উপেক্ষার দাড়িভিট বনাম ঢক্কা নিনাদের ব্রিগেড

সরল বিশ্বাস

একইদিনে দুটি সভা। একটি ব্রিগেডে। অন্যটি উত্তর দিনাজপুরের দাঁড়িভিট লাগোয়া এলাকায়। একটি সভাকে নিয়ে টানা দু মাস ধরে চলছে লাগাতার প্রচার। জেলায় জেলায় রথি মহারথিদের সভা। টিভি আর কাগজের ঢালাও প্রচার তো ছিলই। এমন একটা আবহ তৈরি করা হচ্ছিল যেন, এমন সমাবেশ বাংলায় কোনওদিন হয়নি।
আর অন্যদিকে উত্তর দিনাজপুরের অখ্যাত গ্রামের সভাকে নিয়ে ন্যূনতম প্রচারটুকুও ছিল না। মূলস্রোত মিডিয়ায় লেখালেখিও হয়নি। টিভিতেও তেমন উচ্চবাচ্য ছিল না। সরাসরি দেখানো তো দূরের কথা, কলকাতার অধিকাংশ কাগজে খবরটাই নেই। ছবি তো দূরের কথা। দাড়িভিটে প্রশাসন সভার অনুমতিও দেয়নি। বাধ্য হয়ে লাগোয়া অন্য এক গ্রামে সভা করতে হয়।

darivit2
কোনও সন্দেহ নেই, ব্রিগেডের ভিড় তুলনায় অনেকটাই বেশি। সেটা হওয়াই স্বাভাবিক। ব্রিগেডের সভায় কয়েকশো কোটি টাকা খরচ যেমন হয়েছে, তেমনি সরকারি যাবতীয় ব্যবস্থাকে নগ্নভাবে কাজে লাগানো হয়েছে। পুলিশ, মিডিয়া, বাস থেকে যাবতীয় সরকারি মেশিনারিকে কোনও নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করেই কাজে লাগানো হয়েছে। সারা দেশের তাবড় তাবড় নেতৃত্বকে হাজির করে রাজকীয় আতিথেয়তায় রাখা হয়েছে।
দাড়িভিটে এসব কিছুই ছিল না। সেই সভা ছিল একেবারেই উপেক্ষিত। অথচ সেই সভার ভিড় সত্যিই অবাক করার মতো। দল ক্ষমতায় নেই। চারিদিকে জোর প্রচার, বামেরা আর কোনও দিনই ফিরবে না। বামেদের নাকি দূরবিন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না। মিডিয়ায় বামেদের কর্মসূচির উল্লেখটুকুও থাকে না। বিশাল লং মার্চের পরেও কুড়ি পাতার কাগজে এক কলাম জায়গা হয় না। বামেদের মিছিলে হাঁটলে কোনও প্রাপ্তিযোগ তো নেইই, উল্টে নানা হেনস্থার আশঙ্কা। এমনকী বাড়িতে, প্রেমিকার কাছেও হয়তো কত কটাক্ষ হজম করতে হবে। এই অবস্থায় একজন যুবক বামেদের মিছিল বা সভায় যাচ্ছে, এই বিষয়টার তাৎপর্য সবাই বুঝবেন না।

darivit
তবু ভরসা জাগায় দাড়িভিট। প্রচার নাই বা থাকুক, তবু বামেরা আছেন। বেশ ভালভাবেই আছেন। যতই উপেক্ষা থাকুক, ওঁরা হাল ছাড়েননি। কেউ কেউ হয়তো অতি উৎসাহে ব্রিগেডের চেয়েও বড় সমাবেশ বলে ফেলছেন। না, তেমনটা হয়তো নয়। হওয়ার কথাও নয়। কিন্তু এই সভা যে এতখানি উপেক্ষার পাত্র নয়, সেটা অন্তত পরিষ্কার। বাংলা কাগজ যখন এতখানি ব্রিগেডময় হয়ে রইল, ব্রিগেড সমাবেশের কুড়ি–‌পঁচিশ খানা ছবি ছাপানো হল, সেখানে একখানা দাড়িভিটের ছবি ছাপা যেত না?‌ একটি কাগজে দেখলাম, শুধু সীতারাম ইয়েচুরির মুখ ছেপেছে। এ অনেকটা বাঁ হাতে ফুল দেওয়ার মতো। ছুঁয়ে যাওয়া হল, কিন্তু আসল ছবিটা ছাপতে হল না। জনতার ছবি ছাপলে যদি তিনি রেগে যান!‌ তার চেয়েও বড় কথা, নিজেদের মূর্খতা যে প্রকাশ পেয়ে যেত। উপেক্ষার দাড়িভিটের কাছে জাঁকজমকের ব্রিগেডকে সত্যিই বড় ম্লান মনে হত।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.