ধীমান সাহা
কোনও এক পিসির কোনও এক ভাইপোর একমাত্র স্ত্রী। অভিযোগ, তিনি ব্যাঙ্কক থেকে ফেরার সময় তাঁর ব্যাগে অনেক আপত্তিকর জিনিস ছিল। অভিযোগ, শুল্ক দপ্তরের আধিকারিকরা তাঁর ব্যাগ দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে অস্বীকার করেন। অভিযোগ, রাজ্য পুলিশ গিয়ে শুল্ক দপ্তরের কর্তাদের হুমকি দেন। এবং ভাইপোর স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শুরুতে ব্যাপারটা ততটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। ভোটের আগে এমন কত কথাই তো উড়ে বেড়ায়। না প্রিন্ট না ইলেকট্রনিক, কোনও মিডিয়াতেই বিষয়টা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য ছিল না। কিন্তু জনৈক ভাইপো সাংবাদিক সম্মেলনে কার্যত মেনেই নিলেন, কিছু একটা হয়েছিল। ভাইপোকে খুশি করতে কাগজেও ছাপতে হল। টিভিতেও দেখাতে হল। যাঁরা জানতেন না, তাঁরাও জেনে গেলেন।
সুজন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেওয়া হল। উকিলের চিঠি পাঠানো হল। সুজনও পাল্টা বললেন, হ্যাঁ, মামলা করুন। কোর্টেই ফয়সালা হবে। জানাই ছিল, ভাইপো মামলা করার সৎসাহস দেখাবেন না। সেটাই হল। শুল্ক দপ্তর বিলম্বিত এফআইআর করল। সেই মহিলাও অভিযোগ জানালেন, তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছে। আদালত প্রথমে বলল, শুল্ক দপ্তরের সামনে হাজিরা দিতে হবে। যাওয়া হল ডিভিশন বেঞ্চে। তাঁরা জানালেন, আগামী তিন মাস হাজিরা দিতে হবে না। ২৬ জুলাই হাজির হলেই হবে।
এই রায় নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠতেই পারে। একদিকে বিচারপতিরা শুল্ক দপ্তরের কাছে জানতে চাইলেন, ঘটনার সাতদিন পর এফ আই আর করা হল কেন? নায্য প্রশ্ন। সত্যিই তো, শুল্ক দপ্তর সাতদিন দেরি করল কেন? কিন্তু এরপরই পাল্টা প্রশ্ন তোলা যায়, তাহলে বিচারপতিরা হাজিরা তিন মাস পিছিয়ে দিলেন কেন? দেরিতে হলেও শুল্ক দপ্তর যে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছিল, আদালত তাকে পিছিয়ে দিল কেন? এই তিনমাসে অনেক প্রমাণ লোপাট করা সম্ভব, এই তিন মাসে অনেক ফাকফোকর ভরাট করা সম্ভব। আদালত কি সেই সুযোগটাই দিতে চাইলেন?
পুলিশ অনেক আগেই আস্থা হারিয়েছে। মূলস্রোত মিডিয়াও প্রতিদিন নিজেদের হাস্যকর করে তুলছে। তাঁদের প্রতিও সচেতন নাগরিকদের তেমন আস্থা নেই। যাঁরা বিরুদ্ধে মারাত্মক সব অভিযোগ, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে এত আপত্তি কীসের? যিনি অভিযুক্ত, তিনি হাজিরা এড়াতে চাইবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আদালত কিন্তু এই দাবিতে সিলমোহর দিল? ভোটের আগে শাসক দল বিপাকে পড়ুক, এমনটা শাসক দল বা প্রশাসন চাইবে না, সেটাও স্বাভাবিক। কিন্তু আদালত যখন এমন গুরুতর অভিযোগের পরও তিন মাস বিলম্বিত করতে চাইল, তখন নানা প্রশ্ন উঠবেই। বিচারপতিরা কি চাইছেন, তাঁদেরও মানুষ যেন অবিশ্বাস করতে শুরু করে! কেউ কেউ বলতেই পারেন, প্রভাবশালীদের প্রভাব হয়ত বিচার বিভাগকেও নিয়ন্ত্রণ করছে। এমন প্রশ্ন যদি উঠে থাকে, তবে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিরাই সেই প্রশ্ন তুলে দিলেন।
(ওপেন ফোরাম। পাঠকের মুক্ত মঞ্চ। এখানে নানা বিতর্ক, নানা প্রশ্ন উঠে আসে, যা মূলস্রোত মিডিয়া এড়িয়ে যায়। তেমনই একটি অপ্রিয় প্রসঙ্গ নিয়ে এই লেখা। মতামত সম্পূর্ণ লেখকের। চাইলে, আপনিও নানা বিষয়ে নিজের খোলামেলা মনোভাব তুলে ধরতে পারেন। )