বিপ্লব মিশ্র
ছিয়ানব্বইয়ে একবার ট্রেনটা মিস হয়ে গিয়েছিল। দোরগোড়ায় এসে গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রস্তাব। যুক্তফ্রন্টের সমস্ত শরিক সর্বসম্মত হয়েছিলেন একটি নামে— জ্যোতি বসু। প্রথমে পলিটব্যুরো, পরে কেন্দ্রীয় কমিটি সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেয়।
বামেদের সামনে এমন সুযোগ আরও একবার এসেছিল। ২০০৭ সালে। সেবার সরাসরি রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাব এসেছিল। এবার সোমনাথ চ্যাটার্জির কাছে। এবারও ট্রেনটা মিস করেছিলেন প্রকাশ কারাত অ্যান্ড কোং।
তিনি তখনও স্পিকার। তখনই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। এপিজে আব্দুল কালামকে ফের রাষ্ট্রপতি করার ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নয় ইউপিএ। সোনিয়া গান্ধী–মনমোহন সিংরা বারবার চেয়েছিলেন, বামেরা যেন সরকারে আসে। কিন্তু বাম দলগুলি রাজি হয়নি। অনেক জোরাজুরির পর স্পিকার হওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছিল পলিটব্যুরো। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে ফের দাবি উঠে এল। সোনিয়া–মনমোহন চাইলেন, সোমনাথ চ্যাটার্জি হোন দেশের রাষ্ট্রপতি। দূত মারফত সেই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল সোমনাথবাবুর কাছে। কিন্তু এক্ষেত্রেও রাজি হননি প্রকাশ কারাত। বলেছিলেন, আমাদের দলের কেউ রাষ্ট্রপতি হবেন না।
ভেবে দেখুন, একজন কমিউনিস্ট নেতার কাছে সরাসরি আসছে রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাব। কিন্তু তা নিয়ে দেশব্যাপী তেমন হইচই হল না। কারণ, সোমনাথবাবু নিজে তা প্রকাশ্যে আনতে চাননি। পরে, ঘটনা পরম্পরায় প্রতিভা পাটিল দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। কিন্তু কারাত রাজি থাকলে সেদিন সোমনাথবাবুই হতে পারতেন দেশের রাষ্ট্রপতি।
অথচ, সোমনাথবাবুকে এ নিয়ে হইচই করতে দেখা যায়নি। তেমন আক্ষেপ করতেও শোনা যায়নি। এমনকী দল যখন তুচ্ছ একটা কারণে বহিষ্কারের মতো কড়া সিদ্ধান্ত নিল, তখনও এসব কথা তিনি সামনে আনেননি।
হ্যাঁ, এই সংযমের নাম সোমনাথ চ্যাটার্জি।