শান্তনু ব্যানার্জি
ভ্রমণ পিপাসু বাঙালি সারা বছরে যখনই ছুটির ফাঁদে পা গলিয়ে ফেলে মন তার উড়ু উড়ু করে ওঠে। ব্যাগপত্তর গুটিয়ে গুটি গুটি পা বেরিয়ে পড়ে। কাছে পিঠে যেখানেই যাওয়ার সুযোগ ঘটে বাঙালি পর্যটকদের ভিড়ে সরগরম হয়ে ওঠে সেই স্থান। যাবেন কোথায়! শিমূলতলা, বিহার!
বেশি দূরেও নয়! আবার খুব কাছেও নয়! একরাত্রির ট্রেন যাত্রা। হাওড়া স্টেশন থেকে প্রতিদিন রাত্রি ১১.১০ মিনিটে ছাড়ে মোকামা প্যাসেঞ্জার ট্রেন। পরের দিন সকাল ৭.৩০ মিনিটে পৌছে দেবে শিমূলতলা স্টেশন। এছাড়া হাওড়া থেকে দিল্লিগামী বহু ট্রেন রয়েছে। আর যদি হাওড়া স্টেশন থেকে জসিডি পর্যন্ত ট্রেনে আসেন তাহলে জসিডি জংশন থেকে ট্রেন বদল করতে হবে। মেমু ট্রেন (লোকাল ট্রেন) ধরে শিমুলতলা স্টেশনে নামতে হবে।
বাঙালিরা হাওয়া বদলের জন্য প্রায়শই পশ্চিমে যেত চিকিৎসকদের পরামর্শে। শরীরে রোগ বাসা বাঁধলেই পশ্চিমে যেতে হবে হাওয়া বদলের জন্য এমনটা মোটেও নয়। যন্ত্র সভ্যতার জাঁতাকলে ঘষা খেতে খেতে হাঁপিয়ে ওঠার ঠিক আগে নিজেকে সতেজ আর প্রাণবন্ত করে তোলার সবথেকে সেরা উপায় ব্যাগপত্তর গুটিয়ে বেরিয়ে পড়া। আর বেরিয়ে পড়লে একবার শিমূলতলায় পা রাখা।
দেখবেন কী শিমূলতলায় পৌছে! লাট্টু পাহাড়, রাজবাড়ি, হলদি ঝর্ণা, ধারারা ফলস। আর তার সঙ্গে দিগন্ত বিস্তৃত খোলা আকাশ! যার তলায় দাঁড়িয়ে আপনি প্রতি মুহুর্তে প্রকৃ্তির অপার সৌন্দর্যকে দু চোখ মেলে ধরে রাখতে পারবেন আজীবন মণের মণিকোঠায়। মুক্ত আকাশের তলায় দাঁড়িয়ে বাধাহীন ফুরফুরে বাতাসের স্পর্শে আপনার শরীর আর মন আরও সবুজ হয়ে উঠবে। প্রকৃ্তি তার অপার সৌন্দর্য দুহাত দিয়ে উজাড় করে মেলে ধরেছে শিমূলতলায়। থাকবেন কোথায়! শিমূলতলা স্টেশনে নেমে ডানদিকে বাসস্ট্যান্ড আর বাজার রয়েছে। বাজারের ডানদিক বরাবর প্রচুর বাংলো বাড়ি রয়েছে। রয়েছে আধুনিক মানের হোটেল। আর রয়েছে তারা মঠ। থাকতেই পারেন এই সমস্ত জায়গায়।
