তৃণমূল পনেরোর নিচে নামলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই

ধীমান দাশগুপ্ত

ফলাফলের আগেই যেন ফলাফল বেরিয়ে গেল। কে কোথায় কতগুলো আসন পেতে পারে, সেই হিসেব আগাম জানিয়ে দিল চ্যানেলগুলি। কতটা মিলতে পারে এই সমীক্ষা?‌ সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপট ছেড়ে দিয়ে আপাতত বাংলা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

এক দুটি চ্যানেল ছাড়া অধিকাংশ চ্যানেলই বিজেপিকে দশটির বেশি আসন দিয়েছে। নিয়েলসন দিয়েছে ১৬ টি। ২০১৬ ছাড়া গত কয়েক বছরে বাংলার ভোটের ক্ষেত্রে নিয়েলসনের সমীক্ষা মোটামুটি মিলেছে। তাই এবারও তাঁদের সমীক্ষা নিয়েই আলোচনা বেশি। সত্যিই কি ১৬ টি আসন পেতে পারে বিজেপি?‌ যে বিজেপি আগের লোকসভায় মাত্র ২ টি আসন জিতেছিল, তারা একলাফে কীভাবে ১৬ পেতে পারে, তা নিয়ে অনেকেরই বিস্ময়। কিন্তু এই কলমচির মনে হচ্ছে, ১৬ কেন, হয়ত আরও বেশি আসনও পেতে পারে বিজেপি।

২ থেকে ১৬ তে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ২০০৪ এ তৃণমূল পেয়েছিল একটি মাত্র আসন। সেখান থেকে পাঁচ বছরের মাথায় ১৯ হয়েছিল। আর বিজেপির ক্ষেত্রে তো ২ থেকে ৮৮ হওয়ার নজিরও আছে (‌১৯৮৪–‌৮৯)‌। তবে, যদি কেউ ভেবে বসেন যে বিজেপি সাংগঠনিকভাবে দারুণ শক্তিশালী হয়ে গেল, তাহলে ভুল করবেন। প্রবল তৃণমূল বিরোধী হাওয়া বইছে গোটা রাজ্যজুড়ে। আপাতত তার বড় একটা অংশ গেছে বিজেপির বাক্সে। সেই ভোটের মধ্যে বাম থেকে যাওয়া ভোট যেমন আছে, তেমনি তৃণমূল থেকে আসা ভোটও কম নেই।

exit poll

আসল কথা হল, নেত্রী চেয়েইছিলেন বিজেপির ভোটের অঙ্কটা বাড়ুক। একদিকে বামেদের প্রায় ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে, বিজেপি ১১ শতাংশ। তৃণমূল বিরোধী ভোটের একটা ব্যালান্স তো করতেই হত। কিছু বাম ভোটকে যদি বিজেপির দিকে পাঠানো যায়!‌ তাই বিজেপিকে প্রাসঙ্গিক রাখো। বুঝিয়ে দাও, লড়াইটা তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির। সঙ্গে তাঁবেদার মিডিয়া তো আছেই। তারাও দ্বিমুখী লড়াইয়ের আবহ তৈরি করতেই ব্যস্ত। মানুষের বিভ্রান্ত হওয়াই স্বাভাবিক। অনেকেই ভেবেছেন, তৃণমূলকে জব্দ যদি কেউ করতে পারে, বিজেপিই পারবে। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে অনেক বামমনস্ক মানুষই ভোট দিয়েছে বিজেপিকে। এটাই তো চেয়েছিলেন নেত্রী।

আর সেটাই কাল হল। যখনই বিজেপি ২৫ শতাংশের গন্ডি টপকে গেল, অমনি পাড়ায় পাড়ায় তৃণমূলের অনেকে ভেবে নিলেন, বিজেপিকেই দেওয়া দরকার। সেখান থেকেও আট–‌দশ শতাংশ ভিড়ে গেল বিজেপির দিকে। নেত্রী ১১ শতাংশকে বাড়িয়ে হয়ত ২০–‌২২ শতাংশে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এতটাই বেড়ে গেল, আর নিয়ন্ত্রণ রইল না। সেটা ৩০ শতাংশ ছাপিয়ে গেল। সুদূর উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ— সর্বত্রই যেন এক সুর। তৃণমূল–‌বিরোধী রাগ, ঘৃণা চরমে উঠল। তার সুফল পেল বিজেপি। সেই কারণেই বিজেপির এই ১৬ আসন অসম্ভব মনে হচ্ছে না। বরং, এটা আরও বেড়ে যেতেই পারে। তৃণমূল যদি শেষমেষ ১৫ আসনে নেমে যায়, তাও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.