পাঁচ বছর আগে সারদা নিয়ে হুঙ্কার ছেড়েছিলেন মোদি। বলেছিলেন, প্রত্যেকের বিচার হবে। কী আশ্চর্য, পাঁচ বছর পরেও একই ভাঙা রেকর্ড। একই হুমকি। যে তদন্ত একমাসে হতে পারত, তা পাঁচ বছরে পাঁচ পার্সেন্টও এগোয়নি কেন? এই ব্যর্থতার দায় কার? কার নির্দেশে সিবিআই এতবছর ধরে শীতঘুমে রইল? প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো জানা। লিখেছেন ধীমান দাশগুপ্ত।।
এ যেন পাঁচ বছর আগের কপি পেস্ট। ঠিক পাঁচ বছর আগে, সারদা–র ঘা তখনও দগদগে। বাংলার বিভিন্ন সভায় সেটাই সবথেকে বড় ইস্যু ছিল মোদিবাবুর। ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতির বিজ্ঞাপন দিতে গিয়ে বলতেন, সারদা কান্ডে এত এত গরিব মানুষের টাকা লুঠ হয়েছে, এর বিচার হবেই। প্রত্যেককে খুঁজে বের করা হবে। প্রত্যেকটি টাকার হিসেব নেওয়া হবে।
পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। এখনও সেই এক ডায়লগ। এত দেশ–বিদেশে ঘুরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়ত ভুলেই গেছেন, পাঁচ বছর আগেও একই হুঙ্কার ছেড়েছিলেন মোদিবাবু। পাঁচ বছরে তদন্তের নামে যা হয়েছে, অষ্টরম্ভা। যে তদন্ত এক মাসেই সেরে ফেলা যেত, পাঁচ বছর পরেও সেই তদন্তের পাঁচ পার্সেন্ট অগ্রগতি হয়নি। এই ধিক্কার কার প্রাপ্য!
পাঁচ বছর পর সিবিআই বুঝল, রাজীব কুমার তদন্তে সহযোগিতা করেননি? পাঁচ বছরেও অর্ণব ঘোষকে জেরা করা গেল না? পাঁচ বছর পরে সিবিআই বুঝল, রাজ্য সরকার সহযোগিতা করছে না? পাঁচ বছর পর বোঝা গেল, অনেক তথ্য–প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে? পাঁচ বছর পরে বুঝল, আরও অনেক প্রভাবশালী যুক্ত আছেন?
আমার তো মনে হয়, অপরাধীদের আগে এই অপদার্থ সিবিআই কর্তাদেরই জেলে ভরা উচিত। সিবিআই কি নিজের ইচ্ছেয় তদন্তের গতি শ্লথ করে দিয়েছে? মোটেই না। ওপর থেকে বিশেষ নির্দেশ ছাড়া এভাবে শীতঘুমে যাওয়া যায় না। কে বা কারা সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন? মোদিবাবুর ক্ষমতা আছে খুঁজে বের করার?
তৃণমূল নেত্রী মাঝে মাঝেই বলেন, তদন্তের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করছে। একেবারেই ঠিক বলেন। রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করছে বলেই আসল অপরাধীরা এখনও অক্ষত আছে। রাজনৈতিক বোঝাপড়া আছে বলেই পাঁচ বছর ধরে সিবিআই ঘুমিয়ে থাকে।
যাঁরা অপরাধী, তাঁরা তদন্ত প্রভাবিত করতে চাইবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তাঁরা তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে চাইবেন, তদন্তে বাধা দিতে চাইবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যাঁরা তদন্তের দায়িত্বে, তাঁদের ভূমিকাটা কী? তাঁরা কি আন্তরিকভাবে তদন্ত করতে চেয়েছেন? সেই সিবিআইকে যাঁরা পরিচালনা করেন, তাঁরা কি চান সত্যিকারের তদন্ত হোক! তাহলে, মুকুল রায়ের হাতে টিকিট বিলির দায়িত্ব ছেড়ে দিতেন না। তাহলে, শোভন চ্যাটার্জিকে দলে নেওয়ার জন্য এমন মরিয়া চেষ্টা চালাতেন না। তদন্তের নামে লোকদেখানো কিছু ধরপাকড়, একটু চাপে রাখা। আসলে, সরকার গঠনে সংখ্যা কম পড়লে দরজা খুলে রাখা।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে নারদার প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। আড়াই বছর আগের ঘটনা। বিরোধীদের চাপে লোকসভার এথিক্স কমিটি তৈরি হয়। ধিক্কার জানাই সেই লোকসভাকে যাঁরা আড়াই বছরে এথিক্স কমিটির একটা মিটিং ডাকতে পারল না। এই অপদার্থতার দায় কার?
এরপরেও এই রাজ্যের অনেকে ভাবছেন, বিজেপি নাকি তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। বিজেপি নাকি সারদা তদন্ত করবে। হায় রে! যাঁরা পাঁচ দিনের কাজটা পাঁচ বছরেও করতে পারল না, তাঁদের কাছে এরপরেও কেউ প্রত্যাশা রাখে! প্রধানমন্ত্রীকে দেখেও অবাক লাগছে। পাঁচ বছরের এমন ডাঁহা ব্যর্থতা। এরপরেও কেউ এভাবে নিজের ব্যর্থতার বিজ্ঞাপন করে?