শুরু থেকেই ভরসা হারাচ্ছে সার্কিট বেঞ্চ

হয় বিমল গুরুংয়ে জামিন হত অথবা খারিজ হত। হয় তাঁকে প্রচারের অনুমতি দেওয়া হত অথবা হত না। তার বদলে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখা হল। তার আগেই পাহাড়ের ভোট হয়ে যাচ্ছে। এই ঝুলিয়ে রাখাটাই অনেক প্রশ্ন তুলে দিল। নিরপেক্ষতার প্রশ্নে শুরু থেকেই প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল সার্কিট বেঞ্চ। লিখেছেন অলক ভট্টাচার্য।

 

খুব ঘটা করে উদ্বোধন হয়েছিল সার্কিট বেঞ্চের। একবার নয়, দু’‌দুবার। একবার উদ্বোধন করে গেলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দ হল না। তাঁর রাজ্যে সার্কিট বেঞ্চ। তিনি এতবার তদারকি করলেন। শেষে কিনা নেপোয় এসে দই মেরে যাবে!‌ অতএব, তাঁর অনুপ্রেরণায় আরও একবার উদ্বোধন।
প্রথম উদ্বোধনের পেছনে সস্তা রাজনীতি ছিল। দ্বিতীয়টাও কিন্তু ব্যতিক্রম কিছু নয়। সেটাও পাল্টা সস্তা রাজনীতি। কী আশ্চর্য, দ্বিতীয়বার উদ্বোধনে হাজির হয়ে গেলেন বিচারপতিরাও। তাঁরাও দড়ি টানাটানির অংশ হয়ে গেলেন।
কোনও সন্দেহ নেই, এই সার্কিট বেঞ্চ হওয়ায় উত্তরবঙ্গের মানুষের অনেকটাই সুবিধা হল। কথায় কথায় আর কলকাতা ছুটতে হবে না। এ নিয়ে কোনও মহলেই দ্বিমত থাকার কথা নয়। কিন্তু সার্কিট বেঞ্চকেও বিশ্বস্ত হয়ে উঠতে হবে। এখন তাঁরা সরকারের কাছে বিশ্বস্ত হবেন নাকি জনগণের প্রতি বিশ্বস্ত হবেন, সেটা তাঁরাই ঠিক করুন।
সার্কিট বেঞ্চের সামনে প্রথম বড়সড় পরীক্ষা ছিল বিমল গুরুংয়ের জামিনকে ঘিরে। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, তাঁকে আগামী চারদিন গ্রেপ্তার করা যাবে না। কিন্তু অন্য মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করতে মরিয়া রাজ্য প্রশাসন। তিনি আসবেন শুনেই ঘিরে ফেলা হল বিমানবন্দর। তিনি সার্কিট বেঞ্চে আসতে পারেন শুনে পুলিশের সব কর্তা হাজির হয়ে গেলেন সার্কিট বেঞ্চে। গুরুং আসতে পারেননি। তাঁর আইনজীবীর আবেদন কী ছিল?‌ দার্জিলিংয়ে লোকসভার ভোট। অন্তত ভোট পর্যন্ত প্রচার করার সুযোগ দেওয়া হোক। তারপর যেমন বিচার প্রক্রিয়া চলছে, চলুক।
বিমল গুরুংয়ের নামে যা যা মামলা, তার অধিকাংশ মামলাই দেওয়া হয়েছিল বিনয় তামাংয়ের নামেও। বিনয় তামাং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মিটিং করছেন, তৃণমূলের হয়ে দিব্যি প্রচার করছেন, সব আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিনের পর দিন জিটিএ–‌র শীর্ষে বসে গেছেন। অথচ, গুরুংকে ফেরার হয়ে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। বিমল গুরুং যদি অপরাধী হয়ে থাকেন, তাহলে বিনয় তামাংও তাই। দুজনের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার দুরকম আচরণ করছে। এটা কি বিচারপতিদের অজানা?‌
গুরুংয়ের আগাম জামিন বিচারপতিরা খারিজ করতেই পারতেন। কিন্তু তাঁরা কী করলেন?‌ তাঁরা বললেন, এখন এই মামলা শোনা যাবে না। ২২ এপ্রিলের পর শুনানি হবে।

circuit bench
কিন্তু ততদিনে তো পাহাড়ে ভোট হয়ে যাবে। তিনি চেয়েছিলেন, ভোটের আগে পাহাড়ে প্রচার করতে। বিনয় তামাং–‌অনীত থাপারা যদি প্রচার করতে পারেন, তাহলে গুরুং পারবেন না কেন?‌ অথচ বিচারপতিরা জানালেন, মামলা শুনবেন ২২ এপ্রিল। অর্থাৎ, ভোটের পর। ভোট হয়ে যাওয়ার পর তিনি প্রচার করবেন?‌
বিচারপতিদের প্রতি সম্মান রেখেও এই সিদ্ধান্ত অনেক প্রশ্ন তুলে দিল। যাঁরা হাজার হাজার পুলিশ দিয়ে বিমানবন্দর ঘিরে ফেলল, স্বয়ং এসপি হাজির হয়ে গেলেন সার্কিট বেঞ্চে। তাঁরা বিচারপতিদের ওপর কোনও প্রভাব তৈরির চেষ্টা করেননি, এটা বিশ্বাসযোগ্য?‌ আদালতের নিরপেক্ষতা নিয়ে সচরাচর প্রশ্ন তোলা হয় না। কিন্তু আদালত নিজেই যদি প্রশ্ন তোলার ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে তার ভাবমূর্তি কে রক্ষা করবে?‌
আমার বক্তব্য খুব পরিষ্কার। হয় জামিন হত অথবা খারিজ হত। এটাকে অহেতুক ঝুলিয়ে রাখার কোনও যুক্তি নেই। এই ঝুলিয়ে রাখাটাই অনেক প্রশ্ন তুলে দিল। নিরপেক্ষতার প্রশ্নে শুরু থেকেই প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল সার্কিট বেঞ্চ।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.