রাজ্যের বদনাম!‌ পঞ্চায়েতের সময় মনে ছিল না!‌

রক্তিম মিত্র

কেন্দ্রীয় বাহিনী এলে রাজ্যের খুব দুর্নাম হয়ে যাবে। আহা, রাজ্য নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। কেন বুথে বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে, কেন এলাকায় এলাকায় টহলদারি থাকবে, সত্যিই খুব দুশ্চিন্তার বিষয়। রাজ্যের মান সম্মানের কী হবে!‌

বুদ্ধিজীবীদেরও ঘুম নেই। অভিরূপ সরকার থেকে সুবোধ সরকার, শুভাপ্রসন্ন থেকে নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, সবাই ছুটলেন নির্বাচন কমিশনে। এই রাজ্যে নাকি দারুণ শান্তিতে ভোট হয়। তাই, কোনও কড়াকড়ির দরকার নেই।

রাজ্যে কত শান্তি আছে, তা এই বুদ্ধিজীবীদের ছুটে যাওয়া দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এঁরা কি সত্যিই স্বেচ্ছায় ছুটে গেছেন নির্বাচন কমিশনে?‌ নাকি বিশেষ কোনও চাপ এসেছে?‌ কে এলেন, কে এলেন না, সব কিন্তু নোট হচ্ছে। না এলে কী হবে, ওঁরা বেশ ভালভাবেই জানেন। তাই ‘‌শান্তির বাণী’‌ ছেটানো ছাড়া আর কীই বা করার ছিল!‌

vote3

সত্যিই, এই রাজ্যে যে শান্তির নমুনা পঞ্চায়েত ভোটে দেখা গেল!‌ ৩৪ শতাংশ আসনে নমিনেশনই দেওয়া গেল না। বাকি যেসব জায়গায় ভোট হল, সেখানেও ছাপ্পা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, গ্রামের মানুষ ভালভাবেই জানেন। এমন একটি ব্লকও নেই, যেখানে ব্লক অফিসকে ঘিরে লাঠি–‌তরোয়াল হাতে উন্নয়ন দাঁড়িয়ে থাকেনি। যেসব জায়গায় ভোট হয়েছে, সেখানেও কুড়ি শতাংশ ভোটার ভোট দিতে পেরেছেন কিনা সন্দেহ। এমনই পরিস্থিতি, খোদ তৃণমূলের লোকেরাও তৃণমূলকে ভোট দিতে পারলেন না। সবমিলিয়ে রাজ্যের কুড়ি শতাংশ মানুষও ভোট দিতে পেরেছেন কিনা সন্দেহ। তাহলেই ভেবে দেখুন। যে রাজ্যে আশি শতাংশ মানুষ ভোট দিতে পারলেন না, সেই রাজ্যে নাকি দারুণ শান্তিতে ভোট হয়।

গণনাতেও চলল দেদার ছাপ্পা। জিতেও কি রেহাই আছে!‌ অন্য দলের কেউ জিতলেই তাঁকে জোর করে নিজেদের পতাকা তুলে দেওয়া হল। যেখানে দল ভাঙানো গেল না, সেখানে বোর্ডগঠনই হল না।

(ফাইল ছবি)
(ফাইল ছবি)

না, এর কোনওটাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিশেষ কারও ‘‌অনুপ্রেরণা’ ছাড়া এই সার্বিক ‘‌শান্তির ভোট’‌ সম্ভব ছিল না। আজ কেন রাজ্যে সাত দফায় ভোট করতে হচ্ছে, শাসক দল সেই আত্মসমালোচনা কখনই করবে না। কারণ, সেই আত্মসমালোচনা করতে হলে আঙুলটা যে তাঁর দিকেই সবার আগে উঠবে। তৃণমূল কটা আসন পাবে, সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু ঠিকঠাক ভোট হলে তৃণমূলের ভোট কিছুতেই চল্লিশ শতাংশ হবে না। অর্থাৎ, ষাট ভাগ ভোট শাসকদলের বিরুদ্ধেই পড়বে। এটাই সবথেকে বড় অনাস্থা। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী আসছে শুনে ভয় পাওয়াই স্বাভাবিক।

রাজ্যের দুর্নাম হচ্ছে বলে যাঁরা ধর্মতলায় ধর্না দিলেন, তাঁরা যদি পঞ্চায়েতের সময় রাজ্যের সুনাম নিয়ে ভাবতেন!‌ রাজ্যের সবথেকে বেশি দুর্নাম করার দায়িত্বটা স্বয়ং তিনি নিয়ে রেখেছেন। এর জন্য বিরোধীদের দরকার পড়বে না। ‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.