কুন্তল আচার্য
বর্তমানের ভূত তো প্রায় রোজ দেখছি। ‘ভবিষ্যতের ভূত’ও দেখে এলাম। এতদিন পরে ফিল্ম রিভিউ লেখার কোনও মানে হয় না। তবে, বেঙ্গল টাইমসের পাঠকদের জন্য নিজের কিছু অনুভূতি মেলে ধরছি।
১) প্রথমেই বলি, এই ছবি বানাতে সাহস লাগে। খুব উচ্চ মার্গের ছবি, এমন নয়। কয়েক বছর পর এই ছবি দেখলে হয়ত প্রাসঙ্গিকতা থাকবে না। যাঁরা রাজনীতির খুঁটিনাটি খবর রাখেন, তাঁরাই সংলাপগুলোর মর্ম বুঝবেন। বাকিদের মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যাবে।
২) দ্বিতীয়ার্ধটা বেশ বোরিং। অকারণে বাড়ানো হয়েছে। একটু কাটছাঁট করলে ভাল হত।
৩) নাম উল্লেখ করা হয়নি ঠিকই, তবে কোন কটাক্ষটা কার জন্য, তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। এমন সময় এরকম ছবি বানাতে সাহস লাগে বইকি।
৪) হল এত ফাঁকা কেন? কদিন আগেই তো এই ছবিকে ঘিরে আন্দোলনের তুফান উঠেছিল। সোশ্যাল সাইটে এত প্রতিবাদ। হল ভরানোর ক্ষেত্রে কোনও দায়বদ্ধতা থাকবে না! যাঁরা মনে করছেন, এই ছবি আটকানো ভুল হয়েছিল, তাঁরা তো প্রতিবাদেও ছবিটা দেখতে পারতেন।
৫) প্রতিবাদ একেকজন একেক ভাবে করেন। সবাই অনীক দত্ত নন। এই আবহে এতখানি সাহস দেখানো সহজ কথা নয়। আমরা অনীক দত্তর মতো ছবি বানাতে পারি না। কিন্তু তাঁর এই সাহস ও মেরুদন্ডকে কুর্নিশ তো করতে পারি।
৬) শাসকের জন্যও বার্তা আছে। ছবির বিষয়টাই যথেষ্ট বার্তাবহ। কোথায় কী কী অনাচার, অবিচার চলছে। অনুপ্রেরণার নামে কীভাবে মস্তানি, তোলাবাজি চলছে, তা দেখে তাঁরা কি শিক্ষা নেবেন?
৭) ছবির প্রদর্শন আটকাতে গিয়ে তাঁরা কত বড় ভুল করেছেন, এবার বুঝতে পারছেন! ছবি হলে চলছে, অথচ কেউ দেখছে না, এটাই তো শাসকের কাছে স্বস্তির কারণ হতে পারত। তার বদলে ছবিটাকে আটকে দিয়ে অতিরিক্ত প্রচার দেওয়া হয়ে গেল। হল খালি দেখে শাসক দলের কর্তাদের নিশ্চয় আনন্দই পাওয়া উচিত।
৮) মিডিয়া। আবার ছবিটি হলে এল। অথচ, তাকে ঘিরে সবাই কী নিরুত্তাপ। অনেকে জানতেই পারলেন না ছবিটি আবার দেখানো হচ্ছে। জানতে পারলে নিশ্চিতভাবেই আরও অনেকে ভিড় জমাতেন।
৯) যাঁরা নির্মাতা, তাঁরাও সেভাবে প্রচার করতে পারেননি। ছবিটি যে হলে আনা হয়েছে, সেটি আবার প্রচার করার দায়িত্ব কার?
১০) পরিচালক ও প্রযোজককে ধন্যবাদ। তাঁরা এরকম একটা সাহসী ছবি বানানোর কথা ভেবেছেন। সরকার রেগে যাবে ভেবেও পিছিয়ে যাননি। এমনকী, হল থেকে তুলে নেওয়ার পরেও ভেঙে পড়েননি। অভিনন্দন সেই লড়াকু কলাকুশলীদের, যাঁরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। অভিনন্দন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অপর্ণা সেনকেও। দ্বিধা দ্বন্দ্ব দূরে সরিয়ে রেখে তাঁরাও রাস্তায় নেমেছেন। এই ভয়ঙ্কর সময়ে এই সাহস দেখানোটাও খুব সহজ ছিল না।