ধীমান সাহা
মুকুল রায় হঠাৎ করে বললেন, তোর বাড়ি যাচ্ছি। সব্যসাচী বললেন, হ্যাঁ, চলে এসো।
মুকুল রায় এলেন। লুচি, আলুর দম খেলেন। বিরাট কোহলি, ক্রিকেট–এসব নিয়ে কথা বললেন।
দুজনের মধ্যে রাজনীতির কোনও কথাই হয়নি।
***
এমনই গল্প বাজারে ছেড়েছেন মেয়র সব্যসাচী। আমার–আপনার মতো কুচুটে লোকের কথা ছেড়ে দিন। তৃণমূলের যে সব সজ্জন ব্যক্তিদের ভিড়, তাঁরা কেউ এমনটা বিশ্বাস করেন?
কিন্তু মেয়র বলে কথা। তিনি যখন বলছেন, তখন তো বিশ্বাস করতেই হবে। শহরের মেয়রকে কি এত সহজে মিথ্যুক বলে দেওয়া যায়!
সকালেই তাঁর বাড়িতে ছুটে গেলেন দোলা নেই। নিশ্চয় নিজের তাগিদে নয়। নিশ্চয় সকাল বেলায় তিনি আলুর দম খেতে যাননি। বিকেলে জরুরি মিটিং। ববি হাকিম থেকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক হাজির। সেখানে সাংবাদিকদের সামনে দন্ত বিগলিত করে আবার আনুগত্যপ্রকাশ।
কিন্তু এর পরেও কি সব্যসাচীকে সুবোধ বালক বলা যাবে? এরপরও বলা যাবে তিনি তৃণমূলে থাকছেন? মুকুল রায় যদি এই সাক্ষাৎ একান্তই গোপন রাখতে চাইতেন, তাহলে ভোরবেলায় আসতে পারতেন। একটু বেশি রাতের দিকেও আসতে পারতেন। কিন্তু তিনি এলেন সন্ধেবেলায়, তাও আবার সঙ্গে মিডিয়া।
এত কিছুর পরেও নিছক জল্পনা। নিছক গুজব। নিছক আলুর দম!
এ যাত্রায় সব্যসাচী হয়ত রেহাই পেয়ে গেলেন। কিন্তু বেশ ভাল করেই জানেন, আর তাঁকে মেয়র করা হবে না। এমনকী টার্ম ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই বিদেয় করা হতে পারে। বিধায়কের টিকিটও আর পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। তাহলে কী করবেন? দন্ত বিগলিত করা আনুগত্য দেখিয়ে যাবেন? তাঁকে এতখানি নির্বোধ বলে তো মনে হয় না।
একবার যখন আলুর দমে পা পিছলেছে, তখন উঠে দাঁড়ানো এত সহজ নয়। আজ না হোক কাল, পদ্মের কাঁটা বা তৃণমূলের ঝাঁটা তাঁর জন্য অপেক্ষা করে আছে। অবাক হব না যদি কয়েকদিন পরেই বিজেপির প্রার্থীতালিকায় হঠাৎ করে তাঁর নাম দেখি। একদিকে তৃণমূলের মেয়র, অন্যদিকে বিজেপির প্রার্থী। ব্যাপারটা দারুণ জমবে কিন্তু। তাঁর নামে নিশ্চিতভাবেই নানা মামলা দেওয়া হবে। কত কুকীর্তির কথাই যে বেরিয়ে আসবে! তখন সত্যিই আরও জমবে।
ওপর দিকে ছোঁড়া থুথু কোথায় গিয়ে পড়বে, কে জানে! এমন একটা লোককে কে মেয়র বানিয়েছিলেন, সেই প্রশ্নটা কিন্তু কেউ করবে না। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা। নানা অপকর্ম এভাবেই বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে।