ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
vandalise করা কদাচ উচিত নয়।
কোনও প্রতিষ্ঠানে ঢুকিয়া ভাঙচুর করিলে vandalise করা হয়। vandalise করা বড় দোষ। যে vandalise করে, তাহাকে vandal বলা হয়। vandal কে কেহ ভালবাসে না। vandalise করিয়া নির্বাচনে ভোট চাহিতে গেলে, অথবা vandal দের ভোট দিলে, দুর্গতির সীমা থাকে না। নেতাদিগের উচিত, কখনও vandalise না করা। ভোটারদিগের কর্তব্য, নেতা প্রভৃতিকে vandalise করিতে দেখিলে তাহাদের ভোট না দেওয়া। এবং vandalise করিলে কী দোষ হয়, তাহাদিগকে ভাল করিয়া সমঝাইয়া দেওয়া।
একদা এক নেত্রী লোকসভায় স্পিকারের মুখে কাগজ ছুড়িয়ে মারিয়াছিলেন। ওই নেত্রীর ভক্ত ভোটারগণ এই কাজ দেখিয়াও কিছু বলিলেন না। ইহাতে ওই নেত্রীর সাহস বাড়িয়া গেল। একদিন তিনি তাঁহার দলের অপরাপর vandal দের সহিত বিধানসভায় ঢুকিয়া vandalise করিল। তথাপি তাঁহার ভক্ত ভোটাররা তাঁহাকে ভোট দিয়া ক্ষমতায় আনিল। ক্ষমতায় আসিয়া তাঁহার দলবল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, অধ্যাপকদিগকে মারিতে লাগিল। হিন্দু কলেজের গবেষণাগারে তাহারা ভাঙচুর করিল। সকলেই জানিতে পারিল, নেত্রী vandal দের বড় নেত্রী হইয়া উঠিয়াছেন।
কিছুকাল পরে আরেকদল vandal আসিল। তাহারা লেনিনের মূর্তি, সুকান্তর মূর্তি ভাঙচুর করিতে লাগিল। এতদ সত্ত্বেও ভোটারদের মধ্যে তাহাদের জনপ্রিয়তা বাড়িতে লাগিল। ক্রমে ক্রমে তাহাদেরও সাহস বাড়িতে লাগিল। ভাবিল, তাহারাও vandalise করিয়া ক্ষমতায় আসিবে। একদিন তাহারা সদলবলে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চড়াও হইল। বিদ্যাসাগর কলেজে ঢুকিয়া বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুর করিল।
তখন ভোটারদের চৈতন্য হইল। ভোটাররা ভাবিল, নিজ কানে নিজে কামড় দেওয়া যায় না। নইলে দাঁত দিয়া নিজ কান কাটিয়া লইতাম। তখন সকলে বুঝিত জাতি হিসেবে আমরা কতটা দু কান কাটা বেহায়া।
তাহারা আরও ভাবিল, হায়, যাহারা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙিল, তাহাদের সহিত দফায় দফায় জোট ছিল, ইহা জানিয়াও আমরা vandal দের নেত্রীকে ভোট দিয়াছি। বিধানসভায় ভাঙচুরের কথা জানিয়াও ইহাকে ক্ষমতায় আনিয়াছি। সেসময় যদি ইহাকে শাসন ও নিবারণ করিতাম, যদি ত্রিপুরায় মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদ করিতাম, তাহা হইলে আজ এ দশা ঘটিত না। তাহা করি নাই। এজন্য আমাদের এই পুরস্কার হইল।