এমন অকপট স্বীকারোক্তি, এরপরেও ‘‌সততার প্রতীক’‌ বলবেন না?‌

সত্যের মহিমাই এমন, সে ঠিক বেরিয়ে আসে। অজস্র মিথ্যের জঞ্জাল থেকেও সে ঠিক উঁকি মারে। সারদা–‌কাণ্ডের আসল পান্ডাকে এতদিনে তিনি চিনিয়ে দিলেন। জনসভায় দাঁড়িয়ে এমন সত্যি কজন বলতে পারেন?‌ এরপরেও তাঁকে ‘‌সততার প্রতীক’‌ বলবেন না?‌ লিখেছেন সরল বিশ্বাস।।

যাক, এতদিনে তিনি তাহলে সত্যি কথা বললেন। ঘনিষ্ঠ মহলে নয়, একেবারে জনসভা থেকে। মৃদু স্বরে নয়, বেশ চড়া স্বরে। টিভিতে লাইভ টেলিকাস্টের দৌলতে দেখল সবাই।

তাঁর অভিযোগ, সারদা কাণ্ডের আসল পান্ডা মোদির মঞ্চেই বসে আছেন। তিনিই সভা পরিচালনা করছেন।

নাম করেননি, কিন্তু ইঙ্গিতটা কার দিকে, তা একটা বাচ্চা ছেলেও বলতে পারবে। যাঁর দিকে ইঙ্গিত, তিনিও কয়েক ঘন্টা পরেই ঘটা করে প্রেস কনফারেন্স করে ফেললেন। অর্থাৎ, তিনি ঠিক বুঝলেন, ইঙ্গিতটা তাঁর দিকেই। তাহলে আর জল্পনার বাকি কী রইল!‌

এতদিন জোর গলায় একজন দাবি করতেন, সারদায় তৃণমূলের কেউ যুক্ত নয়। তৃণমূলের কেউ টাকা নেয়নি। আজ সেই তিনিই বলছেন, সারদার আসল পান্ডা বিজেপির মঞ্চে বসে আছেন।

sarada

অহরহ মিথ্যের এই এক মুশকিল। কখন যে মুখ ফস্কে সত্যিটা বেরিয়ে যায়!‌ কারও কারও ক্ষেত্রে খুঁজতে হয়, সারা জীবনে তিনি কী কী মিথ্যে বলেছেন। কারও ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটা। মিথ্যে বলাটা এমনই এক দৈনন্দিন অভ্যেস যে, সত্যি বললেই লোকে চমকে যায়। যদি বলা যায়, এই বছরে তিনি কটি সত্যি বলেছেন?‌ নিঃসন্দেহে একেবারে সামনের সারিতেই থাকবে এই স্বীকারোক্তিটি। সত্যের ক্ষমতা সত্যিই অসীম। মিথ্যের জঞ্জাল থেকে সে ঠিক উকি মারে।

তাঁর কথা অনুযায়ী, সরদার আসল পান্ডা নাকি বিজেপির মঞ্চে বসে থাকা লোকটি। গাছ থেকে আম পড়ার পর তা কোন ঝুড়িতে আছে, সে সবাই জানে। কিন্তু এই আমের মুকুলটি যেন কোন গাছে ছিল?‌ কোন গাছে সে ফলেছে?‌ যে ‘‌গদ্দার’‌ এর কথা বলা হচ্ছে, ২০১৭ পর্যন্ত তিনি ‘‌অনুপ্রেরণা’‌র বৃত্তেই ছিলেন। নিশ্চয় সারদা কেলেঙ্কারিটা ২০১৮ বা ২০১৯ সালের ঘটনা নয়। তাহলে, যখনকার ঘটনা, তখন তিনি কোথায় ছিলেন?‌ তখন তাঁর মাথার ওপর কার হাত ছিল?‌ আসল পান্ডাকে চিনতে এত দেরি?‌

গোটা রাজ্যের লোক জানত, আসল পান্ডা কে?‌ ঠিক তেমনি গোটা রাজ্যের লোক জানে, কার অনুপ্রেরণায় এইসব কান্ড হয়েছিল। কে তাঁকে এত বছর ধরে আড়াল করেছিলেন। কেন পাঁচ বছর ধরে তদন্ত কার্যত ধামাচাপা রইল? তদন্তের কথা উঠলেই কে সবথেকে বেশি গর্জে উঠেছেন?‌ কার দিক থেকে সবথেকে বেশি বাধা এসেছে?‌

এসব বেয়াড়া প্রশ্ন থাক। ফেসবুকে কটাক্ষের ঝড় উঠবে। দুটো পাশাপাশি ভিডিও ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু একটা ধন্যবাদ অন্তত তাঁর প্রাপ্য। অবশেষে তিনি সত্যি বলেছেন, যা তিনি কদাচিৎ বলে থাকেন। লক্ষ লক্ষ ঝিনুকের মাঝে একটি মুক্তো থাকে বলেই সে এত মহার্ঘ্য। ঠিক তেমনি, লক্ষ লক্ষ মিথ্যের মাঝে একটি মূল্যবান সত্যি। এর মূল্য কিন্তু কম নয়। অন্তত এক জন্য তাঁকে একটা অভিনন্দন জানানোই যায়। ‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.