নিয়ম বদলটাই ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে

অজয় কুমার

পঞ্চায়েতের বোর্ডগঠনকে ঘিরে এত মারামারি কেন?‌ এ তো তৃণমূল বনাম বিজেপি নয়। তৃণমূল বনাম বামও নয়। অধিকাংশ জায়গায় তৃণমূল বনাম তৃণমূল। অর্থাৎ, একই দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই।
‌গোষ্ঠীলড়াইটাও নতুন নয়। দক্ষিণপন্থী দলে এমনটা হয়েই থাকে। পাঁচ বছর আগেও কি বোর্ডগঠন নিয়ে মারামারি হয়নি?‌ হয়েছিল, তবে সংখ্যায় অনেক কম। তখনও স্থানীয় স্তরে শাসকদলের নেতারা এতটা বেপরোয়া হয়ে ওঠেনি। তখনও সব ঝামেলা পুলিশ দিয়ে সামাল দিতে হত না।

jhamela
তাহলে এবার হচ্ছে কেন?‌ আমার মনে হয়, পঞ্চায়েতে আইন বদলটাই বড় কারণ। আগে এক বছর পরেই অনাস্থা আনা যেত। এখন সরকার নিয়ম পাল্টে আড়াই বছর করে দিয়েছে। অর্থাৎ, আড়াই বছরের আগে অনাস্থা আনা যাবে না। ধরা যাক, লাল্টু আর পল্টু দুই গোষ্ঠীর দুই নেতা। বোর্ড গঠনের সময় দেখা যাচ্ছে, লাল্টু কিছুটা এগিয়ে। লাল্টুর দিকে সমর্থন বেশি। এমনকী দাদাদের আশীর্বাদের হাতও লাল্টুর দিকেই। স্বভাবতই প্রধান হওয়ার দৌড়ে লাল্টু এগিয়ে।
পল্টুর কাছে একটাই সান্ত্বনা, এক বছর গেলেই লাল্টুর কয়েকজন তার দিকে চলে আসবে। তখন অনাস্থা এনে লাল্টুর বোর্ডকে উল্টে দেওয়া যাবে। অর্থাৎ, পল্টুর সামনেও এক বছর পর প্রধান হওয়ার একটা সুযোগ ছিল।
কিন্তু নতুন নিয়মে আড়াই বছর অপেক্ষা করা ছাড়া পল্টুর সামনে কোনও উপায় নেই। পল্টু বুঝেই গেছে, লাল্টু একবার প্রধান হয়ে গেলে আড়াই বছরের আগে তাকে সরানো যাবে না। আড়াই বছর পর লাল্টুর টাকা, ক্ষমতা, লোকবল–‌ সবই বেড়ে যাবে। তখন তার সঙ্গে পেরে ওঠা যাবে না। এমনকী পল্টুর দিকে যারা ছিল, তারাও ক্ষমতার ভাগ পেতে লাল্টুর আশপাশে ঘুরঘুর করবে। ফলে, আড়াই বছর পরেও লাল্টুকে সরানো কঠিন।

amdanga
তাহলে এখন উপায়টা কী?‌ পল্টু বোঝে, যেভাবেই হোক লাল্টুকে আটকাতে হবে, এবং তা এখনই। তাই বোম বাঁধা, ভয় দেখানো, অপহরণ–‌সবই চলছে। এমনকী নেতারা বাধা দিলেও বোর্ড গঠন হয়ে গেলে কারও কোনও আপত্তি থাকবে না। সে–‌ই হয়ে উঠবে মূলস্রোত। তখন ব্লক বা রাজ্য নেতারা তার কথাই শুনবেন।
দলের লোকেরা যেন অনাস্থা না আনতে পারে, সেই কারণেই বিধানসভায় নতুন আইন আনা হয়েছিল। সেই আইনটাই এখন ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে শাসকদলের কাছে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.