সমীক্ষার এপিঠ–‌ওপিঠ

নির্মল দত্ত

এক্সিট পোল নিয়ে চারিদিকে খুব আলোচনা। কতটা সত্যি, কতটা মিলবে, তা নিয়ে চায়ের দোকান থেকে অফিস, রান্নাঘর থেকে বাস, সর্বত্রই জোর চর্চা। অনেকে তো এক্সিট পোলের জয়ী প্রার্থীকে আগাম অভিনন্দনও জানিয়ে রাখছেন। যিনি পিছিয়ে, তিনিও ভাবছেন, কী জানি, সত্যি হতেও পারে। লোকে মুখে বলছেন, একে ধ্রব সত্যি ভাবার কারণ নেই। কিন্তু কোথাও একটা বিশ্বাসও করছেন।

বেঙ্গল টাইমসের ওপেন ফোরামে নিজের মতামত তুলে ধরছি। প্রথমেই আসি দেশের ব্যাপারে। বিজেপি কি একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেতে পারে?‌ এক্সিট পোল যাই বলুক, এখনও বিশ্বাস হয় না। ২০০ পেরোবে নিশ্চিত, কিন্তু ২৫০ পেরিয়ে যাবে বলে মনে হয় না। আসলে, অধিকাংশ সর্বভারতীয় মিডিয়া গত পাঁচ বছর ধরে কতটা বিজেপির দিকে হেলে ছিল, সেটা আমাদের অজানা নয়। তাদের মালিক কারা, সেটাও জানা। ফলে, তাদের বাধ্যবাধকতা বোঝা যায়। যতক্ষণ সরকার থাকবে, তাদের সরকারের পাশেই থাকতে হবে। আমার মন বলছে, বিজেপির আসন আড়াইশোর নিচেই থাকবে। দেখা যাক!‌

রাজ্যের কথায় আসি। বামেদের মোটামুটি সবাই শূন্য দিয়ে বসে আছে। যেভাবে ভোটের মেরুকরণ হয়েছে, অনেকেই এটা বিশ্বাস করছেন। কিন্তু আমার মনে হয়, বামেরা ২–‌৩ টি আসন পেতে পারে। আসনগুলি হল যাদবপুর, জঙ্গিপুর, দমদম, রায়গঞ্জ, এবং অবিশ্বাস্য হলেও ডায়মন্ড হারবার। হয়ত মিলবে না। কিন্তু নিজের ভাবনার কথাটা বেঙ্গল টাইমসে নথিবদ্ধ রাখলাম।

বিজেপি কটা আসন পাবে?‌ কেউ দেখাচ্ছে ৫। আবার কারও সমীক্ষায় কুড়ি ছাপিয়ে যাচ্ছে। তবে, কয়েকটা আসন ঠিক বিশ্বাসযোগ্য মনে হল না। যেমন, আরামবাগ, বিষ্ণুপুর, হুগলি। এগুলো যদি জেতে, তাহলে বিজেপি কোনওভাবেই ১৬ তে আটকে থাকবে না। সেক্ষেত্রে ২৫ ছাপিয়ে যাবে। আবার ব্যারাকপুর, আসানসোল, কৃষ্ণনগরে বিজেপি হারছে, এমনটা দেখানো হয়েছে। এটাও ঠিক বিশ্বাসযোগ্য নয়। এইসব আসন যদি হারে, তাহলে বিজেপি দশের নিচেই থাকবে।

exit poll

অনেক চ্যানেল পড়েছে মহা সমস্যায়। তাদের আবার দু জায়গায় টিকি বাঁধা। যেমন, নিউজ ১৮। মুকেশ আম্বানির চ্যানেল। কেন্দ্রে দেখাতে হবে, মোদি ক্ষমতায় আসছেন। আবার রাজ্যে তৃণমূলকে এগিয়ে রাখতে হবে। এখানে বিজেপিকে বেশি দেখালে দিদিমণি রেগে যাবেন। ফলে, বিজেপিকে দেওয়া হল ৫। ফলে, সেখানকার সমীক্ষায় তৃণমূলের আসন বাড়ছে।

ধরা যাক, সমীক্ষায় দেখা গেল, ডায়মন্ড হারবারে জনৈক ভাইপো হারছেন। কারও সেই সমীক্ষা দেখানোর হিম্মৎ আছে?‌ সেই চ্যানেল আর এই বাংলায় চলবে?‌ রেজাল্টের আগেই একদফা ভাঙচুর হয়ে যেত। আর ডায়মন্ড হারবারে তৃণমূল হারছে দেখানোর পর যদি জিতে যায়, তাহলে কী কী হতে পারে, সহজেই অনুমেয়।

তাই, এই বাংলায় নির্ভুল সমীক্ষা কার্যত সম্ভব নয়। তবু কতটা মেলে, সেদিকে তাকিয়ে থাকতেই হবে। তবে মন বলছে, তৃণমূলের জন্য সাঙ্ঘাতিক খারাপ ফল অপেক্ষা করছে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.