শেষের শুরু, এবার তাসের ঘরের মতোই ভাঙবে তৃণমূল

অজয় কুমার

রাজ্যের নির্বাচনী ফলে অনেকেই অবাক হচ্ছেন। কিন্তু আমি এতটুকুও অবাক হচ্ছি না। এটাই তো হওয়ার ছিল। বরং, তৃণমূলের ফল আরও খারাপ হতে পারত।
সাইবেরিয়ায় থাকলে মনে হয়, সারা পৃথিবীই বোধ হয় বরফে ঢাকা। বাংলা কাগজ পড়লেও মনে হতেই পারে, রাজ্যে বিরোধী বলে কিছু নেই। কিন্তু গ্রাম বাংলা সম্পর্কে যাঁদের সামান্য ধারনা আছে, তাঁরা জানেন, তৃণমূল কতটা কোণঠাসা হয়ে গেছে। অধিকাংশ ব্লকে কার্যত পুলিশের ভরসাতেই রাজনীতি করছে তৃণমূল। পুলিশ না থাকলে তাঁরা সত্যিই বড় অসহায়।
অনেকে ভাবছেন, এটা বোধ হয় বিজেপির বিরাট সাফল্য। আসলে তা নয়। এটা তৃণমূল বিরোধী ভোটের সমাহার। যে কোনও কারণেই হোক, তাঁরা বামেদের প্রতি সেই আস্থা রাখতে পারেননি। তাঁরা মনে করেছেন, এই অবস্থায় তৃণমূলকে ধাক্কা দিতে পারলে বিজেপিই পারবে। সেই ভাবনা থেকেই বিভিন্ন এলাকায় তাঁরা বিজেপিকে বেছে নিয়েছেন। যে বিজেপি প্রার্থীকে কেউ চেনে না, তিনিও তিন লাখ, চার লাখ ভোট পেয়ে গেছেন।

vote
কার ভোট কোথায় গেল, সেই তর্ক আপাতত থাক। এই সব ভোট যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে, তা নিয়ে কোনও তর্ক থাকার কথা নয়। সাত দফার ভোটেই দেখা গেছে, ভোটের নামে কী অরাজকতা চলছে। যেখানে যেখানে বাহিনী নেই, সেখানে শাসকদল কী পরিমাণ তাণ্ডব করেছে, নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে সবাই জানেন। পঞ্চায়েতের মতো অবাধ ছাপ্পা হয়ত হয়নি। কিন্তু কোথাও কোথাও তো হয়েছেই। বিশেষ করে ভাইপোর কেন্দ্রে। ডায়মন্ড হারবারের সাতটি বিধানসভায় কীভাবে ভোট হয়েছে, একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন। দেব জিতেছেন মূলত কেশপুরের ভরসায়। মিমি জিতেছেন মূলত ভাঙড়ের ৯২ হাজার লিডের জন্য। এগুলি মোটেই গর্বের পরিসংখ্যান নয়।
যদি ঠিকঠাক ভোট হত, তৃণমূল আরও অন্তত চারটি আসন হারাত। সেক্ষেত্রে তৃণমূল নেমে যেত ১৭–‌১৮ তে। আর বিজেপি পৌঁছে যেত ২২–‌২৩ এ। সেটা যে হয়নি, তার জন্য গুন্ডাবাহিনী আর লেজুড় প্রশাসনের কাছেই কৃতজ্ঞ থাকতে হবে নেত্রীকে। না, এই ফলে একেবারেই অবাক হচ্ছি না। এটাই হওয়ার ছিল। এই ধাক্কাটা খুবই জরুরি ছিল।
ভেবে দেখুন, ২০০৯ সালে তৃণমূল পেয়েছিল ১৯ আসন। তাতেই বিজয়োৎসব করেছিল। আর এবার ২২ আসন পেয়েও কার্যত শোকপালন করতে হচ্ছে। গ্রাফটা যে নামছে, তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। কোথাও পুরসভা ভোট করানোর সাহস দেখাচ্ছে না শাসক দল। কারণ, ভোট করালেই অধিকাংশ পুরসভায় গো হারান হারতে হবে। দলের কাউন্সিলরদের অনেকেই নাম লেখাবেন বিজেপিতে। যত দিন যাবে, ক্রমশ করুন হবে তৃণমূলের পরিস্থিতি। শেষের বাজনা বেজেই গেছে। পুলিশ দিয়ে এই ঘৃণা আটকানো যাবে না।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.