অর্ঘ্য দত্ত
একটি স্লোগান চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার/চাই না হতে রাজকুমার। এই রাজকুমার কে, সেটা সচেতন মানুষেরা জানেন। ভোটকর্মীরা আরও ভাল করে জানেন। উত্তর দিনাজপুরে পঞ্চায়েত নির্বাচনে গিয়েছিলেন এই ভোটকর্মী। আর বাড়ি ফেরেননি। সেই মৃত্যুতদন্তকে ধামাচাপা দিতে সরকার কতটা মরিয়া ছিল, নানা ঘটনাক্রম থেকে তা পরিষ্কার।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে যা হয়েছে, তা রাজ্যের পক্ষে চূড়ান্ত লজ্জার। ৩৪ শতাংশ আসনে বিরোধীরা মনোনয়ন দিতে পারেননি। যেসব আসনে নাম কে ওয়াসৃতে ভোট হয়েছে, সেখানেও ভোটের ন্যূনতম পরিবেশটুকু ছিল না। কোথাও সকাল দশটাতেই ভোট শেষ। কোথাও আবার সকাল পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হয়নি। সূর্য ওঠার আগেই ভোট শেষ করে ফেলতে হয়েছে ভোটকর্মীদের। বিডিও থেকে এসডিও, ডিএম থেকে এসপি, প্রত্যেকের ভূমিকাই ছিল অত্যন্ত লজ্জাজনক। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যদি এভাবেই জিততে চান, তবে ডিএম–এসপি–র সাধ্য কী! যে কোনও ভোটকর্মীকে জিজ্ঞেস করুন, তাঁর অভিজ্ঞতা কেমন।
স্বাভাবিকভাবেই এবার দাবি উঠেছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া ভোটের ডিউটিতে যাব না। খুবই নাহ্য দামী। লোকসভা ভোটেও কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে না? তার মানে, আবার সেই ভোট লুঠ করার বৈধতা? বিজেপি এত হুঙ্কার দিচ্ছিল এবার নাকি সব জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। অথচ, এখন যা পরিস্থিতি, রাজ্যের পচিশ শতাংশ বুথেও বাহিনী থাকবে কিনা সন্দেহ। তাহলে, সাত দফায় ভোট করানোর কী দরকার ছিল? যেন সব জায়গায় নিরাপত্তা দেওয়া যায়, সেই কারণেই তো সাত দফা। এখন বাহিনী যদি না দেওয়া যায়, সেই লোকাল পুলিশের ভরসাতেই যদি ভোট করতে হয়, তাহলে সেই ভোট কেমন হবে, তা তো সহজেই বোঝা যায়।
এই রাজ্যে এমন একজন ডিএম বা এসপি নেই, যাঁকে ন্যূনতম ভরসাটুকু করা যায়। অধিকাংশ মিডিয়াও সীমাহীন তাঁবেদারির রাস্তা বেছে নিয়েছে। ফলে, কোথায় কী সন্ত্রাস, সেসব উঠেও আসবে না। আবার সেই ভয়ে ভয়েই ডিউটি করতে হবে ভোটকর্মীদের। অবাধে চলবে ছাপ্পা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে হবে। প্রশাসন নামক ঠুঁটো জগন্নাথ কিছুই করতে পারবে না। তাঁরা ভোটকর্মীদের পাশে নয়, গুন্ডাদের পাশেই থাকবে।
এই অবস্থায় শিক্ষক, সরকারি কর্মচারিদের দাবিটা অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ। জেলায় জেলায় এই দাবি উঠছে। এই দাবি আরও জোরদার হয়ে উঠুক। প্রশাসন ভয় দেখাবে। শোকজ করবে। করুক। যাঁরা ন্যূনতম নিরাপত্তা দিতে পারেন না, কোন অধিকারে তাঁরা ভোট করাতে ডাকেন? এবার সময় এসেছে প্রশাসনকে পাল্টা শোকজ করার।