কত ঝুঁকি নিলেন, ডেভিড নিজেও জানেন না

ধীমান সাহা
প্রায় তেরো বছর আগের কথা। দুয়ারে কড়া নাড়ছে বিধানসভা ভোট। কান্দি মানেই তখন অতীশ সিনহা। ৮৪ তে হারিয়েছিলেন ত্রিদিব চৌধুরির মতো কিংবদন্তিকে। ৯৬–‌এ যেবার কংগ্রেস ৮৮ আসন পেল, সেই অতীশ সিনহাই ছিলেন বিরোধী দলনেতা। কান্দির রাজা। বিলেত ফেরত ব্যারিস্টার। এমনকী, ২০০১–‌০৬ তিনিই কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা। তখনও তেমন বয়স হয়নি। অর্থাৎ, নির্বাচনে লড়াই করতে সমস্যা নেই।
একে সিটিং এমএলএ। তার ওপর তাঁর নাম অতীশ সিনহা। ফলে, তাঁর প্রার্থী হওয়া নিয়ে এক শতাংশও সংশয় থাকার কথা নয়। কিন্তু বেঁকে বসলেন অধীর চৌধুরি। তিনি বললেন, বহরমপুরে মায়ারানী পালকে এবং কান্দিতে অতীশ সিনহাকে কিছুতেই প্রার্থী করা চলবে না। প্রথমে অনেকেই ভেবেছিলেন নিছক হুঙ্কার। কিন্তু অধীরও একরোখা। মায়ারানী পালের না হয় সেই প্রভাব নেই। তাই বলে অতীশ সিনহাকে বাদ দেওয়া যায়!‌ প্রণববাবু তখন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী। অধীরকে বারবার বোঝালেন। কিন্তু অধীর কিছুতেই বুঝলেন না। হাইকমান্ড জানিয়ে দিল, কান্দিতে অতীশ সিনহাই হবেন কংগ্রেস প্রার্থী। তাঁকেই দেওয়া হল মনোনয়ন।

apurba
কিন্তু অধীরও নাছোড়বান্দা। ঠিক করলেন বহরমপুর ও কান্দি দুই জায়গায় দুই নির্দল প্রার্থী দাঁড় করাবেন। বহরমপুরে দাঁড়ালেন মনোজ চক্রবর্তী, আর কান্দিতে অপূর্ব সরকার। রাজ্য রাজনীতি তো দূরের কথা, জেলাতেই তাঁদের কজন চিনতেন, সন্দেহ আছে। নিজের মান সম্মান বাজি রেখে কার্যত দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন অধীর। কী আশ্চর্য, বহরমপুরে যেমন মনোজ জিতলেন, তেমনি কান্দিতে আরও বড় ইন্দ্রপতন। অখ্যাত অপূর্বর কাছে কিনা হারতে হল কান্দির রাজা অতীশ সিনহাকে!‌ কোনও সন্দেহ নেই, সেবার রাজ্য রাজনীতিতে সেটাই ছিল সবথেকে বড় চমক।
সেদিন সেই অখ্যাত অপূর্বর (‌ডেভিড)‌ জন্য নিজের মান সম্মান বাজি রেখেছিলেন অধীর। নির্দল হিসেবে জিতিয়ে এনেছিলেন কান্দির মতো দুর্গ থেকে। তারপর আরও দুবার অপূর্বকে জিতিয়ে আনলেন ওই কান্দি থেকেই। তবে এই দুবার লড়াইটা অনেক সহজ ছিল। প্রথমত, তিনি কংগ্রেসের সরকারি প্রার্থী। ২০১১ তে তৃণমূলের, ২০১৬ তে বামেদের সঙ্গে জোটও হয়েছিল। কান্দি পুরসভার চেয়ারম্যানও করেছিলেন ডেভিডকেই।
১৩ বছর পর। সেই ডেভিডই কিনা অধীরের বিরুদ্ধে প্রার্থী। সেবার তাঁর জন্য অধীর চরম ঝুঁকি নিয়েছিলেন। আর আজ অধীরকে হারাতে ডেভিড যে ঝুঁকি নিলেন, সেটাও কম নয়। বিধায়কের পদ থেকে আপাতত সরে দাঁড়াতে হল। যদি হেরে যান, রাজনৈতিক কেরিয়ারই সঙ্কটে পড়ে যাবে। উপ নির্বাচনে আবার কান্দি থেকেই দাঁড়াতে হবে। আর লোকসভায় হেরে গেলে, আবার কান্দি থেকে জেতাও খুব সহজ হবে না।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.