টানা এক সপ্তাহের বড়দিনের ছুটিকে পুরো মাত্রায় ব্যবহার করার এটাই সেরা সুযোগ। শিমূলতলা বাজার থেকে আপনি মাছ কিনে রান্না করে খেতে পারেন। আর নয়তো বাংলো বাড়িতে রাঁধুনির ব্যবস্থাও করে নিতে পারেন। তবে হ্যাঁ! গরম জামা কাপড় অবশ্যই নিয়ে যাবেন। কেননা শিমূলতলায় ভীষণ ঠাণ্ডা পড়ে। আর এই ঠাণ্ডাটাও বেশ উপভোগ্য। বাজারেই ডেকরেটার্স রয়েছে। কম্বল, তোষক, বালিশ এবং হ্যাজাকের কোনও অসুবিধা হবে না। ভাড়া পাওয়া যায়। হ্যাজাকের কথা এই কারণেই উল্লেখ করা হল সন্ধ্যের সময় শিমূলতলাতে বিদ্যুৎতের সমস্যা রয়েছে। বিশেষত লো ভোল্টেজ। সেই কারণে হ্যাজাকের ব্যবস্থা করতেই হবে। আর সঙ্গে নিয়ে যাবেন টর্চ। শিমূলতলায় পা রাখবেন আর স্থানীয় মিষ্টির স্বাদ চেখে দেখবেন না তা কি হয়। সকাল-বিকেল দুবেলা সিঙ্গারা আপনি পাবেনই। এছাড়া সঙ্গে রয়েছে রসগোল্লা, সন্দেশের মধ্যে কালাকাদ, ল্যাঙচা, বোঁদে, নিমকি, গাঠিয়া আর চানামুরকি।
শিমূলতলায় পৌছে একটা অটো ভাড়া করে নেবেন। আর তারপর বেরিয়ে পড়বেন লাট্টু পাহাড়, রাজবাড়ির উদ্দেশ্যে। একদিনেই শিমূলতলা ঘুরে বেড়াতে পারবেন অটোয় চেপে। শিমূলতলা বাসস্ট্যান্ড থেকেই ভাগলপুরের উদ্দেশ্যে বাস রওনা দেয়। পরের দিন ভাগলপুরগামী বাসে উঠে পড়বেন। প্রকৃ্তির কান ঘেঁষে দুচোখ মেলে নয়নাভিরাম সুন্দরতাকে পরতে পরতে উপভোগ করবেন। আর ফিরতি বাসেই ভাগলপুর থেকে শিমুলতলায় চলে আসবেন। তবে ভাগলপুরের উদ্দেশ্যে বেড়াতে গেলে ভোরবেলা অবশ্যই উঠতে হবে। কনকনে ঠাণ্ডায় নিজেকে যাওয়ার জন্য তৈরি করে নিতে হবে। সন্ধ্যের সময় শিমূলতলা স্টেশন রোডে ঘুরতেই পারেন। শিমূলতলা বাজার থেকে লাট্টু পাহাড় হাটা পথে ১৫ মিনিট। তবে সন্ধ্যের সময় লাট্টু পাহাড়ের দিকে যাবেন না। রাস্তা অনেক সরু এবং নির্জন, সেইসঙ্গে অন্ধকার। কোন এক সময় শিমূলতলা মাওবাদি অধ্যুষিত অঞ্চল ছিল। এখন রাজনৈতিক পরিবেশ শান্ত। তবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদারি নিয়মিত চলে।
শিমূলতলা থেকে আপনি একদিনের জন্য ঝাঁঝাঁ ঘুরে আসতেই পারেন। শিমূলতলা থেকে মেমু ট্রেন (লোকাল ট্রেন) ধরে ঝাঁঝাঁ স্টেশনে নামলেন। বিশ্রাম নিয়ে ফিরতি ট্রেন ধরে আবার শিমূলতলায় চলে আসলেন। শিমূলতলা থেকে ট্রেনে ঝাঁঝাঁ স্টেশন পর্যন্ত যাত্রা পথ এতটাই সুন্দর যা আপনি শহরে বসে কল্পনাই করতে পারবেন না। শিমূলতলা বাঙালীদের কাছে বিখ্যাত আরও একটি কারনে। জনপ্রিয় বাংলা চলচ্চিত্র ‘দাদারকীর্তির’ শ্যুটিং এর সেট পড়েছিল এই শিমূলতলায়। তাই আর দেরি নয়। শিমূলতলায় যাওয়ার প্রস্তুতি এখন থেকেই সেরে নিন।