সেই কফিহাউসেই শুটিং করেছিলেন মান্না দে!‌

মান্না দে-কে নিয়ে সিনেমা। তাতে অভিনয় করছেন স্বয়ং মান্না দে ! কফিহাউসে বসে গাইলেন অমরত্ব পাওয়া সেই গান। শুটিংয়ের টুকরো টুকরো নানা মুহূর্ত তুলে ধরলেন পরিচালক সুদেষ্ণা রায়। জন্মদিনে কিংবদন্তি শিল্পীর প্রতি বেঙ্গল টাইমসের শ্রদ্ধার্ঘ্য।।

ঠিক কতটা পথ পেরোলে একজন শিল্পী লেজেন্ড হয়ে উঠতে পারেন ? দশকের পর দশক, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যখন কারও শিল্পকীর্তি সম্মোহিত করে রাখে একটা জাতির মন, যখন সমস্ত আনন্দ উৎসবে ফিরে ফিরে আসে তাঁর সৃষ্টি, যখন হৃদয় বিষণ্ণ করা মুহুর্তে মনে পড়ে তাঁর শিল্প বোধহয় ঠিক তখনই । আর তাই মান্না দে শুধু সঙ্গীত শিল্পী নন একজন কিংবদন্তী। পদ্মভূষণ, দাদা সাহেব ফালকে এগুলো তো শুধুমাত্র তাঁর মুকুটে এক একটা বাড়তি পালক যোগ করেছে মাত্র।
manna dey3 (coffie house)

একজন কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী হওয়ার পাশাপাশি তিনি বাঙালির হৃদয়ের বড়ই কাছের মানুষ। তাই বারবার তাঁর গুণমুগ্ধ শ্রোতারা তাঁর গানের বাইরে গিয়েও জানতে চেয়েছে তাদের প্রিয় শিল্পীকে। চিনতে চেয়েছে শিল্পীর ভেতরের মানুষটাকে। খুঁজে বার করতে চেয়েছে তাঁর আরো অনেক অনেক নতুন দিক। এমনই একটা চাওয়া থেকে তৈরি টেলিফিল্ম ‘পাগল তোমার জন্য যে’।

মান্না দে কে নিয়ে ছবি তৈরি করা। পরিচালক সুদেষ্ণা রায় এবং অভিজিৎ গুহর কাছে প্রস্তাবটা আসে বিশু চক্রবর্তীর কাছ থেকে। তিনি জানান ছবিটি প্রডিউস করবেন বিশু চক্রবর্তী নিজেই । কিন্তু মান্না দার অটোবায়োগ্রাফি নয়, তিনি চান ছবির গল্প এমন হবে যা মান্নাদা কে কেন্দ্র করে ঘটবে, এবং শিল্পী নিজে অভিনয় করবেন সেই ছবিতে, নিজের নাম ভুমিকায়। সুদেষ্ণা রায়ের স্মৃতিতে আজও সব টাটকা, যেন সেদিনের কথা। সবার ভাবনা ছিল একটাই, মান্নাদা রাজি হবেন তো ? তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সময় দিলেন ২৫ ডিসেম্বর। সেই মতো স্ক্রিপ্টও তৈরি হল। কিন্তু সাক্ষাতের আগেরদিন স্ক্রিপ্ট দেখে মাথায় হাত দুই পরিচালকের। কারণ এই স্ক্রিপ্ট মান্না দা’র পছন্দ হবে না। তাই সারারাত জেগে নতুন করে স্ক্রিপ্ট লিখলেন সুদেষ্ণা। আর ২৫ডিসেম্বর সেই স্ক্রিপ্ট শুনে এতটাই আপ্লুত হয়েছিলেন মান্না দে যে, আবেগে জড়িয়ে ধরেছিলেন সন্তানসম পরিচালককে। জানুয়ারির শুরুতেই ডেট ঠিক হল। মান্না দে অভিনয় করলেন। তৈরি হল ‘পাগল তোমার জন্য’।

কেন্দ্রীয় চরিত্রে অনাদি সেন। গায়কের এক পাগল ভক্ত, যাঁর জীবনের সবকিছুতেই জুড়ে মান্না দে। অনাদির, তাঁর প্রিয় শিল্পীর কাছে পৌঁছনো এবং তাঁর উদার মনের সাক্ষী হওয়া গল্পই ছবির বিষয়। এই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন খরাজ মুখোপাধ্যায়। অন্যান্য ভূমিকায় ছিলেন মৌমিতা চক্রবর্তী, দ্বিজেন বন্দোপাধ্যায়, তনিমা সেন,, যীশু সেনগুপ্ত,পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতারা।

এই ছবিটা তৈরি করার সময়ই খুব কাছ থেকে মান্না দে কে দেখেছিলেন পরিচালক সুদেষ্ণা রায়। দেখেছিলেন মাটির কতটা কাছাকাছি ছিলেন এই তারকা। কফি হাউসে বসে আবার গাইলেন “কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই”। শট দেওয়ার পর উপস্থিত জনতার আবদার ট্র্যাকে নয় তাঁর নিজের গলায় আবার শোনাতে হবে ‘কফি হাউস’। হাসি মুখে রাখলেন সেই অনুরোধ।

সেই পরিচালক জুটি। সুদেষ্ণা- অভিজিৎ।।

সেই পরিচালক জুটি। সুদেষ্ণা- অভিজিৎ।।

স্প্যাস্টিক সোসাইটিতে যখন একজন সেরিব্রাল পলজি বাচ্চা তাঁর গান গাইল, তাকে দেখে কষ্টে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিল্পী। এতটাই আবেগপ্রবণ ছিলেন মান্না দে। আবার ‘আমি শ্রী শ্রী ভজহরী মান্না’ গানটার সঙ্গে লিপ দেবেন, কিছুতেই ঠিক হচ্ছে না শটটা। শেষে সহপরিচালক রাজীব কুমার রীতিমত শিক্ষকের মতো বুঝিয়ে দিলেন কীভাবে গানের সঙ্গে ঠোঁট মেলাতে হবে। অশীতিপর গায়কের পক্ষে নিজের গানেই লিপ দেওয়া কাজটা যথেষ্ট কঠিন সন্দেহ নেই। তবু চ্যালেঞ্জটা কিন্তু নিয়েছিলেন মান্না দে।

এমন আরও কত স্মৃতি জড়িয়ে ছবিটার সঙ্গে। ২০০০ সালের ১ মে মান্না দে’র জন্মদিনে দূরদর্শনে প্রথমবার দেখানো হয় টেলিফিল্মটি।পরিচালকের আফশোস, ছবিটির কোনও কপি নেই তাঁর কাছে। একটিই ক্যাসেট যা আছে দুরদর্শনের সংগ্রহে। কারণ তখনও ডি ভি ডি বা সি ডি তে ছবি সংগ্রহের চল ছিল না। তবে স্মৃতিগুলি রয়ে গেছে আজও। রয়েও যাবে চিরকাল মনের মণিকোঠায়।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.