ছাঙ্গু কেন, চাইলে অনায়াসেই সান্দাকফু যেতে পারেন

মুঞ্জরণ হালদার

কয়েকদিনের জন্যে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা, পাহাড়, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, কাঞ্চনজঙ্ঘার শোভা, দূর থেকে এভারেস্ট, বরফ ও রডোডেনড্রন দেখতে হলে শীতেই চলুন সান্দাকফু।
ট্রেন ধরে শিয়ালদহ থেকে সকালে এনজেপি নামুন। পারলে দার্জিলিং মেল ধরাই ভাল। সকালে চা খেয়ে সময় নিয়ে পেচো বাঙালির মতো দামাদামি করে একটা গাড়ি ঠিক করুন। হাজার দুই আড়াই এর বিনিময়ে সে আপনাকে রাস্তায় ব্রেকফাস্ট করিয়ে ঘন্টা পাঁচেক এর মধ্যে মিরিক হয়ে পৌঁছে দেবে মানেভঞ্জন। হোটেল কানচনজঙ্ঘায় উঠতে পারেন। স্নান সেরে, খাবার খেয়ে হালকা বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন গাইডের খোজে। দিনপিছু শ তিনেক টাকা হিসেবে গাইড বুক করে চলে আসুন শেয়াকে ল্যান্ডরোভার ভাড়া করতে । শেয়ারে মোটামুটি ৮০০ টাকায় সান্দাকফু চলে যাবেন। সন্ধ্যা নামার আগে বাকি সময়টা আসে পাশের পাহাড়, খেলার মাঠ, বাজার দেখে নিন। রাতে খেয়ে শুয়ে পড়ুন।

sandakfu2
পরদিন সকালে স্নান করে, ব্রেকফাস্ট সেরে সময় মতো রওনা দিন সান্দাকফুর উদ্দেশে। পথে টিকিট ও ক্যামেরা মিলিয়ে প্রায় ২০০ এবং খাওয়া–‌দাওয়ার জন্য শ খানেক খরচ। পথে মেঘমা, টুম্বলিং, কালাপোখরির অপরূপ শোভা দেখতে দেখতে আর গাড়ির ঝাঁকুনি উপভোগ করতে করতে সান্দাকফু পৌঁছতে প্রায় ৫ ঘন্টা। গাইডের সাহায্য নিয়ে হোটেল বা হোমস্টে দেখে নিন। ৭০০–‌৮০০ টাকায় ভাল কিছু পেয়ে যাবেন। এরপর থেকে সভ্য জগতের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় শেষ ।
রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে একবারের জন্য বাড়িতে জানিয়ে দেওয়া, পৌঁছে গেছি। ব্যাস। এরপর ফোনটা কেবল ক্যামেরা হিসেবে ব্যবহার। দয়া করে জামাকাপড় খুলে সিঙ্ঘম রিটার্ন হবেন না। তাহলেই আপনাকে রিটার্ন আসতে হবে। পরের দিন নেমে আসার আগে পর্যন্ত স্নান না করাই ভাল। পারত পক্ষে কোনও মদ খাবেন না। হোটেল বা হোম স্টের ওয়েলকাম ড্রিঙ্কটা চলতে পারে। জল বোতল কিনে খাবেন। পাহাড়ি জল না খাওয়াই ভাল। সকলের সহ্য নাও হতে পারে। সহজ কথা, ওই উচ্চতায় বেশি ঝুঁকি না নেওয়াই ভাল।
এখানে এসে দিনের বাকি সময়টা কাঞ্চনজঙ্ঘা–‌এভারেস্ট দেখুন। নিচের জঙ্গলে নেমে ছবি তুলুন। আর হ্যাঁ, অবশ্যই গাইডকে বলে সানসেট পয়েন্ট ঘুরে আসুন। সে এক অদ্ভুত সৌন্দর্য। মেঘ অনেক নিচে সাগরের ঢেউ এর মতো সুদূর বিস্তৃত। সূর্যটা টুক করে তার মধ্যে ডুবে গেল। শুকনো রডোডেনড্রন, লাল আকাশ, হাড় হিমকরা বাতাস। পাশে নেপাল বর্ডার। হাতের গ্লাভসটা সূর্যাস্তের সময় না খোলাই ভাল। নইলে দু মিনিটেই বুঝবেন কনকনে শীত কাকে বলে। রাতে ফিরে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যান।
সকালে গাইড আপনাকে সূর্যোদয় দেখার জন্য তুলে দেবে। একটু আগেই জামাকাপড় পরে বেরিয়ে আসবেন। শুরু হবে সূর্য আর কাঞ্চনজঙ্ঘার রঙ মাখামাখি। এ সৌন্দর্য কলমে উঠে আসার কথা নয়। সেই চেষ্টা না করাই ভাল। সান্দাকফু এমন একটা জায়গা, যেখানে আপনি সুন্দর ভাবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পাবেন।

sandakfu1
খুব সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে গাইডকে নিয়ে রডোডেনড্রনের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে শ্রীখোলার উদ্দেশে ট্রেকিং। পথ নিচের দিকে নেমে গেছে। পথে পেয়ে যাবেন নদী, বাঁশবন, বাঁদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা। ছোট গ্রাম, নুড়ি পাথরের আঁকাবাঁকা পথ ইত্যাদি। প্রায় ১০ কিমি নেমে Gurdum এ একটু বিশ্রাম নিয়ে একটু খেয়ে আবার পথ চলা। আরো ৬ কিমি নেমে শ্রীখোলা। এখানে হোমস্টে নেওয়াই ভাল। অতটা হাঁটার পর ওদের আতিথেয়তা দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন। এবার গরম জলে স্নান সেরে কিছু খেয়ে বসে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান। পথে যে নদীকে আপনি দুবার টপকে এসেছেন সেই নদীই আপনাকে কুল কুল শব্দে সব ক্লান্তি ধুয়ে নিঙড়ে নিয়ে যাবে।
পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে হাটা পথে মেইন রাস্তা থেকে শিলিগুড়ি আসার গাড়ি ধরে নেবেন। পথে লাঞ্চের জন্য ধর্তে–‌তে নামতে পারেন। এখান থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘাকে সুন্দর দেখা যায়।
**

‌‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.