বহরমপুরে প্রার্থী দেওয়া খুব জরুরি ছিল?

উত্তম জানা

তখন জোট প্রক্রিয়া চলছে। ফরওয়ার্ড ব্লক ও সিপিআই— দুই শরিকই জানিয়ে দিল, তারা কোনও আসনই ছাড়বে না। বেশ বিড়ম্বনাতেই পড়ল বড় শরিক সিপিএম। কিন্তু কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছিল আর এস পি। তারা জানিয়ে দিয়েছিল, বহরমপুর আসন ছাড়তে তাদের কোনও আপত্তি নেই। যে আসনের সঙ্গে ত্রিদিব চৌধুরি, ননী ভট্টাচার্যদের স্মৃতি জড়িয়ে আছে, সেই আসনও না চাইতেই ছেড়ে দিয়েছিল আর এস পি।
পরে নানা কারণে জোট প্রক্রিয়া ভেস্তে গেল। ঠিক হল, কংগ্রেসের জেতা চার আসনে বামেরা প্রার্থী দেবে না। তাই দ্বিতীয় দফার প্রার্থী ঘোষণার সময় সেই চার আসন ছেড়ে রাখা হল। যদিও পরে মালদা উত্তর ও জঙ্গিপুরে সিপিএম প্রার্থী ঘোষণা করে। ধরেই নেওয়া গিয়েছিল মালদা দক্ষিণ ও বহরমপুরে প্রার্থী দেওয়া হবে না। কিন্তু আচমকাই বহরমপুরে প্রার্থী ঘোষণা করে দিল আর এস পি। সবকিছুই যখন বামফ্রটগতভাবে আলোচনা করেই এগোচ্ছিল, তখন আচমকা এই প্রার্থী ঘোষণা কেন?‌ এতে কার লাভ হল?‌

adhir2
বহরমপুর আসনে অধীরের জেতা উচিত নাকি অপূর্ব সরকারের জেতা উচিত?‌ কী মনে করেন বাম নেতৃত্ব?‌ সব আসনে জোট হল না, সেটা দুঃখজনক। তাই বলে, যেখানে কংগ্রেসের জেতার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে নিজেরা দাঁড়িয়েও চতুর্থ হওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকবে না, সেখানে তৃণমূলকে জিততে সাহায্য করাটা কি খুব বিচক্ষণতার কাজ?‌ যতই আর এস পি প্রার্থী দিক, তাঁরা কি মনে করেন ওই সাতটি বিধানসভায় সিপিএমের সমর্থন পাওয়া যাবে?‌ নেতারা যাই বলুন, তলার দিকের কর্মীরা ঝুঁকবেন সেই অধীরের দিকেই। এই সহজ সত্যিটা না বোঝার কোনও কারণ নেই। আগেরবার যে আড়াই লাখ ভোটের কথা বলা হচ্ছে, সেটা হয়ত পঞ্চাশ–‌ষাট হাজারে নেমে আসবে। সেটা কি খুব সম্মানজনক হবে?‌ ত্রিদিব চৌধুরির আসনে আর এস পি–‌র জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে, এটা নিশ্চয় কাম্য নয়!‌
কী হতে পারে?‌ সিপিএম নেতৃত্ব বোঝানোর চেষ্টা করবেন। শেষপর্যন্ত হয়ত ইদ মহম্মদ আর প্রার্থী হবেন না। হয়ত পিছিয়ে আসতে হবে। তাহলে জরুরি সভা ডেকে দুম করে প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়ার কী দরকার ছিল?‌
আর এস পি নেতৃত্ব বলতেই পারেন, তাহলে জঙ্গীপুর বা মালদা উত্তরে প্রার্থী দেওয়া হল কেন?‌ উত্তরটা খুব সহজ। মালদা উত্তরে কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থী এর মধ্যেই অন্য দলে যোগ দিয়েছেন। এবং সেখানে জয় না আসুক, দ্বিতীয় স্থান আসতেই পারে। আর জঙ্গীপুরে বামেরে জিতে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাই এই দুই আসনে ঝুঁকি নিতে হয়েছে। তার সঙ্গে বহরমপুরকে কখনও মেলানো যায় না। এটি শেষমেষ হঠকারি সিদ্ধান্ত হিসেবেই চিহ্নিত হবে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.