কোথায় বাংলা, কোথায় রাবাংলা!‌

শীত বিদায় নিয়েছে আগেই। ‘‌বসন্ত এসে গেছে’‌ বলে যতই আদিখ্যেতা করুন, এ আসলে গরমেরই ট্রেলার চলছে। এই সময় যদি সিকিমের ছোট্ট পাহাড়ি জনপদ থেকে ঘুরে আসা যায়!‌ আপনার আদর্শ ঠিকানা হয়ে উঠতে পারে রাবাংলা। লিখেছেন সুমিত চক্রবর্তী।।

বাঙালির বলিহারি প্রতিভা। সব কিছুকেই সে আপন বানিয়ে নেয়। ইচ্ছেমতো নাম বদলে নেয়। বলুন তো এক্স রে–‌কে বাংলায় কী বলে?‌ উইলিয়াম রন্টজেন এই রশ্মি আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি নিজের নামে নাম রাখেননি। অঙ্কে যেমন আমরা কোনও সংখ্যাকে এক্স ধরে নিই, সেভাবেই তিনি নাম রেখেছিলেন এক্স রে। অনেকে বলতেন রন্টজেন রে। বাঙালি ‘‌রে’‌ কে অভিধান মেনে ‘‌রশ্মি’‌ বানিয়ে দিল। আর রন্টজেন কে বানিয়ে দিল রঞ্জন। হয়ে গেল রঞ্জন রশ্মি।
শুরুতেই এই রঞ্জন রশ্মির কথা টেনে আনতে হল কেন?‌ নামকরণের ব্যাপারে বাঙালির প্রতিভা বোঝানোর জন্য। অর্থাৎ, ‘‌নামাঞ্জলি’‌র আগে থেকেই বাঙালি নাম দেওয়ায় পারদর্শী। সিকিমের রাবাংলার কথাই ধরুন। বিভিন্ন বইয়ে নিশ্চয় পড়েছেন রাবাংলার কথা। কিন্তু বিশ্বাস করুন, এর সঙ্গে বাংলার কোনও সম্পর্কই নেই। আসল উচ্চারণ হল, রাভং লা। বাঙালিরা নিজেদের মতো করে এর উচ্চারণ তৈরি করে নিয়েছে ‘‌রাবাংলা’‌। কী আশ্চর্য, বাঙালি পর্যটকদের ভুল উচ্চারণের পাল্লায় পড়ে সেখানকার মানুষও ‘রাবাংলা’‌ বলতে ও লিখতে শুরু করেছে।

ravangla 5

সিকিমে গিয়ে যদি প্রকৃতিকে দু’‌চোখ ভরে দেখতে চান, তাহলে আপনি রাবাংলা যেতেই পারেন। খরচ অল্প। দেখে মনও ভরবে। সিকিম বলতেই গড়পড়তা পর্যটকরা ছুটে যান গ্যাংটকে। সেখান থেকে বরফ দেখার আশায় ছাঙ্গু বা আরও দুর্গম পথে যেতে চাইলে নাথুলা। কিন্তু যাঁরা অতটা ধকল নিতে চান না, অথচ প্রকৃতিকে দারুণভাবে উপভোগ করতে চান, তাঁদের ঠিকানা হতে পারে রাবাংলা।

কীভাবে যাবেন ?‌ যদি গ্যাংটক থেকে যেতে চান, দু’‌ঘণ্টার রাস্তা (‌৬৫ কিমি)‌। আর যদি সরাসরি নিউ জলপাইগুড়ি (‌শিলিগুড়ি)‌ থেকে যেতে চান, তাহলে ১১০ কিমি। মোটামুটি সাড়ে চার ঘণ্টা। গাড়ি ভাড়াও নিতে পারেন, খরচ বাঁচাতে চাইলে শেয়ার পেয়ে যাবেন। উচ্চতা সাত হাজার ফুটেরও বেশি। ওঠার পথটা এতটাই সুন্দর, আর অন্য কোথাও না গেলেও চলবে। পাহাড়ের গা বেয়ে অনেক ঝর্না নেমে আসছে আপন খেয়ালে। জানালা দিয়ে ভেসে আসছে মেঘ।

ravang la

রাবাংলা একেবারেই ছোট্ট শহর। পায়ে হেঁটেই দিব্যি ঘোরা যায়। অহেতুক গাড়ি নিতে গেলে অনেক আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকবেন। পায়ে হেঁটে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যান বুদ্ধ পার্কের দিকে (‌একান্তই যেতে না পারলে গাড়ি নিতে পারেন)‌। নিসর্গ তো আছেই, তার সঙ্গে চমৎকার সাজানো একটি বিশাল পার্ক। বিশাল এক বুদ্ধ মূর্তি। আর কোথাও যদি যেতে নাও পারেন, এই পার্ক ও লাগোয়া মনাস্ট্রিতে অবশ্যই যান। নামার সময় সম্ভব হলে হেঁটে নামুন। গাড়ি নিয়ে ঘুরতে চাইলে রালং, ডলিং, টুমলং মনাস্ট্রি ঘুরে নিতে পারেন। কাছেই টেমি চা বাগান ঘুরে আসতে পারেন। আরও অনেক অজানা জায়গা আছে। অন্তত দু’‌দিন না থাকলে জায়গাটা ভালভাবে ঘোরা হবে না। যদি লম্বা ছুটি থাকে, নামচি, পেলিংয়েও দু’‌–‌এক দিন সময় কাটিয়ে আসতে পারেন। যদি মনে করেন, শুধু রাবংলা থেকেই ফিরে আসবেন, তাতেও ক্ষতি নেই।
শীত বিদায় নিয়েছে আগেই। যতই ‘‌বসন্ত এসে গেছে’‌ বলে আদিখ্যেতা করুন, আসলে কিন্তু গ্রীষ্মই এসে গেছে। এই সময় পাহাড়ের দেশে ঘুরে এলে মন্দ হয় না। এই গরমে আপনার ঠিকানা হয়ে উঠতেই পারে ছোট্ট শহর রাবাংলা।

‌‌
বাঙালির বেড়ানো নিয়ে নানা আকর্ষণীয় প্রতিবেদন। ‌বেঙ্গল টাইমসে প্রতিদিনই ভ্রমণ সংক্রান্ত একটি বা দুটি লেখা থাকবে। থাকবে ভ্রমণ সংক্রান্ত ই ম্যাগাজিনও। আপনিও লিখতে পারেন আপনার বেড়িয়ে আসার কথা, আপনার অনুভূতির কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা:‌

bengaltimes.in@gmail.com

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.