একটা হামি, কতকিছু শিখিয়ে দিয়ে গেল!‌

বৃষ্টি চৌধুরি

শিবপ্রসাদ ও নন্দিতার ছবি মানেই একটা অন্যরকম প্রত্যাশা। বেলাশেষের পর থেকে এই প্রত্যাশা আরও বেড়েছে। তবে পোস্তটা তেমন ভাল লাগেনি। কিছুটা যেন অতিনাটকীয় মনে হয়েছিল। তাই হামি কেমন হবে, তা নিয়ে কিছুটা হলেও সংশয় ছিল। দেখার পর সেই সংশয় কেটে গেল। সত্যিই অসাধারণ একটা ছবি বানিয়েছেন।

বলা যেতে পারে, রামধনুর এক্সটেনশন পার্ট। সেখানে স্কুলে ভর্তির জন্য বাবা–‌মাকে কত হ্যাপা পোয়াতে হয়, সেই কাহিনী। আর এখানে ভর্তির পর কী কী ঝক্কির মধ্যে দিয়ে কাটে, সেই বৃত্তান্ত। আমরা চারপাশে যে ছবিগুলো দেখছি, তার সঙ্গে অনেকটাই মিল খুঁজে পাচ্ছি। তাই বোধ হয় রিলেট করতে কিছুটা সুবিধা হয়।

hami2

প্রথমেই বলতে হয় অপরাজিতা আঢ্যর কথা। নায়িকাসুলভ সেই গ্ল্যামার হয়ত নেই, বয়সটাও একটু বেশি। কিন্তু কোনও চরিত্রকে তিনি যে কতটা প্রাণবন্ত করে তুলতে পারেন, প্রাক্তন–‌এ সেই প্রমাণ পেয়েছি। এখানে আরও একবার পাওয়া গেল। পরিচালকদের ধন্যবাদ অপরাজিতার ওপর এই আস্থা রাখার জন্য।

ভুটু ও চিনি। ভারি মিস্টি নাম। ভুটু যদি গোলগাল, নাদুস নুদুস না হয়ে তথাকথিত স্লিম ও স্মার্ট হত, একেবারেই ভাল লাগত না। এই চরিত্র দুটোকে বড় চেনা লাগে। বড় আদর করতে ইচ্চে করে। গাল টিপে দিতে ইচ্ছে করে। দুটো ছোট্ট চরিত্রেই পাকামি আছে, কিন্তু সেটা বেশ উপভোগ্য। এত তারকার ভিড়ে, এরাই আসল তারকা। এদের পেছনে কত খাটতে হয়েছে, বেশ বোঝা যায়।

লাল্টু আর মালিনী। রামধনুর সেই পুরনো জুটি। শিবপ্রসাদ–‌গার্গি। দুটোই বেশ বিশ্বাসযোগ্য। মধ্যবিত্ত বাবা–‌মায়ের আশা, আকাঙ্খা, অজানা আশঙ্কা— সব চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।

চাচাজান। এই মানুষটিকে বাংলা ছবির আঙিনায় আনার জন্য পরিচালক জুটিকে অভিনন্দন জানাতেই হবে। সব স্কুলেই এমন এক–‌দুজন চরিত্র থাকে। যাঁদের দিকে আমরা চেয়েও দেখি না। অনেক দরদ দিয়ে এই চরিত্রটি তৈরি করেছেন। অভিনয়ও প্রাণে গেঁথে যাওয়ার মতোই।

hami1

এবং খরাজ। একাই যে কোনও ছবিকে টেনে নিয়ে যেতে পারেন। এখানে তিনি দাপুটে কাউন্সিলর। কিন্তু ঘরে গিন্নি, বাইরে ‘‌দিদি’‌, দুই নারীর ভয়ে গুটিয়ে থাকেন। দেশে মা, রাজ্যে ম— এই জাতীয় সংলাপ হাসির ছলে দিব্যি বলে যান। কমিক রিলিফ তো আছেই। আরও কত বার্তা যে তাঁর মুখ দিয়ে পরিচালক দিলেন!‌ সত্যিই সাহস আছে।

লেখাটাকে অহেতুক দীর্ঘায়িত না করেই বলছি, ছবিটা সত্যিই দেখার মতো। যাঁরা বাংলা ছবি ভালবাসেন, অবশ্যই দেখুন। যাঁরা শিক্ষক, তাঁরা দেখুন। যাঁরা অভিভাবক, তাঁরা তো অবশ্যই দেখুন। একটা ছবি যেন চোখে আঙুল দিয়ে অনেককিছু দেখিয়ে দিয়ে গেল।

(‌বেঙ্গল টাইমসে পাঠকদের জন্যও রয়েছে ফিল্ম রিভিউয়ের সুযোগ। আপনিও যদি ছবিটা দেখে থাকেন, যদি কিছু লিখতে ইচ্ছে করে, পাঠিয়ে দিন বেঙ্গল টাইমসের ঠিকানায়। কোনও বিশেষ চরিত্র বা বিশেষ দিক নিয়েও লিখতে পারেন।)‌

bengaltimes.in@gmail.com

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.