাধ্যায়। ‌তালিকায় আরও কিছু নাম রয়েছে। এঁদের কতটুকু জেরা করা হয়েছে?‌ এঁদের অধিকাংশই দীর্ঘসময় হাসপাতালেই কাটিয়েছেন। সিবিআই যা যা জানতে পারত, তার পাঁচ শতাংশও জানার চেষ্টা করেনি। কুণাল ঘোষ জেলে থাকাকালীন দিনের পর দিন তদন্তে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে চেয়েছেন। সিবিআই গুরুত্বই দেয়নি। ভেবে দেখুন, একজন নিজে থেকে তথ্য দিতে চাইছেন, কিন্তু সিবিআই শুনতে চাইছে না। এরপর এই সিবিআই–‌এর ওপর আস্থা রাখা যায়!‌
সিবিআই আধিকারিকদের মেধা বা যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। তাঁরা চাইলে অনেককিছুই পারেন। টেলিফোন ট্যাপিং থেকে শুরু করে রেল বা বিমানের প্যাসেঞ্জার্স লিস্ট দেখা, কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট দেখা থেকে শুরু করে টাওয়ার লোকেশান দেখা, এমন অনেককিছুই সিবিআই করতে পারে। যাকে তাকে ডেকে পাঠাতে পারে, জেরা করতে পারে, গ্রেপ্তার করতে পারে। তারপরেও বলতেই হচ্ছে, সিবিআই অশ্বডিম্ব প্রসব করেছে। থানার এক কনস্টেবল সাতদিনে যতখানি তদন্ত করতে পারেন, এই সিবিআই কর্তারা পাঁচ বছরেও সেই জায়গায় পৌঁছতে পারেননি। গৌতম দেব তিনদিনের মাথায় যা যা তথ্য দিতে পারেন, পাঁচ বছর এত কাণ্ড করেও সিবিআই সেই জায়গায় পৌঁছতে পারেনি। এ কার ব্যর্থতা?‌

sarada
রাজীব কুমার, অর্ণব ঘোষদের নাকি বেশ কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা আসেননি। আদালতে এই যুক্তি তুলে ধরতে লজ্জা করছে না?‌ রাজীব কুমার বা অর্ণব ঘোষের এই স্পর্ধা হয় কী করে?‌ অনেকে বলবেন, তাঁদের মাথায় মুখ্যমন্ত্রীর হাত রয়েছে। সেই কারণেই তাঁরা সিবিআই–‌এর চিঠি উপেক্ষা করেছেন। সত্যি, তবে অর্ধেক সত্যি। আসলে, সিবিআই তদন্ত গত কয়েকবছরে যে ঢিমেতালে চলেছে, রাজীব কুমাররাও বুঝেছেন, এঁদের কোনও মুরোদ নেই। তাঁরা বুঝেছেন, এঁদের পাত্তা দেওয়ার কোনও দরকার নেই। হ্যাঁ, সিবিআই নিজেকে এই জায়গাতেই টেনে নামিয়েছে।
রাজীব কুমার, অর্ণব ঘোষরা যে প্রমাণ লোপাট করেছেন, এটা রাজ্যের একজন নিরক্ষরও জানেন। এই সহজ সত্যিটা সিবিআই–‌এর বোদ্ধাদের বুঝতে পাঁচ বছর লেগে গেল?‌ আর আদালতও দিনের পর হয়ে উঠেছে দার্শনিক প্রশ্রয়দাতা। দিনের পর দিন শুনানির তারিখ পিছিয়ে সেও নিজের গুরুত্ব অনেক কমিয়ে এনেছে। তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কবার তিরস্কার করা হয়েছে সিবিআই কর্তাদের?‌ যাঁরা এতদিন তদন্ত করলেন, কেন তাঁদের কৈফিয়ত তলব করা হবে না?‌ কার নির্দেশে মাঝে মাঝেই তদন্তের গতি থমকে যায়, কাদের অঙ্গুলি হেলনে আসল মাথারা দিনের পর দিন আড়ালে থাকে, তার তদন্ত হবে না?‌ সবকিছুই দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার। শুধু সিবিআই বা আদালত তা দেখতে পায় না।
রাজীব কুমারকে গ্রেপ্তার করা হবে কি হবে না, সে পরের কথা। কেন পাঁচ বছর পর তাঁকে গ্রেপ্তারের কথা ভাবতে হচ্ছে, সে জন্য আগে তিরস্কার করা হোক সিবিআই–‌কে। হ্যাঁ, এই তীব্র ভর্ৎসনাই তাঁদের প্রাপ্য। তদন্তের নামে বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখা নয়। তদন্তের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হোক। সেইসঙ্গে বিচারের নামেও যেন বছরের পর বছর ঝুলে না থাকে। আদালত নিজের জন্যও এবার সময়সীমা বাঁধুক। নইলে সিবিআই–‌এর মতোই আদালতের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও জোরালো প্রশ্ন উঠবে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.