সরল বিশ্বাস
আবার সেই চাটুকারিতার রাস্তায় সিলেবাস কমিটি। ইতিহাসের সিলেবাসে জোর করে আগেই ঢোকানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কথা। এবার তাঁর কবিতাও পড়ানো হবে সিলেবাসে। শুধু সিলেবাসে রেখেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না কর্তারা, সেখান থেকে যেন প্রশ্নও আসে, অলিখিত এমন নির্দেশিকাও নাকি থাকছে। অর্থাৎ, ছাত্রদের মুখস্থ করতেই হবে।
গোটা রাজ্যে যেন চাটুকারিতার প্রতিযোগিতা চলছে। কে কত নির্লজ্জ চাটুকারিতা করতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর সাফাই, আমার কবিতা যদি কেউ পড়তে চায়, আমি কী করতে পারি? এ আরেক নির্লজ্জ সাফাই। কবিতার বই দোকান থেকে কেউ কিনে পড়তেই পারেন। তাতে কবি হিসেবে তিনি খুশি হতেই পারেন। কিন্তু তাই বলে সিলেবাসে ঢুকিয়ে দেওয়া? সহজ কথা, তিনি এই চাটুকারিতা চান বলেই চাটুকাররা এমনটা করার সাহস পান। বা, যাঁরা এমন নির্লজ্জ চাটুকারিতা করবে, তাঁদেরই এইসব কমিটির মাথায় বসানো হয়।
নিজেকে মহান সাহিত্যিক ভেবে মুখ্যমন্ত্রী আহ্লাদিত হতেই পারেন। তাই বলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জোর করে সিলেবাসে ঢোকানোর কোনও যুক্তি আছে? মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের কৃতী ছাত্রদের সেইসব বই তুলে দেওয়া হয়। এক বস্তা। ওজন প্রায় তিরিশ কেজি। সেই বস্তা বয়ে নিয়ে যাওয়া যে কতটা যন্ত্রণার, যাঁরা নিয়ে গেছেন, তাঁরাই জানেন। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, জয়েন্ট এন্ট্রান্সে এক থেকে দশে থাকার এমন মূল্য চোকাতে হবে, বেচারারা যদি জানত!
আগডুম–বাগডুম যা খুশি লিখে যাচ্ছেন। দেজ পাবলিশার্স সেগুলো ঘটা করে ছাপছে। আর সরকারি টাকায় সেইসব বইয়ের হাজার হাজার কপি কিনে নেওয়া হচ্ছে। এ যে কতবড় কেলেঙ্কারি, কেউ জানবেও না। সরকার যদি লাখ লাখ টাকা (অঙ্কটা লাখ লাখ না হয়ে কোটি কোটিও হতে পারে) দিয়ে বস্তা বস্তা বই কিনে নেয়, তবে এমন বই ছাপতে কে না চাইবে! নিজের টাকায় কজন সেই বই কেনেন, কখনও খোঁজ নিয়ে দেখেছেন। সেই মহান কবিকে কিনা সাহিত্যের জন্য ডিলিট দেওয়া হল! তাও আবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে! যাঁরা নাম প্রস্তাব বা সমর্থন করেন, তাঁদের কেউ উপাচার্য হয়ে যান, কেউ স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হয়ে যান। স্তাবকতার এমন হাতে গরম পুরস্কার দেওয়া হলে, অনেকেই স্তাবক হতে চাইবেন।
‘মহান কবি’র কথা ভেবে সত্যিই বড় করুণা হয়। এগুলো যে কোনও কবিতাই নয়, এগুলো পড়ে লোকে হাসাহাসি করে, এই সহজ সত্যিটা তাঁকে বলার মতো কোনও শুভাকাঙ্খী নেই।