সরল বিশ্বাস
সোমনাথবাবুর মেয়ের মুখে ছোট্ট একটা লাইন। মনে গেঁথে গেল। ‘এন ও, নো। নো মানে না।’ হ্যাঁ, এই দৃঢ়তা সোমনাথবাবুরই ছিল।
কাগজে বা চ্যানেলে কী নিয়ে হইচই হবে, জানতাম। কেউ লিখবে, বিমানবাবুকে ঢুকতে দিলেন না ছেলে। কেউ লিখবে, মেয়ে জানিয়েছেন, বাবার দেহকে লাল পতাকায় ঢাকতে বলেছিল পার্টি। আমরা রাজি হইনি।
হ্যাঁ, মিডিয়ার কাছে এগুলোই খাদ্য। এগুলোই লোকে চর্চা করবে।
কিন্তু মেয়ে যে বললেন, বাবার কাছে বিভিন্ন দল থেকে কতরকম প্রস্তাব এসেছিল, কিন্তু তিনি সাড়া দেননি। এটা নিয়ে বিশেষ হইচই হবে না, জানাই ছিল। পরের দিন দেখলাম, যা ভেবেছিলাম, ঠিক তাই।
কেমন সাংসদ ছিলেন, কেমন স্পিকার ছিলেন, সেই চর্চা আছে, থাকবে। কিন্তু কী কী হাতছানি উপেক্ষা করেছেন, শেষদিন পর্যন্ত নিজের বিশ্বাসে অটল ছিলেন, এগুলো চর্চায় আসবে না। বারবার অনুরোধ এসেছে রাজ্যপাল হওয়ার। সবিনয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন। চাইলেই হতে পারতেন রাষ্ট্রদূত। ভেবেও দেখেননি। রাষ্ট্রপতি মনোনীত সাংসদ হিসেবে রাজ্যসভায় পাঠাতে চেয়েছিল সরকার। যথারীতি, এবারও না করে দিয়েছেন। কোন পদে ছিলেন, সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কোন কোন পদ হেলায় ফিরিয়ে দিয়েছেন, সেই গৌরবটাও কিন্তু কোনও অংশে কম নয়।
একে একে অনেকেই যখন উন্নয়নের দিকে ঢলে পড়ছেন, সেই কঠিন সময়েও মেরুদণ্ডকে আরও দৃঢ় রাখতে পেরেছেন। যখনই কোনও অন্যায় দেখেছেন, সাধ্যমতো প্রতিবাদ করেছেন। নিজের মতো করে রাস্তাতেও নেমেছেন। এই তো সেদিন। পঞ্চায়েত ভোটের সময়, চূড়ান্ত অসুস্থ শরীরেও স্পষ্ট অবস্থান নিতে ভুল করেননি।
সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে মূল্যায়ণ করতে গেলে এই দশ বছরের মূল্যায়ণটাও কিন্তু সমান গুরুত্বপূর্ণ। পার্টির প্রতি অভিমানের গল্প বহুল প্রচারিত। কিন্তু অনুরাগটা যে অনেক বেশি।