মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকতে চান ?

সংহিতা বারুই

মৃত্যুর পরেও আপনি বেঁচে থাকতে পারেন। না, এ কোনও ‘নির্বিকল্প সমাধি’ নয়।কোনও অমরত্বের আশীর্বাদ বা পুণ্য অর্জনও নয় । আপনি বেঁচে থাকতে পারেন অন্য কোনও শরীরে। না, কোনও ভূতের গল্পও নয় । আসলে ,আপনার মৃত্যুর পরেও আপনার দুটি চোখ এই পৃথিবীর আলো দেখতে পারে। আপনার দুটি কিডনি দুই মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে পারে । আপনার কানের হাড়ের পর্দা অন্য কারও শ্রবণ শক্তি ফিরিয়ে দিতে পারে। আপনার চামড়া পারে সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়া কাউকে সেই আগের চেহারা ফিরিয়ে দিতে।

জীবদ্দশায় হয়ত অনেকের উপকার করেছেন ।কিন্তু মৃত্যুর পরেও থাকছে এই সুযোগ । এর জন্য কী করতে হবে ? কঠিন কিছু না । মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকারে সই করে যান । আপনার মৃত্যুর পর আপনার নশ্বর দেহ যেন দ্রুত মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছানো যায় , নিদেনপক্ষে যেন খবর দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে আগাম বন্দোবস্ত করে রাখতে হবে । প্রায় সাতাশ বছর ধরে এ ব্যাপারে সচেতনতা প্রচার করে আসছে গণদর্পণ । ভবানীপুর অফিসেj ঠিকানাঃ ৪, ডি এল খান রোড, কলকাতা ২৫। ফোন নম্বর ২৪৫৪ ০৮১৯।

 

চার তলার ওপর অফিস । কথা হল গণদর্পণের সাধারণ সম্পাদক ব্রজ রায়ের
gana darpanসঙ্গে । জানা গেল অনেক অজানা কথা । যে কেউ এই অঙ্গীকার করতে পারেন ।
গণ দর্পণ থেকে ফর্ম পাওয়া যায় । সেটা পূরণ করে জমা দিতে হয় ।আত্মীয় বা
বন্ধুবান্ধব মিলে দুজন সাক্ষীর সই দরকার । দেওয়া হবে একটি ডোনার কার্ড।
এখনও পর্যন্ত প্রায় দশ লাখ মানুষ এই অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করেছেন । মৃত্যুর পর দেহ সংগৃহীত হয়েছে প্রায় ১৮০০। ব্রজ রায়ের মতে, ‘শুধু অঙ্গীকার করলেই তো হল না । মৃত্যুর পর অনেক সময় বাড়ির লোকেরা খবর দেন না । বা মেডিক্যাল কলেজের লোক এলেও বাড়ির লোকেরা মৃতদেহ ছাড়তে চান না। তাই , নিজে সই করলেই হবে না। বাড়ির লোকের মধ্যেও এই সচেতনতা তৈরি করা দরকার ।’
চোখ , কিডনি তো আছেই। সঙ্গে আরও বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অন্যের শরীরে প্রতি স্থাপন করা যায় । তবে মৃত্যুর ৬ ঘণ্টার মধ্যে কাছাকাছি মেডিক্যাল কলেজে দেহ পৌঁছনো দরকার । তারপর চিকিৎসকরা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে সেই দেহকে সংরক্ষণ করেন। যেগুলো প্রতিস্থাপন যোগ্য, সেগুলো নিয়ে বাকি দেহটা চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পাঠরত ছাত্রদের গবেষণার কাজে লাগে। যাঁদের সংক্রামক ব্যধি ছিল, তাদের শরীরে কী কী ওষুধ প্রয়োগ হয়েছে, তার কী ফল পাওয়া গেছে, তাও বোঝা যায় । ব্রজবাবুর কাছ থেকেই জানা গেল, জ্যোতি বসুর দেহ চিকিৎসা শাস্ত্রে পুরোপুরি কাজে লাগানো গেছে । দেহদান করে গেছেন অনিল বিশ্বাস, কবি অরুণ মিত্র, অভিনেতা দিলীপ রায় সহ আরও অনেকে । কারা সই করেছেন ? সেই তালিকাটা বেশ লম্বা । মৃণাল সেন , শোভা সেন, সূর্যকান্ত মিশ্র , চিত্রা সেন , রুপা গাঙ্গুলি , সহ অনেকেই রয়েছেন সেই তালিকায় । ঠিক কতখানি সাড়া পাওয়া যাচ্ছে ? কিছুটা যেন আক্ষেপ বেরিয়ে এল ব্রজ রায়ের গলায় , ‘সাড়া আছে । তবে আরও বেশি সাড়া পাওয়া উচিত ছিল । আসলে , এখনও অনেকের মনেই একটা কুসংস্কার থেকে গেছে। মৃত দেহ কাটাছেঁড়া করা হবে ,এটা অনেক বাড়িতেই এখনও মানতে পারেনা । তাছাড়া সরকারি তরফে তেমন ভাবে প্রচারও হয়নি । একটা উদাসীনতা থেকেই গেছে ।’

সরকারের ভূমিকা যাই হোক, আপনি তো জানলেন । তাহলে আর দেরি কেন? সাত পাঁচ বেশি ভেবে সময় নষ্ট করবেন না । গণদর্পনে এসে নাম লিখিয়ে ফেলুন। মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকার এই সুযোগ কেউ হাতছাড়া করে !

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.