সরল বিশ্বাস
তৃণমূলের ব্রিগেডে কারা ছিলেন? ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়া। ছিলেন মমতা ব্যানার্জি, চন্দ্রবাবু নাইডু, কুমারস্বামীর মতো বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। ছিলেন ফারুক আব্দুল্লা, শরদ পাওয়ার, ওমর আব্দুল্লা, অখিলেশ যাদবদের মতো একঝাঁক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। এর বাইরেও তালিকাটা বেশ লম্বা। ছিল পাঁচশো কোটির ওপর খরচ। ছিল অন্তত একশো কোটির হোর্ডিং। ছিল অগুন্তি সরকারি বাস। ছিল সরকারি যাবতীয় পরিকাঠামো ও ব্যবস্থার নির্লজ্জ ব্যবহার। ছিল শাসক দলের হয়ে মাঠে নেমে পড়া হাজার হাজার পুলিশ। ছিল সিনেমা, সিরিয়াল, সাহিত্য, খেলার জগতের তাবড় লোকেরা।
এসব কোনওকিছুই থাকবে না বামেদের ব্রিগেডে। অনেক দূর থেকে, অনেক কষ্ট করে, অনেক উপেক্ষা হজম করে আসতে হবে কর্মী–সর্মথকদের। ফিরে গিয়ে কেউ শুনবেন বাড়িতে হামলা হয়েছে। কেউ শুনবেন হুমকি। এমনকী বাড়িতেও যে অভ্যর্থনা জুটবে, এমন নয়। সেখানেও আত্মীয়দের দিক থেকে কত কটাক্ষ, কত উপহাস উড়ে আসবে। কাউকে কর্মক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হবে। ট্রান্সফারের শীলত হুমকি শুনতে হবে। কেউ শুনবেন, তাঁর স্ত্রীকে কর্মক্ষেত্রে অকারণে হেনস্থা করা হচ্ছে। আসার জন্য ঠিকঠাক বাস পাওয়া যাবে না। বাস মালিকদের হুমকি দেওয়া থাকবে। অথবা, মালিকেরে এমন ভাড়া হেঁকে বসবেন, যেন দল ভাড়া করতেই না পারে। আসা–যাওয়ার পথে পুলিশ নানা জাযগায় বাগড়া দেবে। অনেক বাস যেন শহরে ঢুকতে না পারে, বা দেরিতে ঢোকে তার মসৃন পরিকল্পনা থাকবে। আগে থেকে আসতে চাইলেও ঠিকঠাক জায়গা পাওয়া যাবে না। সেন্ট্রাল পার্ক, গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম বা উত্তীর্ণ–এগুলো সব অন্যদের জন্য। এমনকী ভাড়া দিতে চাইলেও পাওয়া যাবে না।
আর টিভি চ্যানেল তো আছেই। কোথায় মাঠের বাইরে একটু ফাঁকা জায়গা, সেই ছবি দিনভর দেখানো হবে। কেউ যদি ভিক্টোরিয়া বা চিড়িয়াখানায় গিয়ে থাকেন, ক্যামেরা ওঁত পেতে থাকবে। তুমুল প্রচার চলবে, গ্রামের মানুষকে চিড়িয়াখানা দেখানোর লোভ দেখিয়ে আনা হয়েছে। কোথাও যদি কর্মীরা নিজেরাই খাওয়া–দাওয়ার ব্যবস্থা করেন, অমনি পিকনিক বলে চালিয়ে দেওয়া হবে। শহর কতটা দূষিত হল, এই মর্মে চ্যানেল সঞ্চালকের জ্ঞানগর্ভ ভাষণ চলতে পারে। কী জানি, স্টুডিওতে পরিবেশপ্রেমী ভাড়া করে আনাও হতে পারে।
সেদিন পুলিশ পাঠিয়ে ভিক্টোরিয়ার গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সাইনবোর্ড টাঙিয়ে মিথ্যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, চিড়িয়াখানা বন্ধ। ৩ তারিখে হয়ত দেখা যাবে, ভিক্টোরিয়ায় ঢুকতে গেলে টিকিট লাগছে না। বা, পুলিশ মিছিলকে জোর করে চিড়িয়াখানার দিকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। চিড়িয়াখানায় ভিড়ের ফুটেজ যদি পাওয়া যায়, তাহলে আর দেখতে হচ্ছে না। দিনভর চলবে ওই ছবি। তখন আর ভিড়ের ছবি দেখাতে হবে না। পরের দিন কাগজগুলোও সেই সুরেই কথা বলবে। জমায়েত কত, তার ধারেকাছে না গিয়েও শহরে দূষণ, চিড়িয়াখানা দর্শন— এসব ছবিই বড় করে ছাপবে। এত বড় বড় লং মার্চের ছবি ছাপতে যাঁদের ভয়ে হাঁটু কাঁপে, তাঁরা ব্রিগেডেও পর্যাপ্ত কিপ্টেমি দেখাবেন, এতে আর আশ্চর্য কী?
কী জানি, সেদিন হয়ত কোনও একজনের ‘অনুপ্রেরণা’য় পাতাজোড়া ঢাউস ঢাউস বিজ্ঞাপন চলে আসবে। ব্যাস, তাহলে আর প্রথম পাতায় জায়গা থাকবে না। ভেতরের পাতায় কোথাও ছেপে যথাসম্ভব গুরুত্বহীন করে দেখানো যাবে।
এসব দেখে বিজ্ঞের মতো কেউ কেউ বলবেন, বামেরা শেষ। ওরা আর ফিরে আসবে না। হ্যাঁ, এই বিজ্ঞরাও থাকবেন। সবজান্তা মিডিয়াও থাকবে। বিজ্ঞাপনের আড়ালে বা অনুপ্রেরণার আঁচলে হয়ত সেদিন মুখ লুকোবেন।