এভাবে কতদিন আটকে রাখা যাবে শুভেন্দুকে?‌

অজয় কুমার

আবার মন্ত্রিসভার রদবদল। কারও দায়িত্ব বাড়ল। কারও কমল। কেউ কেউ আবার দপ্তরবিহীন মন্ত্রী। শাস্তি?‌ নাকি ভবিষ্যতে অন্য কোনও দপ্তর দেওয়া হবে, তা নেত্রীই জানেন।
আপাতভাবে দায়িত্ব বাড়ল শুভেন্দু অধিকারীর। ছিলেন পরিবহণ মন্ত্রী। সঙ্গে যোগ হল সেচ ও জলসম্পদ উন্নয়ন। সাংগঠনিক দায়িত্ব তো আগেই বাড়ানো হয়েছিল। প্রশ্ন হল, শুভেন্দুর গুরুত্ব এত বাড়ল কেন?‌
গত কয়েক বছর ধরে বিজেপি শিবিরের গুঞ্জন শুনুন। এমনকী তৃণমূল শিবিরের গুঞ্জন শুনুন। কে বিজেপিতে যেতে পারেন, এমন আলোচনা তো নতুন নয়। পাঁচ বছর ধরেই চলছে। সেই তালিকায় বারেবারেই উঠে আসে শুভেন্দুর নাম। বিজেপি শিবিরও বিশ্বাস করে, মোক্ষম সময়ে শুভেন্দু ঠিক আসবেন। আবার তৃণমূল শিবিরেও এই ধারণা বেশ জোরালো যে, যে কোনও সময়েই এই তরুণ তুর্কি কেটে পড়বেন।
এমন জল্পনার কথা আমি–‌আপনি জানি। আর খোদ মুখ্যমন্ত্রী জানেন না?‌ তিনিও খুব একটা বিশ্বাস করেন না পূর্ব মেদিনীপুরের এই নেতাটিকে। তিনিও জানেন, আগামীদিনে তাঁর বড় প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারেন এই শুভেন্দুই। কিন্তু এখন এমনই অবস্থা, তাঁকে গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই।
আচ্ছা, শুভেন্দু তো তমলুকের সাংসদ ছিলেন। সেখান থেকে হঠাৎ তাঁকে বিধায়ক করা হল কেন?‌ হঠাৎ নন্দীগ্রামে দাঁড় করানো হল কেন?‌ রাজ্য মন্ত্রীসভায় আনার জন্য?‌ একেবারেই না। আসলে, শোনা যায়, সাংসদ থাকাকালীন বিজেপি শিবিরের সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল। কবে যোগ দিচ্ছেন, এই নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। শুভেন্দু গেলে, আরও অনেকেই যেতে পারেন, এমন মর্মে কথাও হয়েছিল। কিন্তু তখন অবস্থা অনুকূল ছিল না। তাছাড়া, অধিকারী পরিবারকে নেওয়ার ব্যাপারে রাজ্য বিজেপিতেও কিছুটা অনীহা ছিল। রাহুল সিনহা অ্যান্ড কোং হয়ত ভেবেছিলেন, শুভেন্দু এসে গেলে তাঁদের গুরুত্ব থাকবে না। সেই কারণে সাধ্যমতো বাগড়াও দিয়েছিলেন।
এইসব জল্পনার কথা মুখ্যমন্ত্রীর অজানা থাকার কথা নয়। তিনি হয়ত আরও কয়েক ধাপ বেশিই জানেন। তাই দিল্লির সব কানেকশান কাটার জন্যই বিধানসভায় আনা। একের পর এক দায়িত্ব দেওয়া। গত কয়েকবছর ধরেই মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুরে যাতায়াত করেছেন। বিরোধী শিবিরে একের পর এক ভাঙন ধরিয়েছেন। আজ একে, কাল তাকে পতাকা তুলে দিয়েছেন। তিনটি জেলা পরিষদই তৃণমূলের দখলে এনে দিয়েছেন।
এই পর্যন্ত বেশ সফল। কিন্তু এবারের লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ জেলা ছাড়া বাকি দুই জেলায় তাঁকে ব্যর্থই বলতে হবে। জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদে তৃণমূল জিতেছে। কোনও সন্দেহ নেই, বেশ বড় সাফল্য। বহরমপুরেও ভাল লড়াই দিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু মালদার দুটি আসন, রায়গঞ্জে হারতে হয়েছে। এমনিতে এই দুটি আসনে তৃণমূল সাংগঠনিকভাবে তেমন শক্তিশালী নয়। কিন্তু যেখানে একতরফা জেলা পরিষদ দখল হয়, সেখানে লোকসভায় জয় আসবে, সেটা তো প্রত্যাশিত। কিন্তু জয় আসেনি। তাই এই দুই জেলার ক্ষেত্রে তাঁকে ব্যর্থই বলতে হবে।

subhendu
তবু তাঁর সংগঠনিক দায়িত্ব বাড়ানো হল। মন্ত্রিসভায় আরও দুই দপ্তর দেওয়া হল। কিন্তু এভাবে দায়িত্ব বাড়িয়েই কি তাঁকে বেঁধে রাখা যাবে?‌ বিজেপি শিবিরে একটা গুঞ্জন হামেশাই শোনা যায়, জয় তো এল, কিন্তু মুখ কোথায়?‌ এই মুখ নিয়ে কি বিধানসভায় লড়াই দেওয়া যাবে?‌ অর্থাৎ, একটা জোরালো মুখ দরকার। সেই মুখ তো ভিনরাজ্য থেকে আসবে না। আকাশ থেকেও পড়বে না। আবার মুকুল রায়ও নিজেকে মুখ হিসেবে তুলে ধরবেন না। তিনি সম্ভবত আড়ালেই থাকতে চাইবেন। সেক্ষেত্রে মুখ কে হতে পারেন?‌ শুভেন্দু ছাড়া আর কেই বা আছেন?‌ মুখ্যমন্ত্রীত্বের টোপ এলে, জয় নিশ্চিত থাকলে শুভেন্দুও ঝাঁপাতে খুব একটা দ্বিধা দেখাবেন বলে মনে হয় না।
আপাতভাবে ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য মনে হতেই পারে। কিন্তু মুকুল রায় কখনও তৃণমূলের প্রধান শত্রু হয়ে পড়বেন, এমনটা কেউ ভেবেছিলেন?‌ ঠিক তেমনি শুভেন্দুর বিজেপিতে যাওয়া আজকে বিশ্বাসযোগ্য মনে না হলেও আগামীদিনে এটাই হয়ত বাস্তবতা। সেই কারণেই তাঁর হাতে আরও দুটো দপ্তর গুঁজে দেওয়া হল। যে হারে ভাঙন শুরু হয়েছে, কোথায় গিয়ে থামবে, কে জানে!‌ পুলিশ দিয়ে কতদিন ঠেকিয়ে রাখা যাবে, বলা মুশকিল। পুরসভা ভোটের আগেই হয়ত তাসের ঘরের মতো ভাঙবে। তারপর এমন এমন নাম সামনে আসবে, যা হয়ত ভাবাও যাচ্ছে না। কে বলতে পারে, সবথেকে বড় চমক শুভেন্দু হবেন না!‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